শিশু ও পরিবেশ বান্ধব শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর উপচে পড়া ভীড়, বেড়েছে সেবার মান

গাজীপুর প্রতিনিধি:
শ্রীপুর উপজেলার প্রায় ৮ লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বিভিন্ন অনিয়ম অবহেলার কারণে ভোগান্তিতে ছিলেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। সামান্য অসুস্থ্য হলেও রোগীদের গাজীপুর জেলা সদর হাসপাতাল যেতে হতো। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিত্র এটি। এখন বদলে গেছে হাসপাতালের পরিবেশ। ভেতরে ঢুকতেই শত শত রোগীর দীর্ঘ লাইন। ঝকঝকে হয়ে উঠেছে হাসপাতালের ভেতর-বাহির। সবুজে ছেয়ে গেছে চারপাশ। বসেছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
ভালো সেবা পাওয়ায় উপজেলার ছাড়াও আশেপাশের কাপাসিয়া, গফরগাঁও এবং ভালুকা উপজেলা সীমানা থেকে রোগী আসছে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। স্বাভাবিক প্রসবেও সুনাম কুড়িয়েছে হাসপাতালটি। চিকিৎসক-নার্সরা এখন আর হাসপাতাল ছাড়তে চান না। তাঁদের থাকার জন্য আবাসিক ভবনগুলোও নতুনভাবে সাজানো হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বহির্বিভাগে ২ লাখ ৭ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। একই সময়ে অন্তর্বিভাগে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮ হাজার ৯০০ এবং জরুরী বিভাগে ২৫ হাজার ৮০০ জন। ২০২০ সালে বহির্বিভাগে সেবা নিয়েছেন ৯৪ হাজার ৭২১ জন। একই সময়ে অন্তর্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭ হাজার ৭৪৮ এবং জরুরী বিভাগে ১৪ হাজার ৭২৫ জন। দুই বছরের ব্যবধানে হাসপাতালে বেড়েছে স্বাভাবিক প্রসবের সংখ্যাও। ২০২০ সালে এ হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ৬১৩ জন এবং সিজার হয়েছে ৯ জন প্রসূতির। ২০২২ সালে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ৭০৩ জন এবং সিজার হয়েছে ১২৪ জন গর্ভবতীর।
বেড়েছে হাসপাতালের রাজস্ব আয়। ২০২১ সালে রাজস্ব আয় ছিলো ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৪ টাকা। ২০২২  সালে রাজস্ব আয় দাঁড়ায় ২২লাখ ৪৫ হাজার ৫৮৬ টাকা। বর্তমানে ২০২৩  সালের জুলাই মাস পর্যন্ত এ আয় ১৭ লাখ ৬৫ হাজার ৭৯৪ টাকা।
সরেজমিনে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রায় ৫ একর জমির ওপর স্থাপিত হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে ঝকঝকে পরিবেশ। হাসপাতালে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে জরুরী বিভাগ। সুন্দর বিশ্রামাগার। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল্য তালিকা টানানো রয়েছে দেয়ালে এবং সীমানা প্রাচীরের ভিতরের চারপাশে রোপন করা হয়েছে ফলদ-বনজ, ঔষধিসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ।
হাসপাতাল চত্বর যেন একটা ছোটখাটো পার্ক। রয়েছে কয়েক’শ ফুল ও ফলের গাছ। এ হাসপাতালে রয়েছে গাইনি কনসালট্যান্ট। স্বাভাবিক প্রসব বাড়াতে গর্ভবতী নারীদের নিয়ে নিয়মিত সমাবেশের আয়োজন করা হয়। মাসে ৭০ থেকে ৮০ টি স্বাভাবিক প্রসব হচ্ছে হাসপাতালে। হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখতে বিভিন্ন স্থানে ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়েছে।
 বর্তমানে ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ডেন্টাল ইউনিট, স্বাভাবিক প্রসব, সির্জার, অপারেশন, প্যাথলজি, ফার্মেসি, করোনা টেস্ট ও করোনার টিকা, ডেঙ্গু পরীক্ষা, গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য এএনসি কর্নার, ইপিআই বা টিকাদান কর্মসূচি চালু রয়েছে। নন কমিউনিকেবল ডিজিজের জন্য রয়েছে আলাদা এনসিডিসি কর্নার। রয়েছে গর্ভবতী মায়েদের জন্য এনসি কর্নার ও পিএনসি কর্নার। শিশুদের জন্য রয়েছে আইএমসিআই কর্নার।
যেখানে মা ও শিশুদের পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন করা হয়। চালু রয়েছে ব্রেস্ট ফিডিং ব্যবস্থা এবং ডে কেয়ার সেন্টার। ভায়া সেন্টারের  মাধ্যমে  ৩০ বছর বা তার উপরের বয়সের মহিলাদের জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও স্কিনিং টেস্ট করা হয়। কিশোর কৈশোর বান্ধব সেবা কেন্দ্র, ডেন্টাল বিভাগ, নাক, কান, গলা, মেডিসিন শিশু, অর্থোপেডিক এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কমিউনিটি ভিশন সেন্টার। এছাড়াও  শিশুদের জন্য রয়েছে প্লে জোন।
যা শিশু রোগীদের জন্য এক নতুন সংযোজন।
ইউজারফ্রি বেড়ে আগে থেকে দ্বিগুণ হয়েছে।
এ হাসপাতালে আরো ভালো চিকিৎসা দিতে গেলে আরো চিকিৎসক নিয়োগ, প্রয়োজনীয় ওষুধ বরাদ্দ, নতুন ডিজিটাল এক্স রে মেশিন সংযোজন, হাসপাতালে এম্বুলেন্স এর ডাইভার প্রয়োজন, হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার জন্য আনসার নিয়োগের প্রয়োজন।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু হিজবুল্লাহ সামির মা শামীমা আক্তার তাকে নিয়ে এ হাসপাতালে আসেন। ডে কেয়ার সেন্টারে সারাদিন চিকিৎসা দিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় নিয়ে চলে যান। তিনি প্রতিবেদকে বলেন, এই ডে কেয়ার সেন্টার না থাকলে বাচ্চাকে ভর্তি করতে হতো। হাসপাতালেই রাতে থাকতে হতো। শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্লে জোনে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু রাহাতের মা দীনা ইসলাম জানান, চিকিৎসা দেওয়ার সময় আমার  ছেলে ভয় পায়, কান্নাকাটি করে। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর প্রথমে তাকে প্লে জোনে নিয়ে যাওয়া হয়। সামনে দেওয়া হয় লাল, নীল ও বেগুনি রঙের বেশ কিছু খেলনা। এক পর্যায়ে বাচ্চাটি খেলার মধ্যে মগ্ন হয়ে যায়। পরে সেখানেই তাকে চিকিৎসা দেয় । সে আর তখন ভয় পায়নি।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রনয় ভূষণ দাস জানান, প্রান্তিক মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণের জন্য  আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। হাসপাতালে যে সমস্ত সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো সমাধান করা গেলে রোগীদের আরও উন্নত চিকিৎসা সেবা দেওয়া যাবে।
সম্প্রীতি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী গাজীপুর ৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা রুমানা টুসি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে আশ্বাস প্রদান করেন।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * গাজীপুর * সেবা
সর্বশেষ সংবাদ