এবারের বিজয়ের মাস কেমন পালন করলাম!

 

এম. আব্দুল কাইয়ুম

 

বাংলাদেশে বিজয় দিবস পালনের আমেজ উৎসব দিন দিন সংকোচিত হয়ে এসেছে। গত একযুগ ধরে ভয় আর ভীতি নিয়ে সাধারন মানুষেকে বসবাস করতে হচ্ছে। মানুষের মনে যদি ভীতি সংঞ্চার হয় তাহলে কিভাবে মানুষ বিজয় দিবস বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে সামনে আগাবে? কারণ স্বাধীনতার মাঝেও যে লুকায়িত রয়েছে একঝাঁক মৌলিক পরাধীনতার বেড়াজালের আবদ্ধ জেলখানা। মৌলিক অধিকার হরণ করার কারণে মানুষের আহাজারি, কান্না আর হয়রানি প্রতিনিয়ত শুনা যাচ্ছে। নির্বিচারে গ্রেফতার আর কারাগারে পঁচে মরা, দ্রব্যমূল্যের চরম অবনতি! মূল্যস্ফিতি আর ব্যাংক লোট করা সিন্ডিকেট এবং দূর্নীতির অসহনীয় অবস্থায় এ বারের বিজয় উদযাপন।

বিশেষ করে দেশে সংকটময় পরিস্থিতে একতরফা অগ্রহনযোগ্য নির্বাচনের আয়োজনে ব্যস্ত সরকার ও প্রসাশন। সাধারণ মানুষ অনিরাপদ বোধ করছে। সর্বপর্যায়ে দালালির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। যদি বলা হয় আপনার কি চাই? বেশ কয়েকজন অবশ্যেই পারবে আপনার সকল চাওয়া পূরণ করে দিতে। কারণ বাংলাদেশে না বলে কিছু নাই।  সেটা মহা অন্যায় হোক। কারণ সুবিধা নিয়ে করার এবং করানোর লোকের অভাব নাই এদেশে ।

আবার কিছু লোক যদি চায় আপনাকে সকল পর্যায়ে আটকাবে, হয়রানি করবে তবে আপনি যদি একটা গ্যাস আউট করেন তাহলেও বাধাঁ দিতে পারবে এবং সেটার অসংখ্য আইনি ব্যাখা, সুপারিশ করার লোকজন তৈরী থাকবে।  যদি মনে হয় নাটক সাজানো দরকার বা জনসমক্ষে প্রকাশ করা দরকার সেটাও সম্ভব। প্রকাশনার জন্য নাট্যমঞ্চ, আর্টিস্ট ও মিডিয়াও প্রস্তুত থাকে।

দেশের ভেতরে নানান দলের নানান মত। এটা থাকতে পারে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট ব্যবস্থায় এটাই নিয়ম। তবে দালালি করা, কেবল নিজের জন্য সুবিধা আদায়ে ব্যস্ত থাকা বা নিজ দেশের মানুষের মনে ভীতি সংঞ্চার করা এটা কি ধরণের নিয়ম? কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট ব্যবস্থায় এটা আছে? আপাতত বলতে পারি বাংলাদেশে আছে।

রাজনীতি এখন খেলার পুতুল হয়ে গেছে। পুতুল লোকানো যায়। পুতুল দিয়ে লুকোচুরি খেলা করা হয় এবং যায়। তাই রাজনীতির অবস্থা এখন পুতুল খেলার মত গেছে। দলের শেষ নাই। সংগঠনের অন্ত নাই।  গহীন বনের অজপাড়া গ্রামেও দেখা যায় কয়েকজন হাত উচু করে জানান দেওয়ার চেষ্টা করেছে আমরা আছি তোমাদের সাথে।  তোমরা যে দালালি করতেছ আমারও সামিল হতে চাই। কারণ আমরা বেকার ও আমার সৎ সাহস নেই। কাজ করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কষ্ঠ সাধনার সময় নাই। আমরা দ্রুত বড় হতে চাই। তাই আমরা তোমাদের সাথে আছি।

বুদ্ধিজীবি, শিক্ষক, মিডিয়া ও উন্নয়নকর্মী, উকিল, মুক্তার জজ-ব্যারিস্টার, আলেম-পীর মাসায়েকরা ৭৩ দলে ভিভক্ত হয়ে গেছে। সবার দরকার টাকা আর পদ। বেইমানরা এখন বুক উঁচাটন করে সবার সামনে বার হয়ে হাসে। সুতরাং বেশীর ভাগ জনের চেষ্টা থাকে যে, আমিও সামনে এসে কিছু একটা দেখানোর জন্য হাত উচু করে জানান দেই। প্রয়োজনে আইনের ব্যাখ্যার বদল করে দিব। অভিযোগ আছে, আদালতেও রাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া চলমান।

তবে সব মিলিয়ে যা বুঝা যায় তা হচ্ছে, দেশের জন্য মৌলিক দায়িত্ব পালনে কেউ অনড় থাকতে পারছেন না বা দেশকে বুঝার জন্য, দেশের মানুষের জন্য ভালবাসা নিবেদিত নয়। এককথায় খাঁটি দেশ-প্রেমিক খোঁজে বের করা অনেক কষ্ঠ সাধ্য হবে। এই যদি দেশের মানুষের বর্তমান পরিস্থিতি হয় তবে দেশের বারোটা বেজে গেছে এবং কেবল তেরোটা বাজার পরের স্থিতিশীলতা অবস্থা দেখার অপেক্ষায়।

একটা দেশ ধংশ হবে না, তবে মানুষ, মানুষের মৌলিক চিন্তা, শিক্ষা ও সেবা, প্রসাশন এবং অংগসংঠন বেকার হয়ে পড়বে। পরে আর কিছুই করা থাকবে না। দেশ নিয়ে গর্ব করতে হয় তবে দেশের কোমর ভেঙ্গে দিয়ে অহংকার করতে হয় না। এতে করে ভাঙ্গা কোমরে ব্যথা সারা জীবন লেগেই থাকে।

এম. আব্দুল কাইয়ুম

মানবাধিকারকর্মী

সাধারণ সম্পাদক, ফ্রাইডেজ ক্যাম্পেইন ইন্টারন্যাশনাল,

প্রতিষ্ঠাতাঃ সবজান বিবি জেকে ফাউন্ডেশন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * এম. আব্দুল কাইয়ুম * প্রতিষ্ঠাতাঃ সবজান বিবি জেকে ফাউন্ডেশন। * ফ্রাইডেজ ক্যাম্পেইন ইন্টারন্যাশনাল * মানবাধিকারকর্মী
সর্বশেষ সংবাদ