পরিমনি বা সাকিব খানের গোপন বিবাহ: অনলাইন বিবাহ রেজিস্ট্রেশন

লেখক: মুহাম্মদ আল্-হেলাল

ঢালিউডের বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বেশি আলোচিত সমালোচিত চিত্র নায়ক সাকিব খান আর চিত্র নায়িকা পরিমনি। এ আলোচনা সমালোচনা তাদের অভিনীত কোন সিনেমা বা সিনেমার চরিত্র নিয়ে নয় বরং পুলিশ কর্মকর্তা সাকলায়েনের সাথে পরিমনির অনৈতিক সম্পর্ক, পরিমনির আজ বিয়ে বা মিলন আর কাল ছাড়াছাড়ি এবং সাকিব খানের তৃতীয় বিয়ে বা অপু, বুবলির সংসার নিয়ে।বর্তমান সাকিব খানের খানের তৃতীয় বিয়ে, অপু, বুবলির সাথে সাকিব খানের সংসার এবং পরিমনির অনৈতিক সম্পর্ক, বিয়ে/মিলন বা বিচ্ছেদ নিয়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হওয়া একটি নিয়মিত বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। জনমনে একটি সংসয়ও প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে সাকিব খান বা পরিমনির বিয়ে কয়টি হলো।

২২ শে সেপ্টেম্বর ২০২৩ সারাদেশের জাতীয় পত্রিকা গুলোর শিরোনাম ছিল রাজ—পরিমনির বিবাহ বিচ্ছেদ। অন্যদিকে পরিমনির ৬ টি বিয়ের আদ্যপান্ত নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতীয় দৈনিক নয়াদিগন্ত। কিন্তু সবগুলো বিয়ের তথ্য প্রকাশ করেনি পরিমনি। ১৮ ই আগস্ট ২০২৩ শুক্রবারে দেশের গণমাধ্যমের শিরোনাম ছিল ফিরে এসেছে পরিমনির ঘরে তার স্বামী আর ১৯ ই আগস্ট ২০২৩ শনিবারের শিরোনাম রক্তাক্ত পরিমনির স্বামী ও পরিমনি হাসপাতালে। শুক্রবারে তাদের মিলনের কথা জানা গেলেও শনিবারে জানা গেছে তারা ফিরে গেছে আগের অবস্থানে। এমন শিরোনাম একবার দুইবার নয় কতবার হয়েছে তার কোন ইয়ত্ত্বা নেই।

চিত্র নায়িকা পূর্ণিমার বিয়ে কয়টা হল সেটি হয়তো পূর্ণিমা এবং স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই জানেন। আবার চিত্র নায়ক সাকিব খানের দুই ঘরে দুটি সন্তান হওয়ার পর গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।

অল্প কিছু দিন আগেও এদেশের একজন নাগরিক একাধিক ঠিকানায় একাধিকবার ভোটার হতে এবং একাধিকবার ভোটও প্রয়োগ করতে পারতো। বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানায়তো বটেই। এটিকে খুব বেশি অনৈতিক বা অন্যায়ও বোধ হয় মনে করা হতো না এবং একাধিক জায়গায় ভোট দিতে উক্ত ভোটারকে সব জায়গায় শারিরীকভাবে উপস্থিত থাকাও জরুরী ছিলনা।

শুধুমাত্র উক্ত ভোটারের নাম এবং পিতার নাম বলতে পারলে যে কেউ ভোট প্রয়োগ করতে পারতো। এক্ষেত্রে একজন ব্যাক্তিকে শুধু পোশাক পরিবর্তন করেই অসংখ্য ভোট প্রয়োগ করতে অহরহ দেখা গেছে। তবে কখনো কখনো জাল ভোটার নিশ্চিত করতে পারলে উক্ত অপরাধীকে প্রশাসন কতৃর্ক লঘু শাস্তি হিসাবে ভোট চলাকালীন সময় বা কিছুসময় বন্দী রাখতে দেখা গেছে।মুক্তি পেয়ে আসামীকে আবার উক্ত ঘটনা গর্বের সাথে বর্ণনা করতেও দেখা গেছে।

বর্তমান জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরির পর কেউ আর একাধিক স্থানে ভোটার হতে না পারলেও অনলাইন বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা না থাকায় দাম্পত্য কলহ থেকে পারিবারিক তথা সামাজিক দ্বন্দ্বে এমনকি আইন—আদালত পর্যন্ত গড়াচ্ছে পূর্বের বিবাহের তথ্যাদি গোপন রাখার বিষয়গুলো।

রিদা(ছদ্মানাম) ৮০র দশকে শিশুকালে বাবার মৃত্যুর পর মায়ের সাথে আরো কয়েক ভাইবোন সহ গ্রাম ছেড়ে যার জায়গা হয় ঢাকা শহরের বস্তিতে। মা মানুষের বাসায় এবং ভায়েরা তৎকালীন টেম্পুতে হেল্পারীসহ ভিভিন্ন কাজ করে সংসার খরচ জোগাড় করলেও রিদার সুযোগ হয় দশম শ্রেণি অব্ধি পড়ার। এরপর বিয়ে হয় পাবনা জেলার এক ছেলের সাথে সেখানে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হওয়ার পর হয় বিচ্ছেদ।

তারপর বিয়ে হয় নড়াইল জেলায় সে ঘরে জন্ম হয় আরেক কন্যার। সেখানেও বিবাহ বিচ্ছেদ হলে তৃতীয়বারের মত আরেকটি বিয়ে হয় যার সাথে তারও গ্রামে স্ত্রী সন্তানসহ আরেকটি পরিবার রয়েছে এবং সে দ্বিতীয় স্ত্রীরিদাকে নিয়ে ঢাকা শহরেই থাকে। রিদার প্রথম ঘরের কন্যার বয়স এতদিনে ১৬/১৭ এবং দ্বিতীয় ঘরের কন্যার বয়স ১০/১২ বছরে পৌঁছেছে।

এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা হলেও রিদার তৃতীয় বিয়ে হওয়ার পরও দ্বিতীয় স্বামীর পরিবারে যাওয়া—আসা রয়েছে এমনকি প্রত্যেক ঈদেই প্রায় দ্বিতীয় স্বামীর পবিারের সাথে সময় কাটায়। দ্বিতীয় স্বামী ও তার পরিবার রিদার তৃতীয় বিয়ের খবর জানেনা যদিও দ্বিতীয় স্বামীর সাথে তার যোগাযোগ হয়না। সর্বশেষ তথ্যমতে তৃতীয় স্বামীর সাথেও বিচ্ছেদ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে।

অন্যদিকে ডলির(ছদ্মনাম) চার বিয়ে হয় এবং আমার দর্শক হিসেবে উপস্থিত থাকার সুযোগ হয় তিনবারই এছাড়াও নাকি আরেকটি বিয়ে হয়েছে যেটি আমি শুনেছি মাত্র।

এদিকে আঃ জলিলের দুই স্ত্রী দুই জেলায় বসবাস করে। বিয়ের পর দ্বিতীয় স্ত্রী এবং তার পরিবার আঃ জলিলের আগে আরেকটি স্ত্রী রয়েছে এমন খবর জানলেও হয়তো প্রথম স্ত্রী এবিষয়ে অজ্ঞ রয়েছে এখনো। আঃ জলিলের দ্বিতীয় স্ত্রীর আগের ঘরেরও রয়েছে একটি কন্যা সন্তান যার বয়স ৮/৯ বছর এবং বর্তমান ঘরে রয়েছে ২/৩ বছরের পুত্র সন্তান।

উল্লেখ্য রিদা তার সন্তানদের স্বস্ব পিতার পরিচয়ে বড় করলেও আঃ জলিলের দ্বিতীয় স্ত্রী তার প্রথম ঘরের কন্যাকে দ্বিতীয় স্বামীর পরিচয়ে বড় করছে কিন্তু কন্যাটি তার আসল পিতার পরিচয় জানে যদিও সম্প্রতি সরকার একটি আইন পাস করছে যে পিতার পরিচয় ছাড়াই শুধু মায়ের পরিচয় দিয়ে বড় করা যাবে সন্তান । এরকম অসংখ্য ভবিষ্যত প্রজন্ম নিজের পরিচয় জেনেও অন্য পরিচয়ে হীনমনতা নিয়ে বেড়ে উঠছে আমাদের সমাজে যার নেতিবাচক প্রভাবে সমাজ প্রভাবিত হওয়ার আশঙকা থেকেই যায়।

মাঝে মধ্যে কাজীর দায়ীত্ব পালন করার কারণে এরকম অনেক তথ্য জানতে হয়। কিছু দিন আগে এক বিবাহের রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে জানতে পারলাম কন্যার আগেও দুই তিনবার বিয়ে হয়েছিল কিন্তু কন্যার উকীল তথ্য দিলেন এর আগে কন্যার একটি বিয়ে হয়েছিল সেখানে বনিবনা না হওয়ায় সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে।

যদিও ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক  (রেজিস্ট্রেশন) আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ফরম নং ১৬০১ এর ৫নং ছকে কন্যার পূর্বের বিবাহ ছিল কিনা এমন তথ্যের প্রয়োজন হয় কিন্তু পূর্বে বিবাহ থাকলে কয়টি হয়েছিল এমন কোন তথ্যের প্রয়োজন হয়না। উক্ত ছকে যেটি লেখা আছে তাহলো—

৫। কন্যা কুমারী, বিধবা অথবা তালাকপ্রাপ্তা নারী কিনা?…………… একই ফরমে বরের পূর্বের বিবাহ সম্পর্কে ২১ এবং ২২ নং ছকে যে তথ্যের প্রয়োজন হয় তাহলো—

২১। বরের কোন স্ত্রী বর্তমান আছে কিনা এবং থাকিলে অদ্য বিবাহে আবদ্ধ হইবার জন্য বর ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অর্ডিন্যান্স মোতাবেক সালিসী কাউন্সিলের অনুমতি লইয়াছে কিনা?………………

২২। অন্য বিবাহে আবদ্ধ হইবার জন্য সালিসী কাউন্সিলের নিকট হইতে বরের নিকট প্রেরিত অনুমতি পত্রের নম্বর ও তারিখ………………বরের ক্ষেত্রে আরো একধাপ পরের তথ্যের প্রয়োজন হয় সেটি হলো— বরের বর্তমান কোন স্ত্রী আছে কিনা এমন তথ্য কিন্তু পূর্বে বিবাহে আবদ্ধ হয়েছিল কিনা এমন কোন তথ্যের প্রয়োজন হয়না। এছাড়া দেশব্যাপী আলোচিত ক্রিকেটার নাছির হুসাইন এবং তামিমা দম্পতির দ্বিতীয় বিবাহ সংক্রান্ত মামলা মোকদদ্দদমা বিষয়ে আমরা অনেকেই অবগত।

এতক্ষণে যে আলোচনা হলো সেটি বর্তমান প্রচলিত ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক  (রেজিস্ট্রেশন) আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ফরম নং ১৬০১ এর ফাঁক—ফোকরের কারণে যে ঘটনা ঘটছে।

প্রচলিত আইন মোতাবেক রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই স্বামী—স্ত্রীর মত জীবন—যাপন করছে এমন ঘটনা গ্রামে না পাওয়া গেলেও শহরে একটু খোঁজ নিলেই অহরহ পাওয়ার ঢের সম্ভাবনা রয়েছে। জাতীয় পরিচয় পত্রের মাধ্যমে বিবাহ বা বিচ্ছেদের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন হলে এমন সব ঘটনা হয়তো আমাদের সমাজে ঘটতো না।

১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক  (রেজিস্ট্রেশন)  আইনের পরিবর্তন করতঃ অনলাইনে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা এখন সময়ের দাবী। যার মাধ্যমে নাগরিকরা রক্ষা পাবে প্রতারিত হওয়া থেকে এবং সরকারের বৃদ্ধি পাবে রাজস্ব ।

মুহাম্মদ আল্—হেলাল

এমফিল গবেষক(এবিডি)

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ          

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * পরিমনি * বিবাহ রেজিস্ট্রেশন * সাকিব খান
সর্বশেষ সংবাদ