এমপিও নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দুটি পদে বহাল
![](https://bangla.fm/files/uploads/2024/07/Untitled-design-2024-07-01T133418.487.png)
জয়পুরহাট প্রতিনিধি :
১ জুলাই জয়পুরহাটের কালাই আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের মাওলানা মোঃ কাজী মুনছুর ওরফে ধান্দা রাজা বাল্য বিয়ে, দেনমোহর বাড়ানো, মেয়ের পরিবারকে তলব না করে নাটকীয় খোলা তালাক, এমপিও নীতিমালা তোয়াক্কা না করে দুটি পদে চাকরিসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত উপজেলার (৩নং) আহাম্মেদাবাদ ইউনিয়নে অবস্থিত চান্দাইর দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার নিম্নমান সহকারী-কাম কম্পিউটার অপারেটর/কেরানী এবং ৩নং আহম্মেদবাদ ইউ,পি মুসলিম বিবাহ তালাক ও নিকাহ রেজিষ্টার কাজীর বিরুদ্ধে এমন গুরুতর একটি অভিযোগ উঠেছে৷৷
এমন অভিযোগ নিয়ে গত ২৬ শে জুন আইন ও বিচার শাখা ৭ ও অনলিপি জেলা রেজিস্টার জয়পুরহাট বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন জৈনক আঃ রাজ্জাক৷ এমপিওভুক্ত মাদ্রাসার একজন শিক্ষক কর্মচারী হিসেবে বেতন ভাতার অংশ উত্তোলন করেন মুসলিম বিবাহের নিকাহ রেজিস্টার কাজী মুনছুর রহমান। সেই সঙ্গে বিয়ে ও তালাক কার্য সম্পাদন করে সেখান থেকেও পান বড়সড়ো কমিশন।
রাষ্ট্রীয় প্রজ্ঞাপনে জারিকৃত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা এমপিও নীতিমালার ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ প্রাপ্তির জন্য শিক্ষক/কর্মচারীরা একই সঙ্গে একাধিক স্থানে চাকরিতে বা আর্থিক লাভজনক কোনো পদে নিয়োজিত থাকতে পারেন না। এমন নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করেই বহাল তবিয়তে লক্ষ্য চোখের আড়ালে দিনের পর দিন একই ব্যক্তি দুটি পদে চাকুরী করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ একদিকে যেমন আইনের লঙ্ঘন তেমনি অন্যদিকে দুই জয়গার সেবা প্রত্যাশীরাও পাচ্ছেন না সেবা। এদিকে নিকাহ ও তালাক নিবন্ধনে যথাসময়ে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হবার কথাও বলেছেন অনেকে। দিনে দুপুর বেলায় সাধারণত অধিকাংশ বিয়ে সম্পন্ন হয়। এই সময় তিনি (মুনছুর রহমান ) মাদ্রাসা ফাঁকি দিয়ে বিয়ে পড়ান রেজিস্ট্রি অফিসে, বিভিন্ন বিয়ের অনুষ্ঠানে৷ সরকারি বেতন ভোগ করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকাকে রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা করছেন বলে দাবি এলাকাবাসীর৷
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে , গত (১৯ জুন) বেলা আনুমানিক ০৩:০০ ঘটিকার সময় কালাই থানাধীন ৩নং আহম্মেদাবাদ ইউ,পি অন্তর্গত হারুঞ্জা দক্ষিণপাড়া গ্রামের মোঃ শান্ত ইসলাম, পিতা-মোঃ ছামছুল আলম এর বাড়ীতে একটি তালাক অনুষ্ঠিত হয়। ছদ্ম নাম মোছাঃ ফাতেমা, পিতা-মোঃ আব্দুল আলীম, সাং-বিষ্ণপুর, থানা-জয়পুরহাট সদর, জেলা-জয়পুরহাটকে, মোঃ শান্ত ইসলাম বিবাহ করে। বিবাহের ১৫ দিনের মাথায় শ্বশুড়ের কাছ থেকে ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা কর্জ নেয়। এমতাবস্থায় গত (১৯জুন) ২৪ তারিখে ফাতেমার কোন অভিভাবক কে তলব না করে স্থানীয় ব্যক্তি মোঃ সিনজুনুর রহমান এলিন কে নকল মামা সাজিয়ে উপরোক্ত বিবাদী খোলা তালাক নামায় সই করে কর্জ নেওয়া ১,০০,০০০/-টাকা মেয়ের হাতে বুঝিয়ে দিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভিডিও করিয়া মেয়েকে বাড়ী হইতে বাহির করিয়া দেয়। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম বিবাহ-নিকা রেজিস্টার বালাম বই অপেশাদার এমদাদুল ইসলাম খাইরুল ইসলাম সহ একাধিকব্যক্তি কে দিয়ে রাখেন দেনমোহর কমানো, দেনমোহর বাড়ানো, ভুয়া তালাক বাল্য বিয়ে সহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে তিনি জড়িত।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কুসুমসারা গ্রামের আঃ জলিলের ছেলে আশরাফুল ইসলাম ২০২০ সালে পার্শ্ববর্তী গ্রামের আজিজুল হকের মেয়ে রাবেয়া খাতুনকে বিয়ে করেন। রাবেয়া তখন মাত্রাই উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন। ওই সময় রাবেয়ার বয়স ১৫ বছর। বর্তমানে দেশের রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী একজন ১৫ বছরের নাবালিকা মেয়ের বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে পারেনা৷ বাল্য বিয়ের মাস্টারমাইন্ড কাজী মাওলানা মুনছুর উক্ত বিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নিকোশীর মাধ্যমে নকল ভলিয়াম বইয়ে ছেলে মেয়ে ও উভয়ের স্বাক্ষর নিয়ে রাখেন৷ পরবর্তীতে যেই তারিখে বিয়ে পড়ানো হয়েছিল ওই তারিখটি উল্লেখ্য করে কোনে পক্ষকে ১ লাখের দেনমহরের জায়গায় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা লিপিবদ্ধ করে৷ কোনে পক্ষকে কাবিন মূলে নকল ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে৷ ফলে রাবেয়ার স্বামী ভুক্তভোগী আশরাফুল ইসলাম ও তার পরিবার দেনমোহর বাড়ানোর ঘটনায় হতবাক হয়েছে৷ বর্তমানে আশরাফুল ও রাবেয়া আলাদা আলাদা বাসস্থানে রয়েছেন৷
আশরাফুল ইসলাম নামের ওই ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের বলেন, আমি ২০২০ সালে বিয়ে করি তখন কাজী মুনছুর ও তার সহযোগী এসে একটা নীল বইয়ের স্বাক্ষর নিয়েছে। স্থানীয় মৌলভী দিয়ে এক লক্ষ টাকা দেনমোহর মূলে রাবেয়াকে বিয়ে করে ছিলাম। আমার স্ত্রী ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে আমাকে মামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেনমোহর বাড়ানো নাটক সাজিয়েছেন আমার স্ত্রী ও শ্বশুরের মাধ্যমে দুর্নীতি করে নকল নিয়ে বিয়ে নামক পবিত্র সম্পর্ককে হাতিয়ার বানিয়ে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে৷ এমন অভিযোগের বিষয়ে রাবেয়ার বাবার সঙ্গে কথা হলে বাবা দেনমোহর আমার বাড়ায়নি ছেলে যখন অভিযোগ দিয়েছে কালকে আপনার সাথে কথা হবে। পরের দিন খোঁজ নিয়ে জানা যায় রাবেয়া স্বামী আশরাফুল কে ২৯ জুন একতরফা তালাক প্রদান করেন৷৷
জেলা কাজী সমিতির সেক্রেটারী মোঃ রুহুল চিশতী বলেন, খোলাতালাকে মেয়ের বৈধ অভিভাবক না থাকলে এটি সে অপরাধ করেছে আর এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী দুটি পদে চাকরি করা এ বিষয়টি আমার জানা নেই। যেহেতু উনি অভিযোগ করেছেন বিষয়টি তদন্ত করে জেলার রেজিস্টার ব্যবস্থা নিবেন৷
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, কালাই পৌরসভার এক কাজী বলেন, এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী লাভজনক দুটি পদে কেও চাকরি করতে পারেনা। কাজী মুনছুর আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের কাজী হয়ে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের একদিনের জন্যও বসেন না। তিনি ইউনিয়নের কাজী হয়ে কালাই পৌরসভায় সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়েছেন। তিনি মাদ্রাসায় চাকরি করেন সেখানে একটি অফিস বসিয়েছেন। চাকরি করবেন না কাজীগিরি করবেন। চাকরির সুবাদে কাজী মুনছুর বিভিন্ন ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম বিবাহ নিকাহ রেজিস্টার বালাম বহি অন্যান্য ব্যক্তিকে দিয়ে বাল্যবিয়ে, অবৈধ তালাকসহ বিভিন্ন অপকর্ম করিয়ে যাচ্ছেন তার ইশারায়। যেহেতু একজন অভিযোগ করেছে এটি মন্ত্রণালয় দেখবেন৷
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোকসানা আক্তার ফাতেমা বলেন, শান্তর সাথে আমার সম্পর্ক করে ২য় বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পনেরো দিনের মাথায় ১ লক্ষ ধার চাইলে আমি বাবার কাছ থেকে এনে দিয়েছি। কিছুদিন পর ব্যবসার জন্য ২০ লাখ টাকা ও একটি মোটরসাইকেল দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় শাশুরি রেখা শশুর ও শান্ত আমার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। আমি অসুস্থ হলেও চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে দিত না সব সময় তালাকের জন্য চাপ দিত। হঠাৎ ১৯ জুন তিনটি লোক শান্তর বাড়িতে এসে নীল কাগজে সহি করে পূর্বের ধারের এক লাখ টাকা আমার হাতে বুঝিয়ে দিয়ে ভিডিও করে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। বাসায় এসে দেখি বাবা অসুস্থ৷ এখন বাবা সুস্থ হয়েছে। পারিবারিকভাবে আলোচনা করে দুই-একদিনের মধ্যে আমার প্রাপ্য দেনমোহর সহ যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা করব৷
অভিযুক্ত কাজী মোঃ মুনছুর বলেন, আমি কোন বাল্য বিয়ে পড়াই না আর ওই তালাকের সব প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে৷ এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী দুটি পদে চাকরি করা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন শুধু আমি না সারাদেশে অনেকেই দুটি পদে চাকরি করেন৷
এ বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার শরীফ তোরাফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান কাজী মুনছুরের বিরুদ্ধে আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাহার লাইসেন্স বাতিল বলে গন্য হইবে ইতিপূর্বে আমাদের মন্ত্রণালয়ের এমন একটি ঘটনায় তদন্তে প্রমাণিত হওয়াই লাইসেন্স বাতিল হয়েছে৷