কুরবানী করতে হবে খালিছভাবে

 

হযরত মাওলানা মুহম্মদ আবুল বাশার:

সকল প্রশংসা যিনি খালিক,মালিক,রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য।নুরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরুদ শরীফ ও সালাম। কুরবানী করতে হবে খালিছভাবে। যারা খালিছভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য কুরবানী করেন, তাদের কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পতিত হওয়ার পূর্বেই মহান আল্লাহ পাক তিনি তা কবুল করেন।ছাহিবাতু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হাবীবাতুল্লাহ, ছাহিবায়ে নেয়ামত, রহমাতুল্লিল আলামীন, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ইয়াওমুন নহরে সকালের সবচেয়ে প্রিয় আমল হচ্ছে কুরবানী করা। আদম সন্তানের জন্য এদিন কুরবানী করার চেয়ে অধিক কোন উত্তম আমল মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট নেই। এই কারণে কুরবানীর পশুর শিং, পশম এবং খুর যেগুলো ফেলে দেওয়া হয় সেগুলোও কিয়ামতের দিন ওজনের পাল্লায় আনা হবে। এমনকি সেই পশুর রক্ত মাটিতে পতিত হওয়ার পূর্বেই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কুরবানী কবুল হয়। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, কুরবানী করতে হবে খালিছভাবে। যারা খালিছভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য কুরবানী করেন, তাদের কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পতিত হওয়ার পূর্বেই মহান আল্লাহ পাক তিনি তা কবুল করেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা হজ্ব শরীফ উনার ৩৭নং আয়াত শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট (কুরবানীর পশুর) রক্ত এবং গোশত কোনটাই পৌঁছেনা, বরং উনার নিকট তোমাদের তাক্বওয়া,পরহেযগারী পৌঁছে। ” অর্থাৎ কুরবানী কতটুকু মহান আল্লাহ পাক উনার উদ্দেশ্যে করা হলো, মহান আল্লাহ পাক তা দেখেন। সুতরাং কুরবানীসহ সমস্ত ইবাদত-বন্দেগী মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যই করতে হবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা আনয়াম শরীফ উনার ১৬২নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কুরবানী এবং হায়াত-মউত সমস্ত কিছু মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। ” তাই যে কুরবানী মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য করা হবে, সেটাই মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে পৌঁছাবে। আর যদি কুরবানীর মধ্যে লৌকিকতা থাকে, তখন এই কুরবানীর দ্বারা কোন ফযিলত পাওয়া যাবে না।সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, সমস্ত আমল একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য করতে হবে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, (আমার সম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলে দিন, নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার হায়াত, মউত সবই মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। ” তাই সম্মানিত ছলাত এবং কুরবানী যখন মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য করা হবে তখন বান্দার জন্য সীমাহীন খায়ের, বরকত এবং কামিয়াবী থাকবে। অন্যথায় কোন কামিয়াবী নেই।সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত মিখনাফ ইবনে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আরাফার দিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে অবস্থান করছিলাম। আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, “হে লোক সকল! নিশ্চয়ই প্রত্যেক আহলে বাইত তথা প্রত্যেক মালিকে নিসাবের পক্ষ থেকে প্রত্যেক বছরই পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব।

”সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, হানাফী মাযহাব মতে যারা মালিকে নিছাব, তাদের উপর কুরবানী ওয়াজীব। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তির কুরবানী করার সামর্থ রয়েছে, সে যদি কুরবানী না করে, তাহলে সে যেন ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয় অর্থাৎ ঈদগাহে না আসে। ” তাই যারা মালিকে নিছাব হবে, তারা অবশ্যই কুরবানী করবে। মালিকে নিছাব ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যার কাছে কুরবানীর তিন দিন অর্থাৎ যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ১০ তারিখ সুবহে সাদিক হতে ১২ তারিখ মাগরিব পর্যন্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার সমপরিমান টাকা রয়েছে। আর কারো যদি হাওয়ায়েযে আছলিয়া তথা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত সম্পদ থাকে যা নিছাব পরিমাণ তবে সেও কুরবানী করবে।

সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি পবিত্র কুরবানী উনার দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত দিনকে এই উম্মতের জন্য (ঈদের দিন হিসেবে) সাব্যস্ত করেছেন। অর্থাৎ, মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রতিটি আমলের মধ্যে বান্দার জন্য বেহিসাব নেয়ামত, বরকত, ফজিলত এবং সওয়াব রেখেছেন। তারপরও বান্দা শুকরিয়া করে না, আমল করার কোশেশ করেনা। নিজেকে নেককার ও জান্নাতী বানানোর কোশেশ করেননা।

সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, মূলকথা হলো-কুরবানী করতে হবে খালিছভাবে। যারা খালিছভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য কুরবানী করেন, তাদের কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পতিত হওয়ার পূর্বেই মহান আল্লাহ পাক তিনি তা কবুল করেন। প্রত্যেক মুসলমানের দ্বায়িত্ব-কর্তব্য হলো-মহান আল্লাহ পাক উনার ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খালিছ সন্তুষ্টি-রেযামন্দি হাছিল করার উদ্দেশ্যে সর্বপ্রকার লৌকিকতা মুক্ত হয়ে শরঈ নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে কুরবানী করা।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * কুরবানী করতে হবে খালিছভাবে
সর্বশেষ সংবাদ