গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ-পুবাইল-বাড়িয়া) প্রতিদ্বন্ধিতা হবে নৌকা- ট্রাকের, সংশয় ভোটার উপস্থিতি
কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ
গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ- পুবাইল- বাড়িয়া) আসনে ভোটের মাঠে মূল প্রতিদ্বন্দি¦তা হবে আওয়ামীলীগের মনোনীত মেহের আফরোজ চুমকির নৌকা ও আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামানের ট্রাক প্রতীকের মধ্যে। ভোটের মাঠ জমে উঠেছে তাদের নির্বাচনী প্রচারনায়। তবে ভোটার উপস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এ দুই প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারনায় আচরণ বিধি মানছেননা বলে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে। ইতোমধ্যে তোরণ নির্মাণ, ভুড়িভোজের ঘটনায় চুমকির দুই সমর্থককে জরিমানা করাহয়। তাছাড়া নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গের দায়ে নৌকার প্রার্থী চুমকি ও ট্রাকের প্রার্থী আখতারুজ্জামানকে আলাদা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসীল ঘোষনার পর বিএনপি নির্বাচনে না আসার ঘোষনা দিলেও আমেজ ছিল আওয়ামীলীগের নেতাকরর্মীদের মাঝে। তারই ধারাবাহিকতায় গাজীপুর-৫(কালীগঞ্জ-পুবাইল- বাড়িয়া) আসনে আনেকেই নৌকার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। যাদের মধ্যে মুল আলোচনায় ছিলেন স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলনের নেতা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক শহীদ ময়েজউদ্দিনে কন্যা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সাবেক প্রতিমন্ত্রী টানা তিন বারের নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি ও ঢাকসুর দুইবারের জিএস একবারের ভিপি ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে একবার নির্বাচিত এমপি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান। কিন্ত আওয়ামমীলীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে নৌকার প্রার্থী হন মেহের আফরোজ চুমকি। যা মেনে নিতে পারেননি দলের একাংশের নেতাকর্মীরা। তবে আখতারুজ্জামানের নেতাকর্মীরা পুনরায় উজ্জিবিত হন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহন না করায় রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে আওয়ামীলীগ সভানেতৃী শেখ হাসিনা নিজ দল থেকে কেউ স্বতন্ত্র প্রাথী হলে দলীয়ভাবে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা না নিয়ে বরং স্বাগত জানানোর ঘোষণায়।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আখতারুজ্জামান থাকায় তার মার্কা ট্রাক ও নৌকার মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দিতা হবে বলেই আশা করছেন স্বাধারণ ভোটার ও দুই নেতার কর্মী সমর্থকরা। তবে ভোটের মাঠে বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দল না থাকায় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি একেবারে কম হওয়ার শঙ্কা ও সংশয় রয়েছে বলে মনে করছেন সচেতনমহল ও সাধারণ মানুষ। সাধারণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নেওয়াই এখন প্রার্থীদের মূল লক্ষ্য হওয়াই উচিৎ বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। এ নির্বাচনে মেহের আফরোজ চুমকি, আখতারুজ্জামানসহ মোট ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দি¦তা করছেন। অন্যরা হলেন, জাতীয়পার্টি থেকে এম এম নিয়াজ উদ্দিন লাঙ্গল মার্কা, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ থেকে সাংবাদিক আল আমিন দেওয়ান চেয়ার মার্কা, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি থেকে(তৃতীয় লিঙ্গ) উর্মি ভান্ডারী একতারা মার্কা,জাকের পার্টির এস এম মনিরুজ্জামান লাল গোলাপ ফুল মার্কা, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন স্বপন ঈগল পাখি মার্কা ও গনফোরামের প্রার্থী সোহেল মিয়া।
গাজীপুর-৫ নির্বাচনী আসনটি কালীগঞ্জ উপজেলা, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ হতে ৪২নং ওয়ার্ড, গাজীপুর সদর উপজেলার পূবাইল ইউনিয়নের ৪টি ওয়ার্ড এবং বাড়িয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত সেপ্টেম্বরের চুড়ান্ত খসড়া তালিকা অনুযায়ী কালীগঞ্জ উপজেলার ১টি পৌরসভা, ৭টি ইউনিয়ন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ হতে ৪২নং ওয়ার্ড ও বাড়িয়া ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ।
এ আসনে মুসলিম ভোটারদের পাশাপাশি নাগরী, তুমলিয়া, পূবাইল ও বাড়িয়া ইউনিয়নে প্রচুর খ্রিষ্টান ও হিন্দু ভোটার রয়েছেন। বিগত নির্বাচনে পূবাইল ও বাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এ নির্বাচনে যা দুইভাগে বিভক্ত হতে পারে। যার একভাগ মেহের আফরোজ চুমকি ও অন্যভাগ আখতারুজ্জামানের। বিগত ১৯৭৩ সালে এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির পিতা ময়েজউদ্দিন আহমেদ (আওয়ামী লীগ), ১৯৭৮সালে মোখলেছুর রহমান জিতু মিয়া (বিএনপি), ১৯৮৬ সালে হাছিউদ্দিন দেওয়ান (জাতীয় পার্টি), ১৯৮৮ সালে মোখলেছুর রহমান জিতু মিয়া (স্বতন্ত্র), ১৯৯১সালে ডাঃ আসফার হোসেন মোল্লা (আওয়ামী লীগ), ১৯৯৬সালে মোঃ আখতারউজ্জামান (আওয়ামী লীগ), ২০০১সালে এ.কে.এম ফজলুল হক মিলন (বিএনপি)। পরবর্তী ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে সাংসদ নির্বাচিত হন শহীদ ময়েজ উদ্দিনের উত্তরসুরী বর্তমান সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, এমপি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এ আসনে ১৪ দলের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে পুনরায় নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মত নির্বাচিত হন তিনি।
এ আসনটিতে জামায়াতে ইসলামীর উল্লেখ্যযোগ্য ভোটার রয়েছে। বিগত উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী গাজীপুর মহানগর সেক্রেটারী খাইরুল হাসান প্রায় ৩০হাজার ভোট পান। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই কালীগঞ্জের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী সক্রিয়। বিগত ৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মরহুম ইউসুফ আলী প্রতিদ্বন্ধিতা করেন।