কোটা আন্দোলনে হামলা, সংঘর্ষ, গুলিতে ৫ জন নিহত
কোটা বিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ, হামলায় তিন জেলায় চার জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। ঢাকা কলেজের সামনে শিক্ষার্র্থীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রংপুরে সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী মারা যান।
চট্টগ্রামে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন- মো. ফারুক (৩২) ও মো. ওয়াসিম (২২)। ফারুক ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী এবং ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে জানা গেছে। এ ছাড়া অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি। তাঁর বয়স ২৪।
তাঁর পিঠে গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। অন্যদিকে ফারুকের বুকে গুলি লাগে। আহত অন্তত ২০ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, হাসপাতাল থেকে আমরা দুজনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছি। কোথায়, কীভাবে তারা মারা গেছেন, তা আমরা জানি না। তবে পুলিশ কোথাও বলপ্রয়োগ করেনি।
ওদিকে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামে তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির ব্যাটালিয়ন-৮ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহেদ মিনহাজ সিদ্দিকী।
এদিকে রাজধানিতেকোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের সময় ঢাকা কলেজ এলাকায় আহত হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় ঢাকা কলেজ এলাকায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। অন্যদিকে সায়েন্স ল্যাব এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে আছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা কলেজের কাছে পেট্রল পাম্প এলাকায় ওই যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন। তার শরীরে রডের আঘাত আছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। পদচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান। সেখানে কর্তৃব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া।
রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষার্থী ও কোটা আন্দোলনকারীদের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ নিহত হয়েছেন। আজ বেলা আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের ছাত্র। তার বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জের খালাসপীরের জাফরপাড়ায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ দুপুরে বেরোবির কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের লালবাগ এলাকা থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যান। এরপর ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ে। বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদের শরীরে অনেক গুলি লাগে। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তার মৃত্যু হয়।