মাদারীপুরে সমাজসেবার দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ
মাদারীপুরে সমাজসেবার দুই কর্মকর্তা কে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুই কর্মকর্তা হলেন-মাদারীপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী সমাজসেবা অফিসার মো. শাখাওয়াত হোসেন হাওলাদার ও কালকিনি উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী সমাজসেবা অফিসার মো. মশিউর রহমান।ষড়যন্ত্রের শিকার দুই কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট থানায় ইতিমধ্যে সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
খোঁজনিয়ে জানাগেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী সমাজসেবা অফিসার মো. শাখাওয়াত হোসেন হাওলাদারের ব্যক্তিগত মোবাইলের বিকাশ নম্বর -০১৬৭০১৩৯১১১ ও তার স্ত্রীর বিকাশ নম্বর -০১৯২২১৮১২২৩ তাদের আগোচরে এই দু’টি বিকাশ মোবাইল নম্বর দুই জন প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর অক্টোবর / ২০২৩ থেকে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে অফিসের এম,আই,এস সার্ভারে।যেখানে দুইজন প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী ফাতেমা আক্তার ও রুপাই হাওলাদারের বিকাশ নম্বর দেওয়ার কথা ছিল। সহকারী সমাজসেবা অফিসার মো. শাখাওয়াত হোসেন হাওলাদার ও তার স্ত্রীর বিকাশ স্টেটমেন্ট চেক করে প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা রিসিভ ও উত্তোলনের কোন প্রমান পাওয়া যায় নি। এছাড়া কালকিনি উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী সমাজসেবা অফিসার মো.মশিউর রহমানের বিকাশ নম্বরও অনুরূপ মিজানুর সর্দার এর। প্রতিবন্ধী ভাতায় -০১৭১৫১৯৯৫৯৪ এম,আই,এস,সার্ভারে সংযুক্ত করা হয়েছে। যেখানে বিকাশ নম্বর দেওয়ার কথা ছিল কেন্দুয়া ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী মিজান সর্দারের। এছাড়া মনোয়ারা বেগম নামে একজনের বয়স্ক ভাতার বিকাশ নম্বর দেওয়ার কথা থাকলেও রহস্য জনকভাবে সহকারী সমাজসেবা অফিসার মো. মশিউর রহমানের একই বিকাশ নম্বর তার অগোচরে সার্ভারে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সহকারী সমাজসেবা অফিসার মো. মশিউর রহমানের বিকাশ মোবাইল নম্বরটির স্টেটমেন্ট চেক করে দেখা যায় ভাতার ২৫৫০/- কোন অংকের টাকা রিসিভ কিংবা উত্তোলন করা হয়নি।
প্রতিবন্ধী মিজানুর সর্দার এবিষয়ে সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিতভাবে সমাজসেবা অফিসার মো.শাখাওয়াত হোসেন হাওলাদার ও মো.মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দাখিল করছেন। ইতোমধ্যেই অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন।অভিযোগ প্রত্যাহার সূত্রে জানাগেছে, গত ১৭-০৫-২০২৪ তারিখে মাদারীপুর সদরের বর্তমান সমাজসেবা অফিসার বি.এম আসাদুজ্জামান ও প্রাক্তন সমাজসেবা অফিসার মো.মিজানুর রহমান ও মো. উজ্জ্বল মুন্সি প্রতিবন্ধী মিজানুর সর্দারের বাড়ীতে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, আপনার নামে প্রতিবন্ধী ভাতা হয়েছে কিনা জানেন? এসময় তিনি জানান জড়িপ করছে ভাতা হয়েছে কিনা জানা নেই।এসময় সামাজসেবা স্যারেরা বলেন,দুইজন সহকারী অফিসার ভাতার টাকা জালিয়াতি করে খাইতেছে।আপনি কি বিচার চান?তিনি জানান আমার প্রতিবন্ধী ভাতা মেরে খেলে আমি বিচার চাই।এসময় সমাজসেবা অফিস্যারগণ তারপক্ষে কাজ করার কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে একটি দরখাস্তে ভূল বুঝিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে বিভিন্ন দফতরে জমা দেন উল্লেখিত তিন কর্মকর্তা। এসময় তারা বলেন আপনি শুধু স্বাক্ষীর সময় স্বাক্ষী দিবেন।প্রতিবন্ধী মিজানুর বিষয়টি যাচাই-বাচাই করে জানতে পারেন। যাদের প্ররোচিত হয়ে অভিযোগে স্বাক্ষর করছেন,তা সঠিক হয়নি।তাকে অভিযোগের বিষয়ে জানতেও দেয়া হয়নি,তাকে দিয়ে ওই দুই সমাজসেবা অফিসার কে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে।প্রতিবন্ধী মিজানুর সর্দার তার ভুল বুজতে পেরে তাদের যেন বড় ধরনের ক্ষতি সাধন না হয়।এই জন্য অভিযোগ প্রত্যাহার করেন।
জানাগেছে মাদারীপুর সদরের প্রাক্তন সমাজসেবা অফিসার উজ্জ্বল মুন্সির বিরুদ্ধে অভিনব কায়দায় প্রতিবন্ধীদের ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।তিনি মাদারীপুর সদর জেলার ১৫ টি ইউনিয়নে ৫ হাজার ৩৭০ জন প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেওয়া হয়।এর মধ্যে শতাধিক প্রতিবন্ধীর অভিভাবকদের বিকাশ নম্বরে বছরে একবার দুইবার ২ হাজার ৫৫০ টাকা করে এলেও বেশীরভাগই ভিন্ন ভিন্ন বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠিয়ে নিজেই হাতিয়ে নিয়েছেন। তার এই দূর্ণীতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়।অভিযোগ পেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করছেন।সুত্র জানায় এতে সমাজসেবা অফিসার উজ্জ্বল মুন্সি ক্ষিপ্ত হয়ে ওই দুই সহকারী সমাজসেবা অফিসারের প্রতি।তার ধারণা সমাজসেবা অফিসার মো.শাখাওয়াত হোসেন হাওলাদার ও মো.মশিউর রহমান তাঁর দূর্ণীতির গোমড় ফাঁস করেছেন।নিজের অপরাধ ঢাকতে প্রাক্তন সমাজসেবা অফিসার মো.উজ্জ্বল মুন্সি ও আরেক প্রাক্তন সমাজসেবা অফিসার মিজানুর রহমানের যোগসাজশে বর্তমান সমাজসেবা অফিসার মো. বি. এম আসাদুজ্জামান প্রতিবন্ধী মিজানুর সর্দারকে প্ররোচিত করে মাদারীপুর সদর উপজেলার সহকারী সমাজসেবা অফিসার মো.শাখাওয়াত হোসেন হাওলাদার ও কালকিনি উপজেলা সমাজসেবার সহকারী সমাজসেবা অফিসার মো.মশিউর রহমানকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে কালকিনি উপজেলা সহকারী সমাজসেবা অফিসার মো. মশিউর রহমান বলেন, আমার বিকাশ মোবাইল নম্বরটি একজন বয়স্ক ভাতাভোগী ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর নম্বর যুক্ত না করে আমার মোবাইল নম্বর সার্ভারে সংযুক্ত করা হয়েছে।আমার আগোচরে আমার বিকাশ নম্বর যুক্ত করা হয়েছে। যা নিয়মবহির্ভূত।কোন অফিসারের আইডি পাসওয়ার্ড ছাড়া সার্ভারে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে বিকাশ নম্বর সার্ভারে সংযুক্ত করা হয়েছে। আমি ইতিমধ্যে জানতে পেরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিহিত করছি।থানায় সাধারণ ডায়েরি ও করেছি।
মাদারীপুর সদর উপজেলার সহকারী সমাজসেবা অফিসার মো.শাখাওয়াত হোসেন বলেন,অফিসারের আইডি পাসওয়ার্ড ছাড়া কোনভাবেই সার্ভারে প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ভাতা ভোগীদের আইডিতে প্রবেশ করা যায় না।আমার ও আমার স্ত্রী বিকাশ মোবাইল নম্বর ভাতাভোগীদের সার্ভারে ষড়যন্ত্র করে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার বি এম আসাদুজ্জামান বলেন,আমি মিজান সর্দার নামে কাউকে চিনিনা।তার বাড়ীতে যাওয়া প্রশ্নই উঠে না।সে অভিযোগ করলো কেন প্রত্যাহারই কেন করলো আমার জানা নেই। ওই ভদ্রলোককে আমার কাছে নিয়ে আসতে হবে।আমি মাদারীপুর মে মাসের ২৮ তারখি এসেছি। আমি এবিষয়ে কিছু জানি না।