মোদির শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার উপস্থিতি: তাৎপর্যময় সম্পর্কের শুরু
বার্তা বাহক :
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় বার শপথ নিচ্ছেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি। তার সেই ঐতিহাসিক শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এই দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন।
তাদের বিশাল অবদান রয়েছে ভূআঞ্চলিক রাজনীতিতেও। দারিদ্র্য বিমোচনের স্বার্থে তারা কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুধু শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার পক্ষেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নকেও পাখির চোখ করেছেন। তাই শেখ হাসিনার দিল্লি সফর দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও মজবুত হলে উপকৃত হবেন সকলেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতে, ‘দারিদ্র্যই আমাদের প্রধান শত্রু। আর এই দারিদ্র্য বিমোচনে আমাদের সর্বোচ্চ সম্পদ ব্যয় করা জরুরি’। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও উন্নয়নকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর মতোই মোদির স্বপ্ন, ‘আত্মনির্ভর ভারত’। উভয় রাষ্ট্রপ্রধানেরই স্বপ্ন সফল করার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক। প্রতিবেশী দুই দেশ আত্মিক সম্পর্কে আবদ্ধ। তাই ভারতের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নরেন্দ্র মোদিকে টেলিফোনে অভিনন্দন জানান। সেই সম্পর্কের খাতিরেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে মোদিও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রন জানিয়েছেন। সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে শেখ হাসিনা বন্ধুত্বকে আরও দৃঢ় করার পথ প্রশস্ত করেছেন।
বাংলাদেশ ও ভারত ঐতিহাসিকভাবেই একে অন্যের আত্মীয়। একাত্তরে ভারতের অবদান ভুলবার নয়। সব সময়ই ভারত বাংলাদেশের পাশে থেকেছে। দিল্লিতে সরকার বদল হলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়েনি। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী আগেই শেখ হাসিনাকে বলেছেন, ‘আপনার স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নকে সত্যি করতে ভারত সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন সফল হবে’। জবাবে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমাদের দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন জোরদার করার বিষয়ে আপনার প্রতিশ্রুতির জন্য আমি কৃতজ্ঞ’। কূটনৈতিকমহলের অনুমান, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পর দুই প্রধানমন্ত্রী সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন। সেই সৌজন্য সাক্ষাতকালে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও যোগাযোগ, পানি সম্পদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও জনগণের মধ্যে সংযোগসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়েও কথা হতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের মতে, ‘অন্য যে কোনও দেশের সঙ্গে ঢাকার যা সম্পর্ক, তার সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের কোনও তুলনাই চলে না। ভারতের সঙ্গে আমাদের ‘রক্তের সম্পর্ক’।’ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা জরুরি।
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবর্তনেও ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা জরুরি। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে ভারতের সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, ‘তিস্তা প্রকল্প বাংলাদেশের কাছে খুবই দরকারি। ভারত এই প্রকল্প রূপায়নে অর্থ ও প্রযুক্তি সহায়তা দিলে সব সমস্যা মিটে যায়’। টেকসই নগরায়ন এবং পরিকল্পিত ও সাশ্রয়ী আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে ভারত। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সঙ্গে সম্প্রতি সৌজন্য সাক্ষাৎকারে এই আগ্রহের কথা বলেন। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আর্থিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশি শিল্পপতিরা ভারতেই বেশি বিনিয়োগে আগ্রহী। অন্যদিকে, ভারত যে ৬২টি দেশকে ঋণ দেয় তার প্রথম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ভারত থেকে বাংলাদেশ ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার সহজ শর্তে ঋণ নিয়েছে। ভারত বাংলাদেশ বাণিজ্যিক বহরও বেড়েছে। গত এক দশকে আমদানি বেড়েছে তিন গুণ। রপ্তানি বাণিজ্যে ভারত এখন পঞ্চম স্থানে। রপ্তানি বেড়েছে আড়াই গুন। অথচ এক দশক আগে তারা ছিল ১২ তম স্থানে।
ভারতীয় লেটার অফ ক্রেডিট বা এলওসির একটি মানবিক মুখ রয়েছে। খুব সহজ শর্তে তারা ঋণ দেয় আমাদের। শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রেই ঋণ অনুদানে রূপান্তরিতও হয়। ২০১০ সালে ১০০ কোটি ডলারের প্রথম এলওসি সই হয় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে। পরে এর ১৪ কোটি ডলার অনুদানে রূপান্তর করে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দেয় ভারত। এরপর ২০১৫ সালে দ্বিতীয় এলওসির আওতায় ২০০ কোটি ডলারের চুক্তি হয়। দুই বছর পর ২০১৭ সালে ৪৫০ কোটি ডলারের তৃতীয় এলওসি হয়। এই ঋণের থেকে গত জুন মাস পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১৪৯ কোটি ডলার ছাড়ও দিয়েছে দিল্লি। তিনটি এলওসিতে সড়ক ও রেল যোগাযোগ, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ অবকাঠামো খাতের ৪২টি প্রকল্প নেওয়া হয়। এর মধ্যে ১৪টি প্রকল্প শেষ হয়েছে। চলমান আছে আটটি প্রকল্প। বাকি ২০টি প্রকল্প পরামর্শ নিয়োগ, ঠিকাদার নিয়োগ, প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রস্তুত করা—এমন পর্যায়ে আছে।বিভিন্ন পরিসংখ্যানেই প্রমাণিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আজ সবচেয়ে ভালো জায়গায় রয়েছে। দুই দেশের সরকারই সাধারণ মানুষের উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচানের লক্ষ্যে কাজ করছে।
কিন্তু গত জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকার বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ফের ক্ষমতায় ফিরতেই শুরু হয়েছে অপপ্রচার। ভারত বর্জনের নামে চলছে বাংলাদেশকে অস্থির করে তোলার চেষ্টা।
সূত্র: ইত্তেফাক