চট্টগ্রাম বন্দরে ১১ মিটার ট্র্যাপের জাহাজ ভেড়ানোর আশাবাদ বন্দর চেয়ারম্যান
চট্টগ্রাম ব্যুরো:
আগামী বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে ১১ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেছেন, কর্ণফুলী নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে। দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন এই নদীকে রক্ষা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ অর্জনসহ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চট্টগ্রাম বন্দরের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে বদ্ধপরিকর বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য স্মার্ট বন্দর দরকার। আর স্মার্ট বন্দরের পথে চট্টগ্রাম বন্দর অনেকদূর এগিয়ে গেছে।
গতকাল চট্টগ্রামে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। গত মে মাসে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের পর গতকালই প্রথম তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। মতবিনিময়কালে তিনি বন্দরের সার্বিক অবস্থা, বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরেন। সভায় বন্দরের সদস্য মো. শহীদুল আলম, পরিচালক মো. মমিনুর রশিদ ও সচিব মো. ওমর ফারুক উপস্থিত ছিলেন।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী দিকনির্দেশনায়, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সমন্বয়ের মাধ্যমে বন্দর কর্তৃপক্ষ দেশের সমুদ্রপথে বহির্বাণিজ্য সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রধান গেটওয়ে হিসেবে কাজ করছে। দেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য চাহিদা, আঞ্চলিক যোগাযোগের ভৌগোলিক অবস্থানগত গুরুত্ব এবং বন্দরকেন্দ্রিক উন্নয়নচিন্তা চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের ধারাবাহিক উন্নয়নে তৎপর বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বহুল প্রত্যাশিত বে টার্মিনাল প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, আগামী মাসের মধ্যেই বে টার্মিনালের মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে। এরপরই আগামী অক্টোবর মাসে বে টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। বে টার্মিনালের ব্রেক ওয়াটারের ডিজাইনের কাজ চলছে। ১২–১৩ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ২৪ ঘণ্টা অপারেশন করা সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি বিনিয়োগের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, অনেক দেশই আগ্রহ দেখাচ্ছে। আগামী বছর পাঁচেকের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঁচ থেকে সাত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, যত বেশি বিনিয়োগ হবে ততই কর্মসংস্থান হবে। প্রযুক্তি বিনিময় হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়বে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় প্রকল্প কঙবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনালের অগ্রগতি তুলে ধরে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, মাতারবাড়ী টার্মিনালের নির্মাণকাজের ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র মূল্যায়নের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কার্যাদেশ দেওয়ার পরই নির্মাণকাজ শুরু হবে। ২০২৬ সালে এই টার্মিনাল চালু হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাতারবাড়ী টার্মিনালে ১০-১২ হাজার কন্টেনার নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারবে। বড় জাহাজে পণ্য আনা হলে ভোক্তা পর্যায়ে সুবিধা পাবে।
তিনি বলেন, ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো, ইউরোপের সঙ্গে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণ, বহির্নোঙরের আওতা বৃদ্ধি, ভিটিএমআইএস, ডিজিটালাইজেশন, কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের অত্যাধুনিক কী সাইড গ্যান্ট্রি ক্রেন সংযোজনের মতো উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কোভিড অতিমারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির প্রত্যাশিত গতিকে মন্থর করলেও চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে তেমন প্রভাব ফেলেনি, বরং কার্গো হ্যান্ডলিং এবং আয় বেড়েছে। জুন মাসে এ বন্দর দিয়ে ৫০ শতাংশ রপ্তানি বেড়েছে, যার ৮৪ শতাংশ তৈরি পোশাক।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বন্দরের কাজ সেবা দেওয়া। চট্টগ্রাম বন্দরে দিন নেই, রাত নেই, শুক্রবার ছুটির দিন নেই। ২৪ ঘণ্টা সাত দিন সচল থাকে। আমাদের বন্দর সারা বিশ্বে সমাদৃত। আগামী ডিসেম্বরে বন্দরের নতুন কেমিক্যাল শেড চালুসহ দৃশ্যমান বেশ কিছু উন্নয়ন ঘটবে বলেও সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে।