পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে টোলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ১৪ কাউন্সিলেরের
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার বিভিন্ন খাত থেকে আদায়কৃত প্রতিদিনের টোলের টাকা রাজস্ব ব্যাংক একাউন্টে জমা না দিয়ে আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৫ টায় পৌরসভা চত্বরে ১৪ জন কাউন্সিলর উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের ফেসবুক লাইভে এসে এমন অভিযোগ তুলে ধরেন।
টোলের টাকা যথাযথ ভাবে দৈনিক সংশ্লিষ্ট খাতে জমা দেয়ার লিখিত আবেদন নিয়ে সকাল থেকে অবস্থান করেও শুধুমাত্র মেয়রের অসম্মতির কারণে দায়িত্ব প্রাপ্ত পৌর কর্মচারী আবেদন গ্রহণ না করায় বাধ্য হয়ে তাঁরা মেয়রের অফিস কক্ষের সামনে দাঁড়িয়েই এই সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় তাঁরা মেয়রের স্বেচ্ছাচারিতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁর অপসারণ দাবী করেন।
দন্ডায়মান সংবাদ সম্মেলনে ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জোবায়দুর রহমানের উপস্থাপনায় জমাদানের জন্য তৈরী লিখিত আবেদনটি পড়ে শোনান প্যানেল মেয়র-১ শাহিন হোসেন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারী ব্যক্তিবর্গ নীলফামারী জেলাধীন সৈয়দপুর পৌরসভার ১৪ জন কাউন্সির বটে। আমরা জানি সৈয়দপুর পৌরসভার বিভিন্ন স্থান হইতে প্রতি মাসে টোল আদায় হয় ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। তন্মধ্যে আপনি প্রতি মাসে মাত্র ৮০,০০০/- হইতে ৯০,০০০/- টাকা রাজস্ব খাতে জমা করে থাকেন। বাকি টাকা প্রতি মাসেই আপনি আত্মসাত করিয়া আসিতেছেন।
অথচ গত ২০/১২/২০২১ ও ১৪/৮/২০২৩ ইং মারফত আপনাকে আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারী কাউন্সিলরবৃন্দ জানিয়েছিলাম প্রতিদিনের টোলের টাকা প্রতিদিনই ব্যাংকে জমা করিতে হইবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সহিত পৌরসভা পরিচালনার নিমিত্বে আপনি আমাদের দাবী মানিয়া নিলেও পরবর্তী মাস হইতে অদ্যাবধি কখনও ৮০,০০০/- বা ১,০০,০০ উপরে টোলের টাকা জমা করেন নাই। আজ বড়ই পরিতাপের বিষয় এই যে, আমরা বিশেষ সূত্রে জানিতে পারিলাম যে, গত মার্চ/২০২৪ ইং মাসের উত্তোলিত টোলের টাকা সংগ্রহকারী জনাব আনসারের নিকট হইতে ৫,৫০,০০০/- টাকা জোর পূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে আত্নসাৎ করিয়াছেন।
অতএব, আপনাকে বিশেষ ভাবে অবগত করা যাইতেছে যে, উক্ত আত্মসাতকৃত টাকা যদি ৩ দিনের মধ্যে সৈয়দপুর পৌর সভার রাজস্বখাতে জমা প্রদান না করেন তবে আপনার প্রতি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে। এই আবেদনটি জমা দিতে গেলে মুন নামে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী তা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং মেয়রের নিষেধ আছে বলে জানান। অথচ যে কোন আবেদন বা চিঠি গ্রহণ বা ডকেট করা একান্ত দায়িত্ব। সেটা সাধারণ পৌরবাসী দিলেও। সেখানে আমরা ১৪ জন কাউন্সিলর অনুরোধ করলেও ভ্রুক্ষেপ করা হয়নি। আমরা আগামীকাল এই আবেদনটি পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাঠাবো।
প্যানেল মেয়র-২ ও ৪, ৫, ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর এবং উপজেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী জাহানারা বেগম বলেন, আবেদন গ্রহণ না করে মেয়র স্বেচ্ছাচারিতা দেখালেন। এটা তার চিরাচরিত আচরণ। তিনি খবর পেয়ে পৌরসভায় এসে আমাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎও করেননি। উল্টো পৌর কর্মচারীদের সাথে রাগ দেখিয়ে অসভ্যতা করেছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং বিচার দাবী করছি।
তিনি বলেন, মেয়রের এমন অনিয়ম দূর্নীতি স্বেচ্ছাচারিতা ও নৈতিক স্খলনের প্রতিবাদ করায় তিনি আমাদের সাথে বৈরী আচরণ করছেন। গত ঈদুল ফিতরে আমাদেরকে ভিজিএফ এর কার্ড দেয়নি। এতে আমাদের ১৪ টি ওয়ার্ডের দুস্থ অসহায় দরিদ্র মানুষেরা প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। গত ৩ বছর ধরে তিনি টোলের সব টাকা লুট করেছেন। দূর্নীতি করে পৌরসভাটিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এবিষয়ে পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি কোন সাড়া দেননি এবং পরে মুঠোফোনে কল দিলে রিসিভ করেননি। ফলে তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। (ছবি আছে)