কথার কথা-মুখেমুখে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলতে চাইনা, স্বীকৃতি চাই!

প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুল ছিলেন চিরপ্রেমের কবি। তিনি যৌবনের দূত। তিনি প্রেম চেয়েছিলেন, প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম দিয়েছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী, কিন্তু তার প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই মানুষটি অনায়াসেই বলতে পারেন, আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারত সফরে গিয়ে তাঁর প্রথম চাওয়া কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে কবির জন্মদিন পালন করা। তিনি তাই করলেন। ১৯৭২ এর ২৪ মে কবিকে ঢাকায় নিয়ে এসে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মর্যাদায় জন্মোৎসব পালন করলেন। কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি ঘোষণা করা হয় ১৯৭৪ সনে। কিন্তু যার কোন দালিলিক স্বীকৃতি এখনো দেয়া হয়নি। বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তনে তাকে এই উপাধি প্রদান করা হয়। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারিতে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।
ভারতে একটি দৈনিক পত্রিকার হেডলাইন ছিল – “কলকাতায় নজরুলকে এক কাপ চা দেওয়ার কেউ ছিলনা, বাংলাদেশ নজরুলকে সব দিয়েছে” – কাজী নজরুল ইসলামকে স্হায়ী বাসস্হান দিয়েছেন সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া রাষ্ট্রের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ধানমন্ডিতে যে বাড়ি দিয়েছেন ভারতীয় মুদ্রায় তার দাম ২০০ কোটি টাকা। সর্বক্ষনের জন্য সেবা থেকে শুরু করে গাড়ি পরিষেবা সব দিয়েছেন। জাতীয় কবি করেছেন। যেদিন তার জন্মদিন পালিত হয় বাংলাদেশে অন্তত ১০টি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়ক সামিল হন। তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাধিস্হ করা হয়। যার জানাজায় সবথেকে বেশি লোক সমাগম হয়েছে। মৃত নজরুলকে বাঁচানোর জন্য যা যা করার বাংলাদেশ তাই তাই করেছে। কোলকাতায় তো সকালবেলায় এক কাপ চা দেওয়ার কেউ ছিল না। বাংলাদেশ চেষ্টা করছে তাঁর জন্মদিনটি আন্তর্জাতিক সম্প্রীতি দিবস হিসাবে পালন করতে। আর আমরা এপারের অখাদ্যরা নজরুলের লাশের জন্য মায়াকান্না করলাম। হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন যে, আমাদের অভিমান থাকতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের প্রসারিত হৃদয় ও দায়িত্ববোধের তারিফ করতেই হয়। এপার বাংলা নজরুলকে নিয়ে ব্যবসা বা মায়াকান্না ছাড়া কিছুই করেনি।
নজরুল ইসলামকে স্থায়ী ভাবে বাংলাদেশে নিয়ে আসার মনোবাসনা ছিল তবে তা প্রথমে প্রকাশ করেনি। কিছুদিন পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কবি পরিবারের কাছে মনোবাসনা প্রকাশ করলে কবি পরিবারের উত্তর ছিল- কবি ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে অনেক ভাল আছেন, আগের চেয়ে অনেক বেশি সুস্থ বোধ করছেন, বাংলাদেশেই তাঁর বাকী জীবনটা কাটুক। এখন আমরা ভারতে যাই সুচিকিৎসা নিতে, আর আজ থেকে ৫২ বছর আগে যুদ্ধবিধ্বস্ত, সদ্য স্বাধীন একটি রাস্ট্রে একজন চলন-বলন শক্তিহীন মানুষ ধীরেধীরে সুস্থ বোধ করছেন! নজরুল পরিবারের অনুভূতির সেই বাংলাদেশ কি এখন আছে?
২৯ আগস্ট ১৯৭৬ (১২ ভাদ্র ১৩৮৩) ঢাকার পিজি হাসপাতাল ( বতর্মান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল) এ কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের উত্তর পার্শ্বে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে। বাংলাদেশ কবিকে অনেক কিছু দিয়েছেন তারপরও বলব দালিলিক স্বীকৃতি চাই। আজ কবির ১২৫তম জন্মদিনে এটি কবিপ্রেমীদের, সর্বসাধারণের দাবী নয় আবদার।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম