টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল
উজিরপুর বরিশাল প্রতিবেদক ঃ
বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের পরিতক্ত বোহোরকাটি হাটের জমিতে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল করেন স্থানীয়রা। ৬ মে সোমবার সকাল ১১ টায় উপজেলাবাসীর ব্যানারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হস্তিশুন্ড গ্রামের বাসিন্দা ও তিতাস গ্যাস টিএন্ডডি কোম্পানী লিমিটেডের সাবেক ডিজিএম প্রকৌশলী শহিদুল হক ডাকুয়া।
তিনি তার লিখিত বক্তব্য বলেন, কর্মক্ষম যুবকদের দেশ-বিদেশে চাকরির বাজারে চাহিদার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবিকা সংস্থানের লক্ষ্যে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিকরণের জন্য ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ (টিএসসি) স্থাপন (দ্বিতীয় পর্যায়)-এর মধ্যে রয়েছে বরিশালের উজিরপুর উপজেলা। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন জিওবি’র অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের শুরুতেই স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীর ব্যক্তি স্বার্থে স্থান নির্ধারণ নিয়ে দীর্ঘ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলার মধ্যবর্তী ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকার পরেও সরকারের খাস খতিয়ানভূক্ত বিপুল পরিমান পরিত্যক্ত উচুঁ জমি বাদ দিয়ে, উপজেলার দক্ষিণপ্রান্তের ব্যক্তি মালিকানাধীন নদী ভাঙন কবলিত এলাকায় জমি অধিগ্রহণ ও ভরাটের মাধ্যমে সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ লোপাটের অপচেষ্টা করছেন কতিপয় প্রভাবশালী। সচেতন উজিরপুর উপজেলাবাসী বামরাইল ইউনিয়নের বহু বছরের পরিত্যক্ত বহরকাঠি হাটের উঁচু খাস খতিয়ানভুক্ত জমিতে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণের জোর দাবি করেছেন। এখানে টিএসসি নির্মান করা হলে সরকারের যেমন জমি অধিগ্রহণ করতে হবেনা, তেমনি মাটিও ভরাট করতে হবেনা। সার্বিক বিষয় নিয়ে সোমবার সকালে বহু বছরের পরিত্যক্ত বহরকাঠি হাটে সংবাদ সম্মেলন শেষে স্কুল ও কলেজ নির্মানের দাবিতে মিছিল করা হয়েছে। কারিগরি শিক্ষানুরাগী, উদ্যোক্তা ও সচেতন বোহোরকাঠি হাটের খাস খতিয়ানভুক্ত ভূমিতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবির স্বপক্ষে বিভিন্ন যৌক্তিকতা তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরেন প্রকৌশলী শহিদুল হক ডাকুয়া।
তিনি আরো বলেন , চারিদিকে ঘণবসতি বিবেচনায় বৃটিশ সরকারের আমলে বোহোরকাঠি হাট পরিচালনার জন্য খাস জমি বরাদ্দ করা হয়েছিল। যুগের চাহিদায় সেই ঘণবসতি এখন আরও বৃদ্ধি পেলেও দীর্ঘবছর ধরে হাটটি বন্ধ হয়ে এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত জমির চারিদিকে ৩/৪ কিলোমিটার ব্যাসের মধ্যে অন্যকোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। পার্শ্ববর্তী উপজেলাসমূহের জন্য প্রতিষ্ঠিত ও প্রস্তাবিত টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজগুলো আমাদের প্রস্তাবিত জমি থেকে বহুদুরে অবস্থিত। এছাড়াও প্রস্তাবিত জমির পাশে হাইওয়ে রাস্তাসহ পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন শোলক, বরাকোঠা, জল্লা, কারফা, সাতলা, হারতা ইউনিয়ন এবং গ্রাম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে সুন্দরমানের চতুর্মুখী সড়ক ব্যবস্থা রয়েছে। এমতাবস্থায় খাস খতিয়ানভূক্ত পরিত্যক্ত বহরকাঠি হাটের প্রস্তাবিত জমিতে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হলে পর্যাপ্ত ছাত্র-ছাত্রী প্রাপ্তির নিশ্চয়তা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উল্লেখ করা হয়, সরকারের প্রস্তাবিত জমির পরিমান তিন একর কিন্তু দীর্ঘবছর ধরে পরিত্যক্ত বহরকাঠি হাটের জন্য বরাদ্দকৃত খাস খতিয়ানভূক্ত জমির পরিমাণ ২.৭৯ একর। প্রয়োজনে খাস খতিয়ানভূক্ত জমি সংলগ্ন ব্যক্তি মালিকানা জমি থেকে বাকি জমি মৌজা মুল্যানুসারে কোনরকম বাধা বিঘ্ন ছাড়াই অধিগ্রহণ করা সম্ভব হবে। প্রস্তাবিত ভূমিখানা তিন ফসলী অথবা জলাভূমি নয়। এর ৫/৬ কিলোমিটারের মধ্যে কোন নদীও নেই। তেমনি ভূমির ওপরে হাইভোল্টেজের বিদ্যুৎ লাইনও নেই। যা প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশনার সবগুলো শর্তের মধ্যেই রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রকৌশলী শহিদুল হক ডাকুয়া জানান, বিশ্বস্ত সূত্রে তারা জানতে পেরেছেন কতিপয় প্রভাবশালীর স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে উজিরপুর উপজেলার দক্ষিণপ্রান্তের মাহার মৌজায় ব্যক্তি মালিকানাধীন আটটি দাগের নাল জমিতে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। উক্ত ব্যক্তি মালিকানাধীন নাল জমি অধিগ্রহণ করে ভরাট করতে সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় হবে। তাছাড়া উক্ত জমি ভাঙন প্রবণ সন্ধ্যা নদীর সন্নিকটে এবং উপজেলা ভূখন্ডের সর্ব দক্ষিণপ্রান্তে অবস্থিত।
এছাড়াও উজিরপুর উপজেলা সদরে অবস্থিত একটি বহু পুরানো দীঘি ভরাট করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণের জন্য এক শ্রেণির লোক চেষ্টা ও তদবীর করছেন। কোন দীঘি কিংবা জলাশয় ভরাট করা সরকারি নীতিমালার পরিপন্থী ও প্রকল্প পরিচালকের দেওয়া নির্দেশনা লঙ্ঘনের সামিল। সংবাদ সম্মেলনে বোহোরকাঠির পরিত্যক্ত হাটের প্রস্তাবিত ভূমি নিয়ে ২০২১ সালে তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) মনগড়া, এক পেষে ও বাস্তবতাবিবর্জিত প্রতিবেদনের নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রকৌশলী শহিদুল হক ডাকুয়ার সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বরিশাল বিএম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন, জনতা ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত জিএম মিজানুর রহমান, সরকারী শেরে বাংলা কলেজের অধ্যাপক জহিরুল ইসলাম, ররাকোঠা ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম মোল্লা, প্রধানশিক্ষক আনোয়ার হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আউয়াল বেপারী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ গিয়াস উদ্দিন, লকিত উল্লাহ, আলমগীর হোসেন, সমাজ সেবক জয়নাল ডাকুয়া, মাহাবুব উদ্দিন মোল্লা, মন্টু হাওলাদার প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলন শেষে শত শত গ্রামবাসী সরকারি অর্থ সাশ্রয়ের জন্য পরিত্যক্ত বহরকাঠি হাটের সরকারি খাস জমিতে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবিতে মিছিল করেছেন। অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল ও উজিরপুরে কর্মরত অর্ধশতাধিক গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।