শিরোনাম
পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো স্বৈরাচারের ফিরে আসার নজির নেই : চৌদ্দগ্রামে জামায়াতে ইসলামীর যুব সম্মেলনে ডা. তাহের   » «    ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে থাকা আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতার অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা ইব্রাহিম   » «    সাজাভোগ শেষে ভারত থেকে দেশে ফিরল ১৫ বাংলাদেশি নারী-শিশু   » «    আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বারভিডা নির্বাচন   » «    আগামীকাল ২১ ডিসেম্বর বারভিডা নির্বাচন   » «   

ইবি ছাত্রলীগ সভাপতির নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও ফাঁস, থানায় জিডি 

ইবি প্রতিনিধি:

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের কন্ঠসদৃশ ৩টি নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ফাঁস হয়েছে।  শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির কন্ঠসদৃশ সেই অডিওতে সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় ও ছাত্রলীগ নেতা বিপুল হোসেনের কথা উঠে এসেছে। অডিওতে নিয়োগপ্রাপ্ত ড্রাইভার মিলনের থেকে চুক্তিকৃত ২০ লাখ টাকা নিতে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির চাপ দিতে শোনা যায়। এছাড়া শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সম্পাদকের মধ্যে নিয়োগের টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারার বিষয়ও উঠে এসেছে। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও শাখা ছাত্রলীগকে হেও প্রতিপন্ন ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে বলে দাবি করে ইবি থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। শনিবার ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আননূর যায়েদ বিপ্লব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে গত বুধবার (২২ নভেম্বর) রাতে সানজিদা আক্তার তানিয়া ‘সানজিদা চৌধুরী’ নামক ফেসবুক আইডি থেকে ৪ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের নিয়োগ বাণিজ্যের একটি অডিও পোস্ট করা হয়। এছাড়া পরের দিন ‘ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস’ নামক ফেসবুক পেজ থেকে ৩ মিনিট ১২ সেকেন্ডের দ্বিতীয় আরেকটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সবশেষ গত ২৪ নভেম্বর সানজিদা আক্তার তানিয়া নামক ওই আইডি থেকে ৬ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের তৃতীয় অডিও ফের ফাঁস হয়। অডিওর কথোপকথনে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত ‘মিলন’ নামে এক ড্রাইভারের থেকে ২০ লাখ টাকা ও অন্য এক চাকরি প্রত্যাশির কাছে ১০ লাখ টাকা দাবিসহ সভাপতি-সম্পাদকের মধ্যে নিয়োগের টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারার কথা বলতে শোনা যায়।

ভাইরাল হওয়া ৪ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের অডিওতে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির কণ্ঠসদৃশ হুবহু কথোপকথন তুলে ধরা হলো- এক মাস সময় নিয়ে ৩ তারিখের কথা বলে আজ ১৫ তারিখ অর্থাৎ দেড় মাস হয়ে গেল। কী করবে না করবে সেটা তো আমার দেখার বিষয় না। আমার টাকা দিয়ে দাও। মাগুরায় আমার এক ভাই আছে ওকে দিলে, ২৫ লাখ টাকা পেতাম আমি। বদরুল আছে, ও ২০ লাখ টাকা নিয়ে বসে ছিল। ওই ভাই টাকা নিয়ে বসেছিল, ওই যে আমার বিপুল আছে, চেয়ে নিতে যাব কেন আমি। এক একজন ২০ লাখ টাকা খুশি হয়ে দিত, এগুলো আমার মুখের কথা বলতে দেরি। ওর চাকরির জন্য হাবিবুরের চাকরি হলো না, হাবিবুর তো আমার ভাগ্নে হয়।

হেলপারের চাকরির জন্য ২০ লাখ টাকা দিতে চায়, এত ড্রাইভার! ওতো গাড়ি চালাতেই পারে না, গাড়ির টায়ার পর্যন্ত চেনে না ও, বিকেলে এসে প্রতিদিন গাড়ি চালানো শেখে, তাহলে সে লোকের তো একটা বিবেক থাকা উচিত। কয় আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। হেন-তেন সাত সতেরো, ওরতো একটা বিবেক হওয়া উচিত, উচিত না?

আমি তো একদম সাইলেন্ট হয়ে আছি, তাহলে ওতো হিসাব-নিকাশ ক্লিয়ার করবে। ও দশ-বিশ হাজার কম দিবি, আরও কম দিক আমার তো কম নিতি (নিতে) সমস্যা নেই। জয়, জয়ের (শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক) বুঝটা পেয়ে গেছে। পেয়ে যায়নি? দুইটার একটা ভাগ পেয়ে গেছে। জয় আমায় বলল ভাই, মিলন আপনার আত্মীয় মানুষ, আপনি মিলনের সঙ্গে বুঝে নেন গা।

জয় তো ওইটা থেকে আমায় কিছুই দেয়নি। আর জয় যদি এতক্ষণ না পেত তাহলে ও তো পাগলা কুত্তার মতো হয়ে যেত। জয়ের কি এখন কোনো জ্বালা আছে। ওর তো কোনো জ্বালা নেই। ওরটা ও পুরোটাই পেয়ে গেছে, মানে সিন্ডিকেটের ৩ তারিখ ৩ তারিখ বিকেলেই পেয়ে গেছে।

মানে এখন থেকে দেড় মাস হয়ে গেল, দেড় মাস আগেই নিয়ে নিছে। আর মিলনেরটা আমার ওপর, গায়ের ওপর গড়াই দিয়েছে। এবার আমার আম-ছালা সব ঢুকেছে।

এদিকে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির কন্ঠসদৃশ ৩ মিনিট ১২ সেকেন্ডের আরও একটি নিয়োগ-বাণিজ্য সংক্রান্ত অডিও পোস্ট করা হয়। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়, ইবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের নিয়োগ বাণিজ্যের ২য় এপিসোড ভাইরাল।’ ওই অডিওতে ছাত্রলীগ সভাপতিকে নিয়োগপ্রার্থীর কাছে টাকা চাইতে শোনা যায়।

এছাড়া ৬ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের ফের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তৃতীয় ওই অডিও ক্লিপের ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘জয়ের সাথে সুষ্ঠু ভাগ/বণ্টন হয় নাই। জয় পেয়েছে আরাফাত পায় নাই।’ ওই অডিওতে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারার বিষয়ও বলতে শোনা যায়।

এ বিষয়ে ড্রাইভার মিলন বলেন, ‘আমি যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছি। লেনদেনের সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই।’

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুন্সি কামরুল হাসান অনিক বলেন, ‘ওই অডিওর কোন সত্যতা নেই। সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি করার জন্য কোন এক চক্র এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। এজন্য আমি জিডি করেছি।’

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, ‘আমি ওটা শুনেছি। এটা সুপার এডিট। সামনে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোন বিরোধী শক্তি এসব ছড়িয়ে আমাদেরকে বিতর্কিত করার চক্রান্ত চালাচ্ছে।’

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি অডিওটি শোনার পর এটা নিশ্চিত যে এটা আমি না। এর পেছনে যে আছে, আমি তার বিচার চাচ্ছি। এছাড়া এর সঙ্গে যদি আমার বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা থাকে তাহলে আমি আমার পদ থেকে চলে যাব।’

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘অডিও ক্লিপটি সঠিক কিনা সেটা আমরা নিশ্চিত হয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখব। যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘যাদের অডিও ভাইরাল হয়েছে আমার মনে হয় তাদের মতামত নেওয়া উচিত। তবে আমি এইটুকু বলতে পারি লেনদেন করে এখানে কোন চাকুরি হয়নি এবং হবেও না।’

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন
বিষয়: * ইবি * ছাত্রলীগ সভাপতি
সাম্প্রতিক সংবাদ