সংখ্যালঘু পরিবারকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ করার কথা বলে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে যুব মহিলা লীগ নেত্রী সালেহার বিরুদ্ধে

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে এক সংখ্যালঘুকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ করে দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে যুব মহিলা লীগ নেত্রী সালেহার বিরুদ্ধে। ওই মহিলা নেত্রী মানিকগঞ্জ জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহবায়ক ও সিংগাইর উপজেলা যুব মহিলালীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক।

এছাড়াও তিনি সদ্য শেষ হওয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সরকারি অফিসে তদবীর বানিজ্যসহ রয়েছে ব্যাপক অভিযোগ। তিনি মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের আস্থাভাজন ও খুব কাছের। আর এই সুবাদে উপজেলার ধল্লা এলাকার এক সংখ্যালঘু পরিবারকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ করে দেয়ার কথা বলে ৫ লক্ষ টাকা চুক্তি করেন। হাতিয়ে নেন ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা।

সংশ্লিষ্টসূত্রে জানাযায়, ঢাকায় কর্মরত বেসরকারি টেলিভিশনের এক সাংবাদিকের আত্মীয়ের কাছ থেকে এই টাকা নেওয়ার ঘটনাটি ঘটে। ওই সাংবাদিকের সঙ্গে জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহবায়ক সালেহা জাহানের ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এ ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসে। এ ঘটনা সিংগাইরে টক অব দ্যা টাউনে রুপ নেয়।

ভুক্তভোগী পরিবার জানান, সালেহা জাহান এমপি মমতাজ বেগমের খুব আস্থাভাজন হওয়ায় ভুক্তভোগী পরিবারকে টাকা ফেরত দিতে নানা টালবাহানা করেন। গত বৃহস্পতিবার সালেহা ও তার স্বামী শ্রমিক লীগের সভাপতিসহ ৩/৪ জন অজ্ঞাত পরিচয়ের যুবক নিয়ে ভুক্তভোগীর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখান। সাংবাদিকদের কাছে এ ব্যাপারে কোনো কথা না বলতেও হুমকি ধমকি দেন।

যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহবায়ক সালেহা জাহান টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও তিনি দাবি করেন, মুক্তিযোদ্ধা সনদ করা সম্ভব না হওয়ায় তার টাকা ফেরতও দেয়া হয়েছে। কিন্তু ভুক্তভোগী পরিবার বলেন, তাদের এখনও ৭০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের কন্যা গীতা সরকার জানান, সে উপজেলার বায়রা এলাকায় তার বাড়ী। গত ২০২১ সালে উপজেলার ধল্লা এলাকার জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহবায়ক ও উপজেলা যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সালেহা জাহানের প্রলোভনে তার বাবাকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর জন্য ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেন।

সোমবার সকালে গীতা সরকারের সঙ্গে কথা হলে আরও জানান, স্কুল ও কলেজে অধ্যয়নের ফাঁকে তিনি টিউশনির জমানো টাকা, বড় বোনের কাছ থেকে ধার করা দেড় লাখ টাকা এবং স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে সালেহা জাহানকে টাকা দেন। গীতা সরকার আরো জানান, তার ব্যক্তিগত স্থানীয় ব্যাংকের হিসাব নম্বর থেকে সালেহা জাহানের ব্যাংক হিসাব নম্বরে আরটিজিএসের মাধ্যমে ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সাড়ে তিন লাখ টাকা দেন। আর নগদে দেন ২০ হাজার টাকা।

মোট পাঁচ লাখ টাকা চুক্তিতে মাত্র এক মাসের মধ্যে সালেহা তার বেহালা বাদক বাবা গুরু চন্দ্র সরকারকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানিয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা নেন। ২ বছর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানানো তো দূরের কথা উল্টো চাপের মুখে রেখেছেন সালেহা জাহান। ওই ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া গীতা জানান, তার ৭০ বছর বয়সি বাবা এখনো বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বেহালা বাজিয় সংসার চালাতেন। সালেহা জাহানের ফাঁদে পড়ে এমন কাজটি করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় পরিবারের মান ইজ্জতের হানি হয়েছে বলেও জানান।

মানিকগঞ্জ জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহবায়ক সালেহা জাহানের এমন অপকর্মের দায় নিতে নারাজ খোদ দলটির জেলা আহবায়ক রোমেজা আক্তার খান মাহিন। তিনি বলেন, বিষয়টি কেন্দ্রীয় সভানেত্রীকে অবহিত করেছি। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানালেন। মুক্তিযোদ্ধার সনদ বানানোর কথা বলে টাকা নেওয়া একটি জঘন্যতম ও নিন্দনীয় কাজ বলে মনে করেন সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. সায়েদুল ইসলাম। তিনি জানান, সালেহা জাহানের এ ধরনের কর্মকাণ্ড দলের সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * ঘুষ * যুব মহিলা লীগ নেত্রী সালেহা * সংখ্যালঘু
সর্বশেষ সংবাদ