হার্টের যত্নে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ জরুরি: গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান ‘প্রজ্ঞা’র ওয়েবিনারে বক্তারা
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
“বিশ্বে প্রতিবছর ২ কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে, যার অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপ। হৃদরোগজনিত মৃত্যুর ৮০ ভাগ প্রতিরোধযোগ্য হলেও বাংলাদেশে হৃদরোগ ঝুঁকি এবং হৃদরোগজনিত মৃত্যু ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, তৃণমূল পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং এখাতে সরকারের বাজেট বৃদ্ধি করার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদরোগ ঝুঁকি অনেকাংশেই মোকাবেলা করা সম্ভব। আর তাই হার্টের যত্নে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ জরুরি।” বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষ্যে আজ শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩) গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত “বাংলাদেশে হৃদরোগ ঝুঁকি এবং করণীয়” শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন জনস্বাস্থ্য ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞগণ।
এই আয়োজনে সহযোগিতা প্রদান করেছে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)।
ওয়েবিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রতি ৪ জনে ১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। ডব্লিউএইচও এর গ্লোবাল রিপোর্ট অন হাইপারটেনশন ২০২৩ অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লক্ষ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করে, যার ৫৪ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের (৩০-৭৯ বছর বয়সি) অর্ধেকই জানে না যে তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসা সেবা গ্রহণের হার খুবই কম, মাত্র ৩৮ শতাংশ। নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে মাত্র ১৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ৭ জনে ১ জন।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, “অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ। এটি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. ফারজানা আক্তার ডরিন বলেন, “বিনামূল্যে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ প্রদানের পাশাপাশি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।”
গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর- জিএইচএআই এর বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, “হৃদরোগ প্রতিরোধে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ প্রদানের সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি।”
এছাড়াও ভার্চুয়ালী যুক্ত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, ‘৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের সংগঠক, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, জাতীয় কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, সাপ্তাহিক নতুন কথা’র বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান।
ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদরোগের প্রকোপ ও করণীয় সম্পর্কে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রজ্ঞার হেড অব প্রোগ্রামস মো. হাসান শাহরিয়ার।
ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন প্রজ্ঞা’র কোঅর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ এই ওয়েবিনারে অংশ নেন।