প্রধান শিক্ষকের করা চাঁদাবাজি মামলায় ডোমারে ৩ জন আটক
নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
ডোমারে চাঁদাবাজি মামলায় ৩ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আটক আসামীরা হলেন ডোমার পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র মরহুম এনায়েত হোসেন নয়নের ছোট ভাই এবাদত হোসেন চঞ্চল (৪৫), মৃত মনছুর আলী (ভেন্ডার) এর ছেলে মোসাদ্দেকুর রহমান সাজু (৪৪) ও ধৌলু মামুদ এর ছেলে রতন ইসলাম (৫২)।
তারা আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে নীলফামারী জেলা জজ আদালতের বিচারক আয়শা বেগম তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরনের নির্দেশ দেন। আটককৃতরা ডোমার পৌরসভার চিকনমাটি ধনিপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
ডোমার বালিকা বিদ্যা নিকেতন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ ওমর ফারুক কর্তৃক দায়েরকৃত মামলা সুত্রে জানা যায়, প্রায় ৫/৬ মাস পূর্বে ডোমার বালিকা বিদ্যা নিকেতনের ভিতর একটি অর্জুন গাছ হেলে পড়ে। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ন হওয়ায় বিদ্যালয়ের কমিটি মিলে একটি রেজ্যুলেশন করে সকলের উপস্থিতিতে গাছটি কাটা হয়।
গাছটি বেআইনী ভাবে কাটা হচ্ছে মর্মে হুমকি প্রদর্শন করে আটককৃতরা নিজেদেরকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। প্রধান শিক্ষক দাবীকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করলে বিবাদীরা বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদান করেন।
পরে তারা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট উক্ত গাছ কর্তনের অভিযোগ করে। এতে প্রধান শিক্ষকে ডেকে নিয়ে গাছ কর্তনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। সেসময় গাছটি ঝুঁকিপূর্ন ছিল তাই ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার্থে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কর্তন করা হয়েছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক।
মামলা সুত্রে আরো জানা যায়, গাছ কেটে ফেলাকে কেন্দ্র করে বিবাদীরা প্রধান শিক্ষকের কোন কিছু করতে না পেরে তাঁকে হয়রানি করার অজুহাত খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে অত্র মামলার ঘটনার দিন অর্থাৎ গত ০১/০৯/২০২৩ তারিখ অনুমান রাত ১১ টার দিকে প্রধান শিক্ষক তার স্কুলের নাইট গার্ড ঠিক ভাবে ডিউটি করে কি-না, তা দেখার জন্য স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে এসে নাইট গার্ড ও মামলার সাক্ষী রফিক এর সাথে কথা বলেন।
এরপর স্কুল হতে বাসায় যাওয়ার পথে ডোমার বালিকা বিদ্যা নিকেতন স্কুলের সহকারী শিক্ষিকার বাড়ির সামনে পৌঁছালে বিবাদীরা প্রধান শিক্ষককে দেখতে পেয়ে পথরোধ করে। এসময় তারা পরস্পর যোগ সাজসে স্কুলের সহকারী শিক্ষিকার সাথে পরকিয়ার সম্পর্ক আছে অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষক কে জোর পূর্বক ধরে নিয়ে বিবাদী চঞ্চলের বাড়িতে ঘরের ভিতর আটক করে রাখে।
সেখানে প্রধান শিক্ষকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন তারা। টাকা দিতে রাজি না হলে প্রধান শিক্ষক কে মারডাং করা সহ প্রান নাশের ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদান করেন। একপর্যায়ে বিবাদী মোঃ এবাদত হোসেন চঞ্চল, মোসাদ্দেকুর রহমান সাজু ও রতন ইসলাম প্রধান শিক্ষককে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে চাপ দেয়। দাবীকৃত টাকা এবং ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করলে প্রধান শিক্ষকের ভিডিও চিত্র ধারন করেন।
ওই ভিডিওতে বিবাদীরা প্রধান শিক্ষক কে শিখিয়ে দেন যে, “ডোমার বালিকা বিদ্যা নিকেতন স্কুলের সহকারী শিক্ষিকার সাথে বাদীর পরকিয়া সম্পর্ক আছে, বাদী তার সাথে কোন সম্পর্ক রাখবে না এবং তার বাড়িতে কোন দিন আসবে না।” জোর করে এই স্বীকারোক্তি নিয়ে বিবাদীরা রাত অনুমান ৩ টার দিকে প্রধান শিক্ষককে ছেড়ে দেয়।
এসময় তারা হুমকি প্রদান করেন যে, এ ব্যাপারে কাউকে কিছু জানালে বড় ক্ষতি করবে এবং মিথ্যা খবর প্রকাশ করে চাকরীচ্যুত করবে। পরে ওই স্বীকারোক্তির বিষয়টি ফেসবুকে ভাইরাল হলে মামলা দায়ের করেন প্রধান শিক্ষক।
এ ব্যাপারে সহকারী শিক্ষিকা জানান, মামলার বিবাদীরা কোনো ধরনের তথ্য প্রমান ছাড়াই আমাকে হয়রানি করছে। মিথ্যে অপবাদ দিয়ে সমাজে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করা সহ চাকুরীক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুখ জানান, মামলা তুলে নেয়ার জন্য বাদীরা আমাকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছিলো। প্রতিষ্ঠান ও পারিপার্শ্বিক কারনে আমি মামলা তুলতে রাজি হইনি। মামলার ২নং আসামী সাজুর নামে ইতিপূর্বেও ডোমারের এক কাউন্সিলর চাঁদাবাজির মামলা করেছিলো।