শার্শার ভুট্টা চাষে বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষক

 যশোর জেলা প্রতিনিধি
আমাদের দেশে খাদ্য উৎপাদনে ভুট্টার ভুমিকা অনশিকার্য। ভুট্রার আটা ময়দা দিয়ে তৈরি করা হয় নানা রকম পিঠা। রুটি পরাটা। শিশু খাদ্য তৈরিতে ভুট্রার বিকল্প নেই,পপকন তৈরীতে ভুট্রার চাইতে ভালো কিছু হয না এছাড়া আগুনে পুড়িয়ে ও সিদ্ধ করে খাওয়া যায় পুষ্টি গুণে ভরা ভুট্টা।
যশোরের শার্শায় এবার ভুট্রা চাষে বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষক। তাদের চোখে এখন শুধুই দিগন্ত জোড়া সবুজ । মাঠের পর মাঠ জুড়ে কেবল সবুজের সমারহ। যে দিকে চোখ যায় কেবল সবুজ গালিচা চোখে পড়ে।
ভুট্রার সবুজ গাছের মাথায় সোনালী খয়েরি ফুল প্রকৃতিতে শোভা বর্ধনে যেন নব সাজে সাজিয়েছে  সমস্ত মাঠ। সবুজের সমারোহ  বিমোহিত করছে মানুষকে। সারা মাঠ জুড়ে এমন মধুময় সবুজ গালিচার দৃশ্য লক্ষণীয় এখন যশোরের শার্শার মাঠে মাঠে।
শার্শা উপজেলা কৃষি অফিস জানাই, এ বছর শার্শা উপজেলায় ভুট্রা চাষে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২শত ৪০ হেক্টর কিন্তু চাষ হয়েছে  ২ শত ৪৬ হেক্টর যা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে ৪৬ হেক্টর বেশি। গত বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২শত ৪০ হেক্টর। গত বছরে তুলনায় এবছর ৪৬ হেক্টর জমিতে ভুট্রার চাষ বেশি হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হিসাবে তিনি জানান, প্রতি হেক্টর জমিতে ১১ মেট্রিক টন ভুট্রা উৎপাদন হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ২৪৬ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৭০৬ মেট্রিকটন ভুট্রা উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।তবে বিভিন্ন কারণে এই হিসাবের কম-বেশি হতে পারে।   ভুট্রা চাষের উপযোগী মাটি, অনুকূল পরিবেশ, কৃষি বিভাগ থেকে সুপরামর্শ ও উৎসাহ প্রদান, সময় মত প্রণোদনার বীজ ও সার কৃষকের মাঝে বিতরণ ও ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা উপজেলার কৃষকদের মাঝে ভুট্রা চাষের আগ্রহ অনেকটা বাড়িয়েছে।
শার্শা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠ পর্যায়ের চাষীদের সাথে কথা বললে তারা জানান,কৃষি বিভাগ থেকে আমরা সুপরামর্শ পেয়েছি। তারা জানিয়েছেন,আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রহায়ণ,অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত ভুট্রার চাষ করা যায়। ভুট্রা চাষে সার, কীটনাশক কম লাগায় স্বল্প খরচে অধিক ফসল পাওয়া সম্ভব। ভুট্টা চাষে মূলত ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, জিংক সালফেট ও গোবর সার প্রযোজন হয়। আমরা সরকারী সহযোগীতার সার ও বীজ পেয়েছি যে কারণে আমাদের উৎপাদন খরচ অনেক কমে গেছে।
উলাশী ইউনিয়নের গিলাপোল গ্রামের কৃষক আব্দুল মোমিন, সম্বন্ধকাঠি গ্রামের বাবু,নিজামপুর ইউনিয়নের গোড়পাড়া গ্রামের  কৃষক হাবিবুর রহমান, নিজামপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম, শার্শা ইউনিয়নের পান্তাপাড়া গ্রামের  কৃষক আমিরুল হক সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন ভুট্টা চাষির সাথে কথা বললে তারা জানান, শার্শা উপজেলার দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি ভুট্টা  চাষের জন্য উপযোগী। সরকারি প্রণোদনায় সার ও ভুট্টার বীজ পেয়ে আমরা অত্যন্ত খুশি এবং সময়মতো জমি চাষ করতে পেরে আমরা ভুট্রাচাষে ভালো ফলনে  সফলতা পাবো এমনটা আশাবাদী। আমরা আশা করছি হেক্টর প্রতি ১০ থেকে ১১ মেট্রিক টন ভুট্রা উৎপাদিত হবে। দাম ভালো ও অধিক চাহিদা হওয়ায় চাষিরা ভুট্টা  চাষে লাভবান হবেন এমনটি ভাবছেন চাষি।
আমাদের দেশে সাধারণত যে সমস্ত ভুট্রার চাষ হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য  বারি-৫,৬,৭,চমক,টিএমএইচবি,খৈ ভুট্টা, বর্ণালী, মোহর, শুভ্রা, বারি মিষ্টি ১, বারি বেবিকর্ন ১,সুপার ৫৫, ডিকেসি ৯১৮৮,কাভেরি ১০০  এছাড়াও বাড়ি হাইব্রিড ১ থেকে ২৭  জাত অন্যতম। এর মধ্যে শার্শা উপজেলায় চমক ও টিএমএইচবি জাতের ভুট্টা  চাষ  বেশি হয়েছে।
ভুট্টা  চাষে কাটুঁই পোকা,মাজরা পোকা ও আর্মিওয়ার্ম পোকার সৃষ্টি রোগ অন্যতম কিন্তু কৃষি বিভাগের আন্তরিকতা ও সার্বিক সহযোগীতার কারণে কৃষকরা রোগ বালাই মুক্ত ভুট্রা ঘরে তুলতে পারবে এমন আশ্বাস তাদের।
উপজেলা কৃষি অফিসার দীপক কুমার সাহা জানান, ভুট্রা চাষে আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছি গত বছরের তুলনায় এ বছর ৪৬ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে দেশে খাদ্য ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে  ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি করতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলার ২৯০ জন চাষিকে প্রণোদনার সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। প্রতি বিঘায় ২ কেজি বীজ ২০ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার প্রদান করা হয়েছে। আবহাওয়া  অনুকুলে থাকায় দ্রুত চাষ করা সম্ভব হয়েছে কৃষি বিভাগের পরামর্শে সময় মত চাষ করায় এ বছর কৃষক কাঙ্খিত ফসল ও ন্যায্য দাম পাবেন এমনটি আশা করছেন কৃষক।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * কৃষক * শার্শার ভুট্টা চাষ
লাইভ রেডিও
সর্বশেষ সংবাদ