পকেট মারকে ধরতে গিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের লোক ও এনজিওর কিস্তি তোলা লোক সাজতে হলো পুলিশকে 

বিয়ের গেটের পকেট মার বোয়ালমারী থানা পুলিশের জালে
ফরিদপুর প্রতিনিধি :
ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকায় বরযাত্রী বেশে কৌশলে বিয়ে বাড়িতে ঢুকে লোকজনের পকেট থেকে মোবাইল ফোন হাতিয়ে নিতো এক প্রতারক চক্রের দল। সম্প্রতি কয়েকটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে অনেক ব্যক্তির মোবাইল ফোন হারানোর অভিযোগের পর মাঠে নামে পুলিশ। সিনেমার ন্যায় অভিনয় করে প্রতারক চক্রের মূল হোতা কালন শেখ সজীবকে গ্রেপ্তার করেছে বোয়ালমারী থানার পুলিশ কর্মকর্তা তন্ময় চক্রবর্তী। থানার এই উপপরিদর্শক (এসআই) কখনো বিদ্যুৎ বিভাগের লোক, কখনো এনজিও কর্মী সেজে সজীবের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) কালন শেখ সজীবকে গ্রেপ্তারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অভিযান কার্যক্রমের এক বিস্ময়কর বর্ণনা তুলে ধরেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। গ্রেপ্তারকৃত যুবক কালন শেখ ওরফে সজীব (৩৩) গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ভাকুরী গ্রামের চুন্নু শেখের ছেলে।
থানা সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের ১ তারিখে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের সাতৈর গ্রামের হাবিবুর রহমানের শ্যালকের বরযাত্রীতে আসা বেশ কয়েকজনের মোবাইল হাতিয়ে নেওয়ার পরে লিখিত অভিযোগ করা হয় স্থানীয় থানায়। এরপর জড়িতদের গ্রেপ্তারের অভিযানে মাঠে নামে পুলিশ। এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন থানার উপপরিদর্শক তন্ময় চক্রবর্তী। তিনি সিনেমাটিক ভাবে অভিনয় করে প্রতারক চক্রের মূল হোতা কালন শেখ সজীবকে গ্রেপ্তার করে পাশের গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর এলাকা থেকে। তিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা হলেও কালনকে গ্রেপ্তার করতে কখনো বিদ্যুৎ বিভাগের লোক, কখনো এনজিও‘র  কিস্তিওয়ালা সেজে তার অবস্থান শনাক্ত পর তাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পর পুলিশের উপপরিদর্শক নিজের ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘তিন দিন এই বৃষ্টির মধ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে, তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতা ছাড়াই এই মোবাইল চোরকে ধরতে সক্ষম হই। আমাদের অভিযান অনেকটা থ্রিলিং এবং সিনেমাটিক ছিল। সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে, ভ্যানে করে, অটোভ্যানে চড়ে, কখনো বিদ্যুৎ অফিসের লোক সেজে, কখনো কিস্তিওয়ালা সেজে আমরা চোরের অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা করেছি। রাতের অভিযানে মেহগণি বাগানে কাদার মধ্যে আমি স্লিপ কেটে আছার পর্যন্ত খেয়েছি। একদম তীরে গিয়ে আসামিকে না পাওয়ার ভয়, তবুও সময় ফেরে, পরিশ্রম বৃথা যায় না।
আমাদের চেষ্টা হয়তো পরম করুনাময় দেখছিলেন, তাই হয়তো তিনি সহায় ছিলেন। গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর এলাকায় টানা এক ঘণ্টা অভিযান পরিচালনা করে আমরা সজীবকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। এ কাজে তেল খরচে সহায়তার জন্য তিনি মাইক্রোবাসের ড্রাইভার হুমায়ুন, এবং দুইদিন সাথে থেকে সহায়তা করার জন্য নাজমুল হাসান তুহিনকেও ধন্যবাদ জানান।
এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বেশ কয়েকটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটে। বিয়ে বাড়িতে যখন বর প্রবেশ করে, তখন কৌশলে তারা বরযাত্রীর বেশ ধারণ করে কনের বাড়িতে প্রবেশ করে মোবাইল হাতিয়ে নেওয়ার মৌখিক অভিযোগ পাই। সর্বশেষ গত শুক্রবার হাবিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তির শ্যালকের বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে মোবাইল চুরির ঘটনাটি অভিযোগ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ওই মামলার তদন্তে একজনকে গ্রেপ্তার করে তার কাছ থেকে দুটি মোবাইলও উদ্ধার করা হয়। এই সূত্র ধরেই চোরচক্রের অন্যতম হোতা গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ভাকুরী গ্রামের চুন্নু শেখের ছেলে কালন শেখ সজীবকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে হাবিবুর রহমানের দায়েরকৃত মামলায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। চক্রটির সঙ্গে অন্য জড়িতদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * এনজিওর কিস্তি তোলা লোক সাজতে হলো পুলিশকে * পকেট মারকে ধরতে গিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের লোক
সর্বশেষ সংবাদ