কাজী নজরুল ইসলাম: বিদ্রোহ ও মানবতার কণ্ঠস্বর

জবি :
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী আজ। সত্য প্রকাশে নির্ভীক হয়ে তিঁনি আমৃত্যু অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলেন, এজন্য তাঁকে ‘বিদ্রোহী কবি’ বলা হয়। একই সাথে তিঁনি ব্যথিত ও বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি প্রচলিত শিল্পধারাকে পাল্টে দিয়ে নতুন বিষয় ও শব্দে বাংলা সাহিত্য ও সংগীতকে সমৃদ্ধ করেছেন। কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের ২৪শে মে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নজরুলের জীবন ছিল বিভিন্ন চড়াই-উৎরাইয়ে পরিপূর্ণ। তার সাহিত্যকর্ম এবং সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তাকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, এবং বৃহত্তর ভারতীয় উপমহাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে।
বিদ্রোহী কবি
নজরুলের অন্যতম বিখ্যাত কবিতা “বিদ্রোহী”, যা ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়, তাঁর বিদ্রোহী চেতনার সেরা উদাহরণ। এই কবিতায় তিনি যুগে যুগে চলমান সামাজিক ও রাজনৈতিক অন্যায়, শোষণ এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে তাঁর ক্রোধ প্রকাশ করেছেন। নজরুল লিখেছেন:
“আমি চির বিদ্রোহী বীর,
বিশ্বের নিপীড়িতের ত্রাণকর্তা”
এই পঙ্ক্তিতে তাঁর আত্মবিশ্বাসী ও দুর্বিনীত চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর কবিতায় তিঁনি ব্যক্তিগত ও জাতীয় মুক্তির জন্য সংগ্রাম করার আহ্বান জানিয়েছেন।
মানবতার কণ্ঠস্বর
নজরুল কেবল বিদ্রোহী চেতনায় সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিঁনি মানবতার কণ্ঠস্বর হিসেবেও পরিচিত। তাঁর কবিতা, গান, প্রবন্ধ এবং উপন্যাসে তিনি বারবার মানবিক মূল্যবোধ ও সহমর্মিতার কথা বলেছেন। “ধূমকেতু” পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর লেখাগুলোয় তিনি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা এবং সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লিখেছেন। নজরুলের গান, যা “নজরুলগীতি” নামে পরিচিত, বাংলার সংগীত ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। তাঁর রচিত গানে প্রেম, প্রকৃতি, ধর্ম, দেশপ্রেম এবং মানবতার প্রতি গভীর অনুভূতির প্রতিফলন পাওয়া যায়। তাঁর গান “কারার ঐ লৌহ-কপাট” এবং “ও আমার দেশের মাটি” আজও বাঙালির হৃদয়ে গভীর ভাবে স্থান করে নিয়েছে।
নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্রিটিশ সরকার তাঁকে বহুবার গ্রেফতার করে এবং তাঁর লেখা নিষিদ্ধ করে। তবুও তিঁনি থেমে থাকেননি। সমাজের অবহেলিত, নির্যাতিত ও দরিদ্র মানুষের পক্ষে তিঁনি নিরলস কাজ করে গেছেন। কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সত্যিকারের বহুমাত্রিক প্রতিভা। তাঁর সাহিত্যকর্ম ও সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তিনি আজও প্রাসঙ্গিক। বিদ্রোহ ও মানবতার কণ্ঠস্বর হিসেবে তিঁনি বাঙালি জাতির চেতনার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁর রচনা ও জীবনদর্শন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি মূল্যবান উত্তরাধিকার হিসেবে থেকে যাবে।
কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * কাজী নজরুল ইসলাম * বিদ্রোহী কবি
সর্বশেষ সংবাদ