এবারের নির্বাচনের অভিযাত্রায় রেকর্ড সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী
আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচনের অভিযাত্রা শুরু হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছেন।
নিজে ফরম কিনে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
আওয়ামী লীগের টিকিট পাওয়ার জন্য এবারে প্রায় ১০ হাজার মনোনয়ন ইচ্ছুক মনোনয়ন ফরম কিনবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে আসুক না আসুক এবার নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে থাকবেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
এবারের নির্বাচন হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন। এমনটি মনে করছেন কোন কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য উদার নীতি গ্রহণ করবে।
এটি এখন ওপেন সিক্রেট। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগের যারা মনোনয়ন পাবেন না তারা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দাঁড়াবেন। এটা মোটামুটি নিশ্চিত।
প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা থেকে একাধিক আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ নিয়ে তারা প্রস্তুতিও শুরু করেছে। মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র হবো- এমন একটি আওয়াজ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহলে এখন শোনা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের বাইরেও বিএনপি থেকে যারা বহিষ্কৃত হয়েছেন, অব্যাহতিপ্রাপ্ত হয়েছেন, তারাও এবার নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
অনেকেই তৃণমূল বিএনপিতে যাবেন, তবে সকলেই তৃণমূল বিএনপিতে যেতে চান না। কেউ কেউ নির্বাচন করতে চান স্বতন্ত্র হিসেবে। কারণ তারা মনে করেন যে নির্বাচনে তাদের একটা শক্ত অবস্থান রয়েছে, এলাকায় তাদের জনপ্রিয়তা রয়েছে। তৃণমূল বিএনপিতে গেলে বিএনপির ভোট তারা নাও পেতে পারেন।
জানা গেছে ৫০ থেকে ৭০ জন বিএনপির নেতা এবার স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শুধু বিএনপি নয়, জামায়াতের কিছু কিছু প্রার্থী যারা এলাকায় জনপ্রিয় এবং এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন, তারাও দলীয় নির্দেশ অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন অথবা দল তাদেরকে পরোক্ষভাবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য সবুজ সঙ্কেত দেবেন।
এরকম প্রার্থীর সংখ্যা ১০ থেকে ১২ জন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া এবার যেহেতু নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না তাই অনেক এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি যারা এলাকার বিভিন্ন ধরনের সমাজ কল্যাণমূলক কাজ করেন, কোন দলীয় রাজনীতির সঙ্গে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করেননি বা সম্পৃক্ত হতে পারেননি তারাও এবার নির্বাচনের দৌঁড়ে মাঠে নামতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এবারের নির্বাচনের ব্যাপারে যে কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে তার প্রধান লক্ষ্য হলো ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানো। অন্তত ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোটার যেন ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়, এটা আওয়ামী লীগ নিশ্চিত করতে চায়।
আর এই নিশ্চিত করার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কোনো বিকল্প নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা ১৪ দল জোটগত ভাবে নির্বাচন করবে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে ১৪ দলের পক্ষ থেকে জোটবদ্ধ নির্বাচনের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তবে মহাজোটের অন্যান্য শরিক দলগুলো যেমন জাতীয় পার্টি, বিকল্পধারা, তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আলাদা আলাদা অবস্থান থেকে নির্বাচন করবেন। কিন্তু জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি বা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারে জনগণের আগ্রহ নেই।
তার চেয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী, বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে ভোটারদের বেশি আগ্রহ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আর এই কারণেই একটি উন্মুক্ত নির্বাচন হতে যাচ্ছে ৭ জানুয়ারি, যে নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করবে।
যদি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের একটি বড় অংশ এবার নির্বাচনে জয়ী হন তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।