২৪ টি দাবির ম্যনিফেস্টো নিয়ে ‘চলচ্চিত্র সংস্কার রোডম্যাপ ২০২৪’
“ব্যক্তির ঊর্ধ্বে গিয়ে সমষ্টির স্বার্থই হবে মূল কথা” এই শ্লোগানকে ধারণ করে চলচ্চিত্র শিল্পকে আমূল সংস্কার করার লক্ষ্যে ২৪ টি খসড়া ম্যনিফেস্টো নিয়ে আলাপ করতে আজ (১৩ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার) দেশের প্রায় শতাধিক নতুন প্রজন্মের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা একত্রিত হন। তাদের আলোচনায় বিদ্যমান বাকস্বাধীনতা পরিপন্থী সকল নিপীড়নমূলক আইন বাতিল, স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত চলচ্চিত্র কমিশন, ফিল্ম কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা, চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের আমলাতান্ত্রিক কাঠামো সংস্কার করা, ফেডারেল ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করাসহ আরও অনেক বিষয় উঠে আসে। এছাড়াও চলচ্চিত্র শিক্ষাকে আধুনিক এবং যুগপোযুগি করে সংস্কার করাসহ চলচ্চিত্র শিক্ষার বিস্তার নিয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় হয়।
এই আলোচনা অনুষ্ঠানে ঢাকার বাইরের অঞ্চলগুলো থেকে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অনলাইনের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। এই প্ল্যাটফর্মের এটি ২য় বৈঠক যা রাজধানীর ‘গ্রাউন্ড জিরো’ নামক স্থানে অনুষ্ঠিত হয়।
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যে নতুন বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে তারই ধারাবাহিকতায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের চেতনাকে সামনে রেখে তরুণ চলচ্চিত্রকর্মীদের উদ্যোগে ‘নো সার্টিফিকেশন বোর্ড, নো সিন্ডিকেট’ নামের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়। এই গ্রুপে সারা দেশ থেকে চলচ্চিত্রকর্মীরা যুক্ত হয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করতে থাকেন। মূলত ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর বিকেন্দ্রীকৃত পদ্ধতিতে পরিচালিত আন্দোলনের মডেল অনুসরণ করে এই প্ল্যাটফর্মটি কাজ করছে। কোনো কমিটি বা ব্যক্তি নেতৃত্বের বদলে সমষ্টিগতভাবে সকলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মত প্রকাশ করছেন এবং সকলের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হচ্ছে। সেই জায়গা থেকে সকলের সম্মিলিত মতামতের মাধ্যমে ‘চলচ্চিত্র সংস্কার রোড ম্যাপ ২০২৪’ প্রকাশিত হবার প্রক্রিয়ায় অংশ হিসেবে আজকের এই বৈঠক।
‘চলচ্চিত্র সংস্কার রোড ম্যাপ ২০২৪’ উপস্থিত সকলের আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে নিম্নোক্ত দাবীগুলো খসড়া ম্যানিফেস্টো হিসেবে গৃহিত হয় যা পরবর্তিতে আলোচনা এবং মতামতের মাধ্যমে সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন হতে পারে।
স্বাধীনভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রয়োজনে তথ্য, সংস্কৃতি, পর্যটন, বাণিজ্য, শিক্ষা, অর্থ, পররাষ্ট্র ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় চূড়ান্ত ম্যনিফেস্টোগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরবর্তিতে চলচ্চিত্রকর্মীদের সর্বসম্মতিক্রমে সরকারের নিকট প্রস্তাব/দাবি জানানো হবে।
১। বিদ্যমান বাকস্বাধীনতা পরিপন্থী সকল নিপীড়নমূলক আইন বাতিল করতে হবে।
২। স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত চলচ্চিত্র কমিশন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৩। স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত ফিল্ম কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৪। ফিল্ম ফিন্যান্স কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করতে হবে
৫। কবিরপুর ফিল্ম সিটির নির্মাণকাজ দ্রুত সমাপ্ত করতে হবে এবং এফডিসি সংস্কার ও আধুনিকায়ন করতে হবে
৬। চলচ্চিত্র শিক্ষার প্রসারে বিসিটিআইসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্রের বিভাগগুলোকে বিশ্বমানের চলচ্চিত্র শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে
৭। জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদান নীতিমালা সংস্কার করতে হবে
৮। ডিজিটাল চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও পরিবেশন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে
৯। সাংষ্কৃতিক চেতনা ও সৃজনশীলতা বিকাশের জন্য “জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা” করতে হবে
১০। চলচ্চিত্র সংরক্ষণ (আর্কাইভাল) নীতিমালা সংস্কার করতে হবে
১১। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, চলচ্চিত্র শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময়ে বিভিন্ন দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর করতে হবে।
১২। চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং প্রদর্শণে সমাজের সকল স্তরের মানুষের অংশগ্রহণ করার সুযোগ সৃষ্টির কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
১৩। টেকসই চলচ্চিত্র উন্নয়ন পরিকল্পনা ও চলচ্চিত্র নির্মাণে পরিবেশ বান্ধব পরিবেশ বজায় রাখার নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
১৪। বিদেশী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ করার জন্য বৈশ্বিক নীতিমালার আদলে নতুন নীতিমালা তৈরি করতে হব এবং বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে চলচ্চিত্র ও পর্যটনকে একীভূত করে প্রকল্প প্রণয়ন করতে হবে।
১৫। তরুণ নির্মাতাদের চলচ্চিত্র নির্মাণে সুযোগ সৃষ্টির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৬। চলচ্চিত্র গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধিসহ গবেষণা কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে
১৭। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) এর মাধ্যমে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে
১৮। চলচ্চিত্রের সাথে দর্শকদের সম্পৃক্ত করার জন্য মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প প্রণয়ন করতে হবে
১৯। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকল পেশাজীবী সংগঠনের অধিকার নিশ্চিত করতে ফিল্ম কমিশনকে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করতে হবে।
২০। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন ২০২৩ সংস্কার করতে হবে এবং গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করতে হবে।
২১। চলচ্চিত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য ফেডারেল ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
২২। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের আমলাতান্ত্রিক কাঠামো সংস্কার করতে হবে ।
২৩। ধর্মীয় অনুভূতি, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও ভাবমূর্তি এবং বাকস্বাধীনতা রক্ষার বিষয়গুলো বিবেচনা করে বিভিন্ন ধর্মের স্কলার, আইনজ্ঞ ও বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে নিয়োজিত ব্যাক্তিত্বদের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন ও পরিস্কারভাবে বিষয়গুলো সংজ্ঞায়িত করতে হবে।
২৪। কোন চলচ্চিত্র সমাজে বিতর্ক সৃষ্টি করার ফলে যদি সংশ্লিষ্ট নির্মাতা এবং কলা-কুশলির নিরাপত্তাহীনতার আশংকা তৈরি হয় তাহলে তাদের যথাযথ নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে।