হারিছুরের একছত্র আধিপত্যর অবসান

বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন ও গৌরনদী  পৌরসভা মেয়র পদে উপনির্বাচনে বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর সমর্থিত তিন প্রার্থী নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে। গৌরনদী উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে হাসানাত আবদুল্লার বিশস্থ সহযোগী ও তার প্রতিনিধি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মোঃ হারিছুর রহমানের গত ১৫ বছরের একছত্র আধিপত্যর অবসান হয়েছে বলে দাবি করেন আওয়ামীলীগের একাংশ। একই সাথে তিনি উজিরপুর উপজেলার কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করতে । গত ২৭ জুন হারিছুরকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করে আওয়ামীলীগের উপজেলা ও পৌর কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামীলীগে ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মিরা।
স্থানীয় লোকজন, দলীয় নেতাকর্মিসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর আগৈলঝাড়ার সেরালস্থ বাসভবনে আনুষ্ঠিানিকভাবে সভা করে তার সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে  গৌরনদীতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও পৌর মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান ও আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইস সেরনিয়াবাতকে চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষনা করেন। সাংসদ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ আগৈলঝাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আব্দুর  রইস সেরনিয়াবাত ও গৌরনদীতে চেয়ারম্যান পদে মোঃ হারিছুর রহমানকে তার সমর্থিত প্রার্থী ঘোষনা করায় গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় আওয়ামীলীগ দুই ভাগে বিভক্তি হয়ে পড়ে। হাসানাত সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিছুর রহমানের বিরুদ্ধে গৌরনদীতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধীতা করেন গৌরনদী পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ মনির হোসেন মিয়া ও আগৈলঝাড়ায় হাসানাত সমর্থিত প্রার্থী রইস সেরনিয়াবাতের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্ধীতা করেন আগৈলঝাড়া আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক যতিন্দ্র নাথ মিস্ত্রী।
গত ৯ জুন নির্বাচনে হাসানাত সমর্থিত প্রার্থী মোঃ হারিছুর রহমান ও আব্দুর রইস সেরনিয়াবাত পরাজিত হন। হাসানাত বিরোধী শিবিরের প্রার্থী সভাপতি মোঃ মনির হোসেন মিয়া ও যতিন্দ্র নাথ মিস্ত্রী চেয়ারম্যন নির্বাচিত হন।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে গৌরনদী পৌরসভা মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান গত ২৭ এপ্রিল মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করলে পদটি শুন্য ঘোষনা করে মেয়র পদে উপনির্বাচনে গত ২১ মে তফসিল ঘোষনা করেন নির্বাচন কমিশন । উপনির্বাচনে মেয়র প্রতিদ্বন্ধীতা করেন গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এইচ, এম, জয়নাল আবেদীন  (মোবাইল ফোন) , উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও সরকারি গৌরনদী কলেজের ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস মোঃ আলাউদ্দিন ভূইয়া (নারিকেল গাছ)সহ চার প্রার্থী। বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ  গত ২০ জুন আগৈলঝাড়ার সেরালস্থ নিজ বাসভবনে আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের বর্ধিত সভা ডেকে প্রকাশ্যে গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও মেয়র পদে মোবাইল ফোন প্রতীকের প্রার্থী এইচ,এম জয়নাল আবেদীনকে দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা করে তার পক্ষে ভোট চান।  সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের প্রতি আল্লাহরস্তে জয়নালকে ভোট দেওয়ার আহবান জানান এবং নেতাকির্মদের ওয়াদা করান। হাসানাতের ওই সভার পরে আলাউদ্দিন ভূইয়াসহ তিন মেয়র প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন ও নির্বাচনে প্রভাব বিস্তরের  অভিযোগ এনে হাসানাতের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছিলেন। গত ২৬ জুন গৌরনদী পৌর সভা মেয়র পেদ উপনির্বাচনে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সমর্থিত প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে আলাউদ্দিন ভূইয়া মেয়র নির্বাচিত হন। দুটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গৌরনদীতে আওয়ামীলীগ দুইভাগে বিভক্তি হযে পড়ে।
গৌরনদী পৌর সভার কাউন্সিলর ও পৌর যুবলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ আল আমিন হাওলাদার বলেন, ২০০৮ সালে হারিছুর রহমান গৌরনদীতে এসে রাজনীতির শুরু করে যুবলীগের সদস্য হন। পর্যায়ক্রমে সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর মনজয় করে তার আস্থাভাজন হয়ে তিনবার (২০১০, ২০১৫, ২০২০এর নির্বাচনে) মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত  হন।  সে (হারিছুর) আবুল হাসানাতের আস্থাভাজন হয়ে দলের মধ্যে নিজের ব্যক্তিগত বলয় সৃষ্টি করে গোটা রাজনীতির নিয়ন্ত্রন নিয়ে আওয়ামীলীগের দূর্দীনের ত্যাগি নেতা কর্মিদের রাজনীতি থেকে বিদায় করে দলছুট জামাত বিএনিপর সুবিধাবাদিদের নিয়ে নিজস্ব বাহীনি গড়ে তোলেন। উন্নয়ন প্রকল্প, অফিস-আদালত, থানাসহ সব কিছুই তার নিয়ন্ত্রনে চলে। হারিস এতই ক্ষমতাবান হয়ে উঠেন যে, তার কথাই ছিল গৌরনদীতে শেষ কথা।  গৌরনদী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বরিশাল জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী বলেন, হারিছুর রহমান গত ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে একছত্র আধিপত্য বিস্তার করে নিজস্ব হারিচ বাহিনী গড়ে তুলেছেন। সেই সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে সাহস পান নাই।  হারিচ গৌরনদীর  দানব হিসেবে পরিচিত লাভ করে। গত ১৫ বছরের প্রচেষ্টায় গৌরনদী উপজেলা ও পৌরসভার সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে দানব প্রতিহত করা হয়েছে। নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ মনির হোসেন মিয়া বলেন, সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর দোহাই দিয়ে হারিছুর রহমান থানা  ও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রন নিয়ে গৌরনদীতে রামরাজত্ব কায়েম করেছিল সুস্ঠ দুটি নির্বাচনে তার দুঃশাসন থেকে গৌরনদীর নিরিহ মানুষ মুক্তি পেয়েছে। মাহিলাড়া ইউপি সদস্য ও উপজেলা অওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সৈকত গুহ বলেন, গত ১৫ বছরে হারিছুর রহমানের হাতে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মি শারীরিকভাবে নির্যাতিনের শিকার হয়েছেন কিন্তু তার বিরুদ্ধে কেউ মামলা করতে সাহস পান নাই। তারা বলেন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে হাসনাতের সমর্থিত পরাজিত হওয়ার পরে হারিছুর রহমানের একছত্র আধিপত্যর অবসান হয়েছে। গত ২৮ জুন বিজয়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়র সমর্থিত নেতাকর্মিরা হারিছুর রহমানের দখলে থাকা গৌরনদী উপজেলা অওয়ামীলীগের কার্যালয়ের তালা ভেঙ্গে দখল নেন। সেখানে আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মিরা সভা করে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান,  নবনির্বাচিত মেয়রসহ আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতাকর্মিরা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হারিছুরকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করে জেলা নেতৃবৃন্দের কাছে গৌরনদী উপজেলা ও পৌর কমিটি বিলুপ্তি করার দাবি জানান।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, হাসানাত সমর্থিত পরাজিত মেয়র প্রার্থী এইচ, এ, জয়নাল আবেদীন বলেন, দলের মধ্যে থাকা বিপদগামি কতিপয় নেতা কর্মি জামাত বিএনপির সন্ত্রাসীদের নিয়ে ষরযন্ত্র করে আমার এজেন্টদের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখল করে আমাকে পরাজিত করেছে।  নির্বাচনের পরে বিএনপি জামাত সন্ত্রাসীদের নিয়ে এলাকায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে। হাসানাত সমর্থিত পরাজিত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রাথী ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ হারিছুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,  আমার রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর হাতকে শক্তিশালী করতে নেতার দেয়া নির্দেশণা ও পরামর্শ অনুযায়ি আমি কাজ করেছি। তাকে অনেকের স্বার্থে আঘাত লেগেছে। ওইসব সুবিধাবাদী জামাত বিএনপির এজেন্টারই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার চালাচ্ছে। জামাত বিএনপি ও প্রশাসনের সমর্থন নিয়ে আওয়ামীলীগের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একটি গোষ্ঠি ষরযন্ত্র করে আমাকে পরাজিত করে ক্ষেন্ত হয়নি তারা গৌরনদীতে আওয়ামীলীগকে নিশ্চিহ্ন করে জামাত বিএনপির রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় নেমেছে। এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও বরিশাল -১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য  এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস বলেন, নির্বাচনে দলের একাধিক নেতা প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্ধীতা করেছে। সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ন নির্বাচনে কেউ বিজয় লাভ করেছে কেউ পরাজিত হয়েছে সবাই আওয়ামীলীগের নেতাকমি। জয় পরাজয়ে সাময়িক কিছুটা অভিমান ক্ষোভ থাকতে পারে তাতে আওয়ামীলীগ  বিভিক্তি হওয়ার কিছু নাই।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * আগৈলঝাড়া উপজেলা * চেয়ারম্যান নির্বাচন * বরিশালের গৌরনদী * মোঃ মাহফুজুর রহমান মাসুম
সর্বশেষ সংবাদ