সৈয়দপুরে সম্পত্তি কুক্ষিগত করতে গৃহবধুকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ
নীলফামারীর সৈয়দপুরে স্বামীহারা ও ২ সন্তানের জননী গৃহবধু শাহীন আলমের ওপর অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিধবা অসহায় নারীকে পরিবারের সকলে মিলে বেধড়ক মারধর করে পড়নের কাপড় ছিরে ফেলাসহ মাথার চুল ছিড়ে সারা শরীরে থেতলানো আঘাত করেছে। এমনকি বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এতে ওই গৃহবধু গুরুত্বর আহত হয়ে চরম দুরাবস্থায় রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টায় শহরের নয়াবাজার বাণিচাঁদ সড়কে হোমিও কলেজ সংলগ্ন এলাকায়।
গুরুত্বর আহতাবস্থায় নাবালক দুই ছেলেকে নিয়ে থানায় উপস্থিত হয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী গৃহবধু। এসময় থানা চত্বরে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের তিনি জানান, দীর্ঘ ১৮ বছর আগে শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী পারভেজ আলমের সাথে আমার বিয়ে হয়। তিনিই ছিলেন তাঁর পরিবারের মূল উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার তত্বাবধানে পরিবার পরিচালিত হত এবং তিনিই ছিলেন সকল ব্যবসার কর্নধার। মুলতঃ ব্যবসা ও পারিবারিক সম্পত্তির সবই আমার স্বামীর নিজস্ব। কিন্তু গত ২০১০ সালে আমার স্বামী আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর মুত্যুর পরেই পরিবারের লোকজন তথা শশুড় খোরশেদ আলম, ভাসুর জমসেদ আলম, তার ছেলে নুর আলম, মেয়ে এ্যাড. ফাতেমা আক্তার বুবলী (স্বামী পরিত্যক্ত) ও কায়কেসা জামসেদ এবং তার স্বামী শাহনেওয়াজ সাজু আর ভাসুরের বড় মেয়ের স্বামী বদরুদ্দোজা আমার স্বামীর সম্পত্তি কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
এর প্রেক্ষিতে তারা আমাকে ছোট ছোট ২ বাচ্চাকে সহ বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার অপ”েষ্টা চালায়। এতে প্রতিবাদ করলে তারা আমার উপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করে। এতে বিষয়টি জানাজানি হলে তারা গণমাধ্যমকর্মীসহ গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ভবিষ্যতে আর এমন ঘটনা ঘটবেনা বলে কথা দেয় এবং যার যার অবস্থানে স্থিতিশীল থাকার ঘোষণা দেয়।
কিন্তু তারপর তারা আমার স্বামীর নিজস্ব কোম্পানীগুলো সহ অন্যান্য স্থানের সহায় সম্পত্তি দখল করে তা ভোগ করতে থাকে। এক্ষেত্রে ভাসুরের মেয়ে জামাতা শাহনেওয়াজ খান সাজু স্থানীয় আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক দিলনেওয়াজ খানের ভাই হওয়ার সুবাদে সেই দলীয় প্রভাবে সবকিছু কুক্ষিগত করে নেয়। দীর্ঘদিন থেকে তারা ওইসব কোম্পানীর উৎপাদিত আয় নিজেরা লুটপাট করে খাচ্ছে। এমনকি সর্বশেষ তারা কোম্পানীগুলো আগুনে পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটিয়ে নষ্ট করে দিয়েছে। এখন আবার আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে পুরো বাড়ি দখল ও অন্যান্য সম্পত্তি থেকে আমার ও আমার সন্তানদের অধিকার বঞ্চিত করার অপচ্ষ্টোয় মেতেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় তারা সোমবার সকালে আমার গাড়ি রাখার গ্যারেজ দখল করে গাড়িটি বাড়ির বাহিরে রাস্তায় ফেলে রাখে। সকালে উঠে এটা দেখে প্রতিবাদ করলে উল্লেখিত সকলে মিলে আমার উপর চড়াও হয়ে বেধড়ক মারধর করে। আমার ছেলেরা এগিয়ে আসলে তাদেরকেও এলাপাথারি মারপিট করেছে। তাদের আক্রমনে আমার পড়নের কাপড় ছিড়ে অশ্লীলতা ঘটিয়েছে এবং আমার গলা চিপে ধরে শ্বাস রোধ করে হত্যার চেষ্টা চালায়। এসময় শহনেওয়াজ সাজু আমার চুলের মুঠি ধরে নির্যাতন করার সময় একমুঠো চুল ছিড়ে নেয়। এতে বাধা দেয়ার চেস্টা করলে তারা আমাকে মাঠিতে ফেলে লাথি মারতে থাকে। পরে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে আমাদের উদ্ধার করে। কিন্তু তারপরও আমরা বাড়িতে ঢুকতে পারিনি। কারণ তারা এক্ষেত্রে গায়ের জোরে বাধা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে আমরা আহতাবস্থায় থানায় হাজির হয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযোগের বিষয়ে ফাতেমা আক্তার বুবলী বলেন, আমার অংশের জমিতে আমি দেয়াল নির্মাণ করছি। এতে তিনি বাধা দেওয়ার কে? জোর করে বাধা দেয়ায় উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। আমিতো কারো কাছে অভিযোগ নিয়ে যাইনি। তিনি মূলতঃ আমাদেরকে সমাজে হেয় করতে প্রায়ই এরকম ঘটনার প্রেক্ষিতে তাৎক্ষনিক থানা পুলিশ করে। যা গ্রহণযোগ্য নয়।
শাহনেওয়াজ খান সাজু বলেন, পারিবারিক বিষয় পারিবারিকভাবেই সমাধান করতে হবে। কিন্তু এই মহিলা যে কোন বিষয় নিয়েই অন্যের দারস্থ হয় এবং মিথ্যে অভিযোগ তুলে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেন। আমি তার গায়ে হাত তুলিনি। আর মাথার চুল ছেড়ার অভিযোগ তো সম্পুর্ণ সাজানো।
এব্যাপারে সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আখতার হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। এখন তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। (ছবি আছে)
শাহজাহান আলী মনন সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি