দেশসেরা চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ হয়েও সংগীতের প্রতি রয়েছে অনুরাগ ডা. এম জহিরুল ইসলাম অচিনপুরীর
জনাব ডাক্তার এম. জহিরুল ইসলাম অচিনপুরী তিনি সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার, তিন নম্বর অলংকারী ইউনিয়নের মুন্সির বাজার এলাকার, বেতসান্দি ছনখাড়ী গাঁও গ্রামের এক মুসলিম পরিবারে ১০/১০/১৯৬৯ ইংরেজী সালে জন্ম গ্রহন করেন। তাহার পিতার নাম মোহাম্মদ ময়না মিয়া, মাতার নাম মোছাঃ সালেহা বেগম । চার ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড় ।
শিক্ষা জীবনঃ
প্রখর মেধা আর অত্যন্ত সৃতিশক্তি সম্পন্ন জনাব ডাক্তার জহিরুল ইসলাম নিজ গ্রামের মক্তবের পড়া শেষ করে বাড়ীর পূর্বে অবস্থিত বেতসান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেনীতে ভর্তি হয়ে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর,সিলেট দক্ষিন সুরমা উপজেলার জালাল পুর দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে, ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি স্কুলে অষ্টম শ্রেনীতে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে অষ্টম, নবম, এবং ১৯৮৪ ইংরেজী সালে দশম শ্রেণীর ফাইন্যাল পরিক্ষায় অংশগ্রহন করে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। তারপর তিনি সিলেট এম, সি, কলেজে ভর্তি হয়ে ১৯৮৬ ইংরেজী সালে একাদশ শ্রেনীর ফাইন্যাল পরিক্ষায় অংশগ্রহন করে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন।
তারপর ১৯৮৭ ইংরেজী সালে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে ১৯৯৪ ইংরেজী সালে M.B.B.S ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ২০০৪ ইংরেজী সালে ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি হতে চক্ষু বিষয়ে M.S ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ২০০৫ ইংরেজী সালে ভারতের তামিল নাড়ু অরবিন্দ আঁই ইনিস্টিটিউট হতে চোখের রেটিনা বিষয়ে ফেলোশীপ ডিগ্রী অর্জন করেন এবং ২০০৫ ইংরেজী সালে ইংল্যান্ড হতে ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ থালমোলজি থেকে সনদ অর্জন করেন। তিনি আবারো ২০১৪ ইংরেজী সালে ভারতের দিল্লি ভেনু আঁই ইনিস্টিটিউট হতে চোখের রেটিনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে সনদ লাভ করেন।
কর্মজীবনঃ
তিনি ১৯৯৭ ইংরেজী সালে সর্বপ্রথম দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার পদে যোগদান করে অত্যান্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্য পালন করেন।
তারপর সেখান থেকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চক্ষু বিভাগে সহকারী রেজিষ্টার পদে যোগদান করে ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ ইংরেজী পর্যন্ত অত্যান্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্য পালন করেন।
তারপর তিনি সিলেট হতে ঢাকা মেডিকেল কলেজে, মেডিকেল অফিসার পদে যোগদান করে ২০০০ ও ২০০১ ইংরেজী সাল পর্যন্ত অত্যন্ত সু-নামের সহিত দায়িত্য পালন করেন।
তারপর তিনি ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় পি জি হাসপাতালে রেসিডেন্ট পদে যোগদান করে ২০০২ ইংরেজী হতে ২০০৪ ইংরেজী পর্যন্ত দায়িত্য পালন করেন।
তারপর সেখান থেকে তিনি ২০০৫ ইংরেজী সালে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনিস্টিটিউটে মেডিকেল অফিসার পদে যোগদান করে ২০০৮ ইংরেজী সাল পর্যন্ত দায়িত্য পালন করেন।
তারপর ২০০৯ ইংরেজী হতে উক্ত মেডিকেলে রেজিষ্টার পদে যোগদান করে ২০১০ ইংরেজী পর্যন্ত দায়িত্য পালনে থাকাবস্থায় পদোন্নতি হয়ে ১১/১২/২০১৩ ইংরেজী পর্যন্ত উক্ত জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনিস্টিটিউটে জুনিয়র কনস্ট্যান্ট পদে দায়িত্য পালন করেন এবং এখানে আবারো পদোন্নতি হয়ে ২০১৪ ইংরেজী হতে সহকারী অধ্যাপক পদে অদ্যাবধি পর্যন্ত অত্যন্ত সু-নামের সহিত দায়িত্য পালন করিতেছেন। তিনি সরকারী চাকুরীর পাশাপাশি সর্বস্থরের মানুষদের আরো সেবা প্রদানের লক্ষে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সমন্নয়ে ঢাকা ধানমন্ডিতে ভিশন আঁই হসপিটাল নামে একটি চক্ষু হাসপাতাল স্থাপন করেন। সেখান থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ সেবা পাচ্ছেন।
সামাজিক সেবায়ঃ
জনাব ডাঃ জহিরুল ইসলাম ২০০৬ ইংরেজী সালে মানবিক তাড়না থেকে অসহায় মানুষদের ফ্রি চিকিৎসা প্রদানের জন্য নিজ উদ্যোগে ঢাকা কামরাঙ্গীর চর এলাকায় একটি দ্বাত্বব্য চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করে ২০১৬ ইংরেজী পর্যন্ত মানুষদের ফ্রি চিকিৎসা প্রদান করেন। পরবর্তীতে ঐ হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করে মোহাম্মদ পুর দৃষ্টি চক্ষু হাসপাতাল নামে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে তাহার ব্যক্তিগত ব্যাস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাহার স্ত্রী ঐ হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনার প্রধান দায়িত্য পালন করতেছেন।
সিলেটে চিকিৎসা সেবাদান মায়ের ভক্ত সিলেট প্রিয়ঃ জনাব ডাঃ জহিরুল ইসলাম সিলেটবাসীকে চিকিৎসা প্রদানের জন্য ২০০৮ ইংরেজী সালে রিকাবী বাজার পয়েন্টে সালেহা আঁই কেয়ার হসপিটাল নামে একটি চক্ষু সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। বর্তমানে তিনি সেখান হতে তাহার পরিচালিত সালেহা আঁই কেয়ার হসপিটাল স্থানান্তরিত করে সিলেট লামা বাজার মেরীস্টোপ ক্লিনিকের ৪র্থ তলায় সালেহা আঁই কেয়ার হসপিটাল নামে চক্ষুসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবার চক্ষু রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করিতেছেন।
গানের মানুষঃ
জনাব ডাঃ জহিরুল ইসলাম ২০০৮ ইংরেজী সাল থেকে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় গান লিখা শুরু করেন এবং নিজের কন্ঠে গাইতে থাকেন। বর্তমানে বেশ কয়েক বছর থেকে তিনি চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় নিয়মিত গান লিখে সেই গানে নিজেই সূর তুলে, আবার নিজ কন্ঠে গাইতে থাকেন। তাহার বাস্তবমূখী গান গুলো সর্বস্থরের মানুষের মনের মধ্যো স্থান করে সোস্যাল মিডিয়াতে আলোড়ন সৃষ্টি করে, তিনি মানুষের কাছে একজন চিকিৎসা সেবকের পাশাপাশি ডাঃ জহিরুল ইসলাম, অচিনপুরী নামে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন সহ বিভিন্ন মিডিয়া গুলোতে নিয়মিত গান করে যাচ্ছেন।
নামের পাশে অচিনপুরী যুক্ত করাঃ
জনাব ডাঃ জহিরুল ইসলাম তাহার নামের পাশে অচিনপুরী যুক্ত করার কারন হিসাবে বলেন আমরা মানুষজাতী এই পৃথিবীতে আসার আগে ছিলাম এক অচেনা জগতে, পৃথিবী হতে চলে যাব আরেক অচেনা জগতে, আগে পরে যেহেতু অচেনা জগত তাই আমার স্থায়ী ঠিকানা অচিনপুর এর জন্য আমি অচিনপুরী।
বিরল প্রতিভার অধিকারী
অত্যন্ত প্রখর মেধা সম্পন্ন ডাঃ জহিরুল ইসলাম আমার মতে সিলেটের বাউল সম্রাট জনাব আব্দুল করিমে পর তিনিই দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি যার গানে মানুষের মনকে এত তৃপ্তি দিতে পারে। তিনি সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার গানের পাশাপাশি বাংলাদেশের কোথাও কোন অপরাধ, দূর্নিতী, ট্রাজেডী সংঘটিত হলে তিনি সাথে সাথে গান লিখে সূর তুলে তাহার কন্ঠের মাধ্যমে প্রতিবাদ, ঘৃনা প্রদর্শন করেন। আমার মতে বাংলাদেশের মধ্যে তাহার মত এমন প্রতিভাসম্পন্ন দ্বিত্বীয় কোন লোক বর্তমানে পাওয়া যাবেনা।
মানবতার আরেক দৃষ্টান্তঃ
মানবতা প্রেমী জনাব ডাঃ জহিরুল ইসলাম, এলাকার যুবকদেরকে বিভিন্ন সামাজিক ঐক্য গড়ার মাধ্যমে ভালো কাজের পরামর্শ দেন এবং নিজ এলাকার মুন্সির বাজার সমাজ কল্যান সংস্থার কার্যক্রম দেখে সংস্থার সদস্য সহ নিজ এলাকার যুবকদের ভালো কাজে উৎসাহিত করতে শুধুমাত্র মুন্সির বাজার সমাজ কল্যান সংস্থার সদস্যদের মধ্যে যদি কোন সদস্য তাহার পরিচালিত সালেহা আই কেয়ার হসপিটালে চিকিৎসা পাবার জন্য যান, তাহলে মোট সার্ভিস চার্জ এর ৫০% মওকুফের ঘোষনা প্রদান করে এলাকার যুকদের উৎসাহিত করেন। যাহা মুন্সির বাজার এলাকার যুকদের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
পারিবারিক জীবনঃ
চিরায়িত নিয়ম অনুযায়ী তিনি ১৯৯৫ ইংরেজী সালের ১১ ই মার্চ তৎকালীন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগের প্রধান ডাক্তার জনাব নূরুল আম্বিয়া সাহেবের প্রথম মেয়ের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন পারিবারিক জীবনে তাহার দুই ছেলে রয়েছেন। তিনি অবসর সময়ে গান করতে ভালোবাসেন। তিনি সকলের নিকট দোয়া প্রার্থী।
আসুন আমরা দোয়া করি মহান আল্লাহ যেন এই অমায়িক ব্যবহারের সুন্দর মনের এই মানুষটির নেক হায়াত দান করেন এবং তাহার জীবনের অনাগত দিনগুলো সূখ শান্তিতে পরিপূর্ন করে দিয়ে মানুষের সেবাদানের মাধ্যমে সুস্থতার সাথে রাখেন।
লেখকঃ উৎফল বড়ুয়া, বাংলা এফএম , সিলেট।