চমেক শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন তিন হোস্টেল নির্মিত হচ্ছে

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) শিক্ষার্থীদের জন্য হচ্ছে নতুন তিনটি হোস্টেল ভবন। এর মাঝে ছাত্রদের জন্য ১৫ তলা বিশিষ্ট একটি ছাত্রাবাস এবং ছাত্রীদের জন্য ৮ তলা বিশিষ্ট দুটি ছাত্রী নিবাস। চট্টেশ্বরী সড়কে বিদ্যমান প্রধান ছাত্রাবাসের পাশে নতুন ছাত্রাবাস এবং স্টাফ কোয়ার্টার সংলগ্ন এলাকায় নতুন ছাত্রীনিবাস দুটি নির্মাণ করা হবে।

হোস্টেল ভবন নির্মাণের এই প্রকল্প ইতোমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদনও পেয়েছে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (এইচইডি) এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করবে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি অর্থবছরেই এই তিন হোস্টেল ভবন নির্মাণ কাজ শুরুর কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মনি কুমার শর্মা।
আর নির্মাণ কাজ শেষে এই তিন হোস্টেল চালু হলে কলেজের হাজারেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী আবাসন সুবিধা পাবে বলে জানিয়েছেন চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার। এইচইডি সূত্রে জানা গেছে, দেশের দশটি সরকারি মেডিকেল কলেজে আধুনিক সুবিধাসম্বলিত ১৯টি হোস্টেল ভবন নির্মাণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার।
তবে করোনা পরিস্থিতির পর কিছুটা কাটছাঁট করে ৫টি মেডিকেল কলেজে ৯টি হোস্টেল ভবন নির্মাণের প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) তিনটি হোস্টেল ভবনও রয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ তলা ছাত্রাবাসে ৫৬০ জন ছাত্র আবাসন সুবিধা পাবে। আর ৮ তলা ছাত্রীনিবাসের প্রতিটিতে ২৫২ জন করে ৫০৪ জন ছাত্রী থাকার সুযোগ পাবে। প্রতিটি ভবনে অন্তত দুটি করে লিফট সুবিধা থাকবে।

১৫ তলা ভিতের ১৫ তলা বিশিষ্ট ছাত্রাবাস নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় একশ কোটি টাকার কিছু বেশি। আর ৮ তলা ভিতের ৮ তলা ভবনের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা। তবে পুরনো দরে এই ব্যয় প্রাক্কলন করায় এখন নতুন দরে সমন্বয়ের কাজ চলছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ২০২২ সালে সরকার নতুন দর নির্ধারণ করেছে। এর ফলে অনুমোদিত এ প্রকল্প কিছুটা রিভাইজড হচ্ছে।
প্রাক্কলন ব্যয় সমন্বয়ের কাজ শেষ হলে প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা যাবে জানিয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মনি কুমার শর্মা বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই এ প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া শেষ করা যাবে বলে আমরা আশা করছি। আর সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি অর্থবছরের মধ্যেই তিন হোস্টেলের নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জানান এইচইডি চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী।

চমেক সূত্রে জানা গেছে, কলেজের ছাত্রদের জন্য চট্টেশ্বরী সড়কে একটি ছাত্রাবাস রয়েছে। যা প্রধান ছাত্রাবাস হিসেবে পরিচিত। চারতলা বিশিষ্ট এই ছাত্রাবাসের ৫টি ব্লকে মোট ৪৫৬ জন ছাত্র থাকার সুবিধা রয়েছে। ছাত্রাবাসটির একটি ব্লক এরই মাঝে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি চারটি ব্লকও প্রায় জরাজীর্ণ অবস্থায়।

অন্যদিকে, ছাত্রীদের জন্য রয়েছে চার ব্লকের একটি ছাত্রীনিবাস। যা কান্তা ছাত্রীনিবাস হিসেবে পরিচিত। স্টাফ কোয়ার্টারের পার্শ্ববর্তী এর অবস্থান। ছাত্রীনিবাসটির দুটি ব্লক চারতলা বিশিষ্ট। আর দুটি ব্লক ৬তলা। সবমিলিয়ে ছাত্রীনিবাসটিতে ৬১১ জন ছাত্রীর থাকার সুবিধা রয়েছে। প্রধান ছাত্রাবাস ও কান্তা ছাত্রীনিবাস মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরুকালীন স্থাপন করা হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। যদিও কান্তা ছাত্রীনিবাসের দুটি ব্লক স্বাধীনতা পরবর্তী নির্মাণ করা হয় বলেও চমেক সূত্রে জানা গেছে।

বিদ্যমান প্রধান ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাসের জরাজীর্ণ অবস্থা তুলে ধরে নতুন ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস নির্মাণের প্রস্তাবনা দিয়ে ২০১৯ সালের ২১ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দেয় চমেক কর্তৃপক্ষ। তৎকালীন চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের স্বাক্ষরে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। ৫৮০ জনের আবাসন সুবিধার ছাত্রাবাস এবং ৬০০ জন ছাত্রীর থাকার সুযোগ সম্বলিত নতুন ছাত্রীনিবাস নির্মাণের প্রস্তাবনা দেয়া হয় চিঠিতে।

পোস্টগ্রাজুয়েট পর্যায়ের ছাত্র–ছাত্রীসহ কলেজে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে জানিয়ে চমেকের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার বলেন, বিদ্যমান ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাসের অধিকাংশ ব্লক জরাজীর্ণ। যে কোনও সময় দুর্ঘটনারও আশঙ্কা রয়েছে। তাই নতুন ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস ভবন নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। এরইমাঝে প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। আমরা জায়গাও নির্ধারণ করে দিয়েছি। অল্প সময়ের মধ্যেই নতুন হোস্টেল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ * নতুন হোস্টেল ভবন নির্মাণ * প্রধান ছাত্রাবাস
সর্বশেষ সংবাদ