তুচ্ছ ঘটনায় সৈয়দপুরে তিন ঘন্টা সড়ক অবরোধ, জনগণ জিম্মি, চরম ভোগান্তি

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
নিজেরা অপরাধ করে উল্টো ট্রাফিক পুলিশের উপর দোষ চাপিয়ে জনগণকে জিম্মি বানিয়ে চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে মটর শ্রমিকরা। মিথ্যে অপবাদ ছড়িয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে ৩ ঘন্টা সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় দুঃসহ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। পরে থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হয়।
এমন ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে। শুক্রবার (১৫ মার্চ) বেলা সাড়ে ১২ টা থেকে পৌনে ৩ টা পর্যন্ত সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে আড়াআড়ি ভাবে সড়কে বাস রেখে এই অবরোধ করে নীলফামারী জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকরা। এতে সৈয়দপুর থেকে রংপুর, দিনাজপুর মহাসড়কসহ, পার্বতীপুর, নীলফামারী, ডোমার, ডিমলা পথে বাস, ট্রাক, কার, মাইক্রো, মোটর সাইকেল, রিকশা, অটোসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
জানা যায়, মেহেদী এন্টারপ্রাইজ নামের একটি মিনিবাস রংপুর থেকে সৈয়দপুরে আসার পথে তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানার সামনে পুলিশ থামার সংকেত দেয়। কিন্তু চালক বুলবুল সেখানে গাড়ি না থামিয়ে দ্রুত এগিয়ে আসে। এতে পুলিশ গাড়িটি আটকাতে মোটর সাইকেল নিয়ে পিছু করে। তা টের পেয়ে কিছু দূর এসে গাড়ির চালক বাস থামিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে কাগজপত্র চাইলে সুপার ভাইজার ও হেলপার তা দেখাতে ব্যর্থ হলে তাদের সহ গাড়িটি থানায় নিয়ে যায় এবং ড্রাইভারকে কাগজসহ এসে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে।
অথচ চালক বুলবুল পালিয়ে সৈয়দপুরে এসে জানায় হাইওয়ে পুলিশ অকারণে তার গাড়ি আটক করেছে এবং সুপার ভাইজার ও হেলপারকে মারধর করেছে। এতে উপস্থিত সকল মটর শ্রমিকের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা তাৎক্ষণিক বাস টার্মিনালের তিন দিকের সড়কে মিনিবাস এলোমেলো ভাবে রেখে অবরোধের সৃষ্টি করে। ফলে মুহুর্তে চারপাশে প্রায় দুই শতাধিক যান আটকে পড়ে।
এতে যাত্রীরা বাধ্য হয়ে হেটে টার্মিনাল এলাকা পাড় হয়। কাছের যাত্রীরা  অপরপ্রান্তে এসে অটোরিকশা ও সিএনজি নিয়ে গন্তব্যে রওয়ানা দেয়। কিন্তু দূরের যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হয়। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে যেতে বের হওয়া মানুষেরা। তাছাড়া স্থানীয় লোকজনও চলাচলে সমস্যায় পড়ে। এমনকি এম্বুলেন্সও আটকে পড়ে অবর্ণনীয় দূর্দশায় নিপতিত হয় রোগীসহ স্বজনরা।
প্রায় ২ ঘন্টা পর জুমআর নামাজ শেষে নীলফামারীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সৈয়দপুর সার্কেল) প্রফুল্ল কুমার দত্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শ্রমিক নেতা ও মটর মালিক নেতাদের সাথে আলোচনায় বসেন। এর প্রায় ১ ঘন্টা পর অবরোধ তুলে নিতে সম্মত হয় মটর শ্রমিকরা। এরপর বেলা পৌনে ৩ টার দিকে সড়কে আড়াআড়িভাবে রাখা বাস সরিয়ে নেয়া হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
চালক বুলবুল জানান, গাড়ির কাগজপত্র বাড়িতে রেখে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিল। এজন্য হাইওয়ে পুলিশের হাতে পড়ে ভয়ে কৌশলে পালিয়ে এসেছে। আটক গাড়ি ও সুপারভাইজার, হেলপার কে ছাড়িয়ে আনতে পুলিশের উপর চাপ সৃষ্টি করতে মারপিট করে আহত করার কথা বলে। এতে অবরোধ করে শ্রমিকরা। এছাড়া কথায় কথায় মামলা দেয়া ও চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। খুরশিদ আলম নামে হাইওয়ে পুলিশের এক সদস্য এক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করেছে বলে শ্রমিকরা চরম ক্ষুব্ধ। তাই মুহূর্তে শ্রমিকরা অবরোধের সিদ্ধান্ত নেয়।
তুচ্ছ ঘটনায় এমন চরম জনভোগান্তি সৃষ্টির বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ, শ্রমিক নেতা ও মালিক নেতৃবৃন্দ সংবাদ কর্মীদের কোন ভাষ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। তবে সাধারণ ভুক্তভোগী মানুষেরা বলেন, মটর শ্রমিকদের হাতে সরকার ও প্রশাসনের কোন কতৃত্ব বা নিয়ন্ত্রণ নাই। তাই কথায় কথায় তারা জনগণকে জিম্মি করে। এমনকি ব্যক্তিগত কথা কাটাকাটি বা ঝগড়াকে কেন্দ্র করেও যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলে। অথচ কোন জবাবদিহিতা নেই। আজ না হলেও সহস্রাধিক মানুষ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। কে দিবে তাদের এই ক্ষতিপূরণ?
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * তিন ঘন্টা সড়ক অবরোধ * তুচ্ছ ঘটনায় সৈয়দপুরে
লাইভ রেডিও
সর্বশেষ সংবাদ