বাকেরগঞ্জের গাছিরা ব্যস্ত খেজুরের রস সংগ্রহে, চলছে রস আহরনের প্রস্তুতি
বাকেরগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি:
গ্রাম বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যের প্রতীক খেজুর গাছের রস সংগ্রহ। আবহমান কাল ধরে শীতের শুরুতে বাংলার এ শিল্পটি চলে আসছে।
সারা দেশের ন্যায় দক্ষিণ জনপদ বাকেরগঞ্জেও চলছে খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি। এখন আর আগের মত খেজুর গাছ চোখে পড়ে না। তার পরেও যার যেকয়টি গাছ আছে তা থেকে রস সংগ্রহে গাছিরা ব্যস্ত।
যারা গাছ কাটে তাদের বলা হয় গাছি।খেজুর গাছের অগ্রভাগের একটি নির্দিষ্ট অংশ চিরে বিশেষ ব্যবস্থায় ছোট কলসি (ভাড়/ঠিলে) বাঁধা হয়।ফোঁটায় ফোঁটায় রসে পূর্ণ হয় সে কলসি।তাই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতি ও কাটাসহ বিভিন্ন রকমের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাছিরা।
ছোট বড় বিভিন্ন রকমের খেজুর গাছে অত্যান্ত ঝুঁকি নিয়েই চলে রস সংগ্রহের পালা। কোমরে মোটা রশি বেঁধে গাছে ঝুলে চলে গাছ প্রস্তুুতির। খেজুর গাছ সাধারণত রস সংগ্রহ ছাড়া অন্য কোন কাজে লাগে না। অকেজো গাছকে কেটে ইট ভাটার জ্বালানী হিসেবে ব্যাবহার করা হয়।
এখন আর আগের মত রস সংগ্রহের লোক না থাকায় অনেক এলাকার খেজুর গাছ এমনিতেই কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে নতুন প্রজন্ম অনেক ছেলে – মেয়ে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের পদ্ধতি কি রকম তা জানেনা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়,আমাদের গ্রাম বাংলায় অতীতে খেজুর রসের যে সুখ্যাতি ছিল তা ক্রমেই কমে যাচ্ছে।খেজুরের রস শীতের সকালে বসে মুড়ি মিশিয়ে গ্লাস ভরে খেতে বেশ মজা লাগে।
সন্ধ্যায় রস আরো মজাদার।বেশ লোভণীয় নলেন রস ও গুড়।খেজুর গুড় বাঙালীর সংস্কৃতির একটা অঙ্গ।ক’দিন পরেই প্রতিটি ঘরে খেজুরের রস দিয়ে পিঠা পুলি পায়েস তৈরীর ধূম পড়বে।ঢেঁকি ঘরে চাল কুটার ধুম পড়ে যাবে,শোনা যাবে ঢেকির ঢক ঢক শব্দ।মুড়ি,চিড়া, পিঠা খাওয়া কৃষক পরিবার থেকে শুরু করে সবার বাছে বেশ প্রিয়।
এসব আশা নিয়ে শীত মৌসুমে গাছ কাটার কাজে গাছিদের বেশ ব্যস্ত সময় পার হয়। শীত আসা মাত্রই খেজুর গাছ ছিলানোর জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে গাছিরা। সাধারনত কার্তিক মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহের মৌসুম। এ সময় খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে রস ও গুড় বাজারে বিক্রি করে অনেকের বেশ আর্থিক সচ্ছলতা আসে।
খেজুরের রস সংগ্রহ মৌসুম এলে তাদের মুখে ফুটে ওঠে হাসি। নিজেদের প্রয়োজনীয় খাবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা বিক্রি করে যে অর্থ পায় তা দিয়ে চলে সংসার।
এখনো শীত জেঁকে না বসলেও গাছিরা গাছ কাটার জন্য দা তৈরী, ঠুঙি,দড়ি ও মাটির কলস (ভাড়/ঠিলে) কেনার কাজ সেরে নিচ্ছেন।আগের মতো খেজুর গাছ আর নেই।এরপরও গাছিরা তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।