দিরাই পৌরসভা সড়ক যেন নরকপথ

স্টাফ রিপোর্টার:
হাওর-ভাটির পৌরসভা দিরাইয়ের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দা চলাচল কষ্টে পড়েছেন। পৌরসভার বেশিরভাগ সড়ক খানাখন্দে ভরে গেছে। অনেক সড়কেই রিক্সা বা অটোতে চলা তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাই কষ্টকর হয়ে ওঠেছে। শহরে ঢোকার মুখে বাসস্টেশনে জায়গার চেয়ে যানবাহন বেশি হওয়ায় যানজট লেগেই থাকে।
পৌর মেয়র বিশ্বজিৎ রায় সড়কের ভাঙাচোর অবস্থার কথা স্বীকার করে বললেন, আমি ঋণগ্রস্ত পৌরসভার দায়িত্ব নিয়েছি। ঋণের জন্য অনেক বড় বড় প্রকল্প থেকে পৌরসভা বঞ্চিত হয়েছে। এখন ভালোর দিকে যাচ্ছে পৌরসভা।
দিরাই পৌর শহরে ঢোকার মুখে থাকা বাসস্টেশনে যে পরিমাণ জায়গা আছে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ বাস রাখায় সড়ক বন্ধ হয়ে ভোগান্তির বিষয়টি বহুদিনের। এটি নিরসনে কোন উদ্যোগও নেই স্থানীয় প্রশাসন কিংবা পৌরসভার। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকামুখী বাসের কারণে এখানে যানজট তৈরি হচ্ছে প্রতিদিনই।
স্থানীয়রা বললেন, ২০২২ সালের বন্যার পর থেকে উল্লেখ করার মত কাজ হয়নি পৌর এলাকার সড়কে। এ কারণে সড়কে সড়কে চলাচলে এখন কষ্টে রয়েছেন পৌরবাসী। দিরাই বাজারের দুই গলির অবস্থা একেবারে নাজুক। না দেখলে কে বুঝবেন না পৌর এলাকায় এমন ভোগান্তির সড়ক আছে। বাসস্টেশন থেকে বাজারমুখী সড়কের অবস্থাও বেহাল। বাজার থেকে চন্ডিপুরমুখী সড়কে জরুরি কাজ ছাড়া কেউ যান না।
এই সড়কের স্থানে স্থানে গর্তে ভরে গেছে। বাসস্টেশন থেকে শাল্লা সড়কের ব্রীজ পর্যন্ত সড়কেরও বেহাল অবস্থা। বালুর মাঠের সড়কেও চলাচল করার মত নয়। কয়েকটি ব্যস্ততম সড়ক আছে, যেখানে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকছে। এই সড়কগুলো দিয়ে চলাচল করতে চান না কেউই।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পোস্ট অফিস রোডে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। হারানপুর রোডেরও একই অবস্থা। খানাখন্দে ভরা এই সড়কেও জলাবদ্ধতা লেগেই আছে। বাাজারের কাপড়ের গলির অবস্থাও খারাপ হয়ে আছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ধনীর রায় বললেন, গলি দিয়ে চলাচলের সময় ঝাঁকুনি খেয়ে অনেকে প্রয়াত রাজনীতিক এলাকার সাবেক সাংসদ সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের স্মৃতি আওড়ান। বলেন, ‘তিনি বঁচে থাকলে হয়তো এমন কষ্ট করতে হতো না দিরাইবাসীকে।’
শহরের দোওজ এলাকার এই বাসিন্দা বললেন, কয়েকবার এলাকার সড়কের মাপজোক নিয়েছে। কাজ শুরু হতে দেখি না। মানুষের ভোগান্তিও দূর হয় না। এই এলাকার আরেক বাসিন্দা পঙ্কজ কান্তি রায় বললেন, কোন কোন সড়কের পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই জমে পানি। সড়কে চলাচলে সমস্যা তৈরি হয়। যানবাহন চলাচলের সময় আশপাশের দোকানেও ছিটকে পড়ে পানি। তার মতে দিরাই পৌরসভার অন্যতম সমস্যা বাসস্টেশনের জ্যাম।
এই জ্যাম দূর করা যেত, দিরাই থেকে ঢাকাগামী বাসের স্টোপেজ বিকল্প স্ট্যান্ড হবার আগে পর্যন্ত কালনী ব্রীজের উপরে নিয়ে যাওয়া হলে। শহরের সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত সড়কের বাসিন্দা আব্দুজ জাহির বললেন, কিছু কিছু সড়কে বয়স্করা রিক্সায় গেলেও কোমর ভাঙার মত অবস্থা হয়েছে। শিশুরা গেলে ভয়ে চিৎকার করে কান্না করে।
হারনপুর রোড়ের রাহী ভেরাইটিজ স্টোরের পাবেল আহমদ বললেন,  হারনপুর মজলিশপুর সড়কের কিছু অংশ বিপজ্জনক হয়ে ওঠেছে। প্রায়ই সড়কে দুর্ঘটনাও ঘটছে। মধ্যবাজারের বিপ্লব কান্তি দাস বললেন, বাজারের এই গলিতে কাপড়ের দোকান বেশি থাকায় মহিলাদের আনাগোনা বেশি, কিন্তু বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের অভাবে তাদেরকে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
দিরাই পৌরসভার মেয়র বিশ্বজিৎ রায় বললেন, ২০২০ সালের নির্বাচনে এই পৌরসভায় প্রায় ২৩ হাজার ভোটার ছিলেন। এখন ভোটার আরও বেড়েছে। জনসংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম। বিদ্যুৎ বিলসহ পৌরসভা নানাভাবে ঋণগ্রস্ত ছিল। এসব কারণে অনেক প্রকল্পও আমাদের হাতছাড়া হয়েছে। ক্রমান্বয়ে এসব ক্রাইসিস মেটানো হয়েছে।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিশেষ কিছু প্রকল্পের অনুমোদন হবে। তখন অনেক সড়কেই কাজ হবে। চণ্ডিপুরমুখী সড়কের কাজ দ্রুতই শুরু হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। পৌরসভার সামনের সড়কেরও কাজ শুরু হয়েছে। তিনি জানালেন, শহরে ঢোকার মুখের বাসস্টোপেজ একটি বড় সমস্যা তারা বুঝতে পারছেন, কিন্তু জমি কিনে পৌরসভার পক্ষে বাসস্টেশন করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন সভায় তিনি এই বিষয়ে উর্ধ্বতনদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। আশা করছেন, এর সমাধানও হবে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * উর্ধ্বতনদের দৃষ্টি আকর্ষণ * পৌরসভা সড়ক যেন নরকপথ * প্রকল্পের অনুমোদন
সর্বশেষ সংবাদ