শরীয়তপুর পৌরসভায় বাজেট পেশ: টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করার অঙ্গিকার করলেন মেয়র
জাবেদ শেখ, শরীয়তপুর প্রতিনিধিঃ
শরীয়তপুর পৌরসভায় বাজেট পেশ অনুষ্ঠানর আয়োজন করা হয়েছে। এবার ২০২৩-২০২৪ অর্থ বৎসরের ৬২৮৪৮৬১২২.৪৮ (বাষট্টি কোটি চৌরাশি লক্ষ ছিয়াশি হাজার একশত বাইশ টাকা আটচল্লিশ পয়সা) বাজেট ঘোষনা করা হয়।
এবার অবহেলিত পরিচ্ছন্ন কর্মীদের আবাসনের দুরবস্থা দূর হবে। থাকছে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য ৭ তলা ভবণ, তাঁদের উঠা-নামার জন্য থাকবে লিফট। হবে শিশু-পার্ক, অত্যাধুনিক সুপার মার্কেট, আধুনিক বর্জ্য পরিশোধনাগার সহ পৌরসভার সর্বিক উন্নয়ন টেকসই করার অন্যতম লক্ষে কাজ করবেন শরীয়তপুরের পৌর মেয়র।
২৪ জুলাই সোমবার সকাল ১১ টায় পৌরসভা হল রুমে বাজেট পেশ করেন পৌর মেয়র এ্যাড. পারভেজ রহমান (জন)।
এসময় তিনি আমন্ত্রিত উপস্থিত অতিথিদের সামনে বলেন, পৌরসভার সম্মানিত নাগরিকগনের নিকট বিনীত অনুরোধ থাকবে প্রাকৃতিক জলাধার ও ড্রেনের ময়লা আবর্জনা ফেলে ভরাট না করার জন্য। ড্রেন নির্মানের মাধ্যমে আমরা শহরের জলাবদ্ধতা দূর করার চেষ্টা করবো। প্রিয় পৌরবাসী, RUTDP প্রকল্প: উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক চলমান প্রক্রিয়া। টেকসই উন্নয়নই আমাদের অন্যতম লক্ষ্য থাকবে। শরীয়তপুর পৌরসভায় চলমান MGSP প্রকল্প যার বর্তমান নাম Resilient Urban and Territorial Development Project (RUTDP) ১ম ফেজ সমাপ্ত হয়েছে। দ্বিতীয় ফেজের কাজ শুরু হয়েছে। এ পর্যায়ে আমরা আশা করি। ২৫০-৩০০ কোটি টাকার কাজ করতে পারবো এবং পৌরসভা একটি আধুনিক পৌরসভায় রুপান্তরে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।
গুরুত্বপূর্ন নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২০
পৌরসভায় চলমান গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো প্রকল্পের মাধ্যমে ২৭টি রাস্তা ও ড্রেন বর্তমানে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পরবর্তীতে আমরা উক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে আরো উন্নয়ন কাজ সম্পাদনের জন্য বরাদ্দ পাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখছি।
আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার ডেলিভারী প্রজেক্ট-২০:
আমরা ইতোমধ্যে আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার প্রজেক্ট এ অর্ন্তভূক্ত হয়েছি। উক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে একটি নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং একটি নগর মাতৃসদন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য দুইটি দানশীল পরিবার বিনামূল্যে পৌরসভাকে জমি দান করেছেন। আমি উভয় পরিবারের এই মহতী কাজে সহযোগিতা করার জন্য পৌর পরিষদের পক্ষ থেকে আস্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ভবন দুটির টেন্ডার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। খুব শীঘ্রই নির্মাণ কাজ শুরু হবে। বর্তমানে প্রকল্প দপ্তর কর্তৃক নিয়োগকৃত এনজিওর মাধ্যমেই ৩টি কেন্দ্রে এ সংক্রান্ত সেবাদান চলমান রয়েছে। অতি গরীব ও দুস্থদের জন্য ১৩৬৭ পরিবারের রেড কার্ড প্রদান করা হয়েছে। যার মাধ্যমে তারা বিনামূল্যে সকল ধরনের চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। এছাড়া নগর মাতৃসদন ও নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এ যাবৎ প্রায় ২০ হাজার জনকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। ১৬৭ টি সিজারিয়ান, ৪৪ টি নরমাল ডেলিভারী সেবা প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে ভ্রাম্যমান চিকিৎসা ক্যাম্পেইন করে প্রায় এক হাজার দুইশত রোগীকে সেবা প্রদান করা হয়েছে।
শরীয়তপুর পৌরসভা ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে DPP প্রস্তুত পূর্বক জমা প্রদান করা হলে একান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রায় ৪৭.৫০ কোটি টাকার DPP অনুমোদন হয়েছে। উক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৩১ টি রাস্তা ও ড্রেন এবং প্রায় ২০০ স্ট্রিট লাইট ও ৯টি কালভটি নির্মাণ সম্পন্ন কাজ হবে। স্থানীয় সরকার COVID-19 প্রতিক্রিয়া ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প (LGCRRP): LGCRRP প্রকল্পের কাজ আমাদের পৌরসভায় শুরু হয়েছে। ২০২৩-২০১৪ অর্থ বৎসরে উক্ত প্রকল্প থেকে রাস্তা ও ড্রেন উন্নয়ন সহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য এর বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য প্রায় ২.০০ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন হবে। আগামী তিন বছরে প্রায় ৫.৫০ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন হবে।
আধুনিক বর্জ্য পরিশোধনাগার প্ল্যান্ট নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে বলেন,ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নের জন্য আধুনিক বর্জ্য পরিশোধনাগার প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য অত্র পৌরসভা অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। প্রায় ৫০ (পঞ্চাশ) কোটি টাকা বরাদ্দের উক্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শরীয়তপুর পৌরসভা একটি পরিচ্ছন্ন শহর হিসাবে গড়ে উঠবে।
পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বাসভবন নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশনা মোতাবেক শরীয়তপুর পৌর এলাকার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য ৭ তলা বিশিষ্ঠ আবাসিক ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। উক্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পৌর এলাকার অবহেলিত পরিচ্ছন্ন কর্মীদের আবাসনের দুরবস্থা দূর হবে।
ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্যান্ট স্থাপন সম্পর্কে বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রায় ৫০ (পঞ্চাশ) কোটি টাকার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। উক্ত প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হলে পৌর এলাকার নাগরিকগনের পানির সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।
কবরস্থান নির্মাণ:
শরীয়তপুর শহরে একটি পৌরসভা কেন্দ্রীয় সুন্দর কবরস্থান নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। পালং বাস স্ট্যান্ডের নিকট উক্ত কবরস্থান নির্মাণের জন্য জনাব মোঃ ফারুক আহম্মেদ তালুকদার গং জায়গা প্রদান করেছেন। উক্ত জায়গায় পৌরসভার মাধ্যমে বালু ভড়াটসহ উন্নয়ন কাজ শুরু করা হয়েছে। উক্ত কবরস্থান নির্মাণের জন্য শরীয়তপুরের সুযোগ্য জেলা প্রশাসক জনাব পারভেজ হাসান মহোদয় ও সহায়তা করেছেন এবং পরবর্তীতে আরো সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেছেন।
কবর স্থানের উক্ত জায়গা প্রদানের জন্য মোঃ ফারুক আহম্মেদ তালুকদার ও তার পরিবারের প্রতি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ শহরকে সুন্দর নান্দনিক শহর হিসাবে গড়ে তোলার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিক নিম্নোক্ত কাজ সমূহ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহন করবো।
পৌর শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য পরিকল্পিত ড্রেন নির্মান ও বিভিন্ন স্থানে পানি অপসারনের পাইলবসানোর ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা।
পালং বাজারে পৌরসভার নিজস্ব জায়গায় একটি অত্যাধুনিক সুপার মার্কেট নির্মানের পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। শহরে রাস্তার বাতির বিষয়টি নিশ্চিত করনের জন্য ৪.০০ (চার) কোটি টাকার সোলার ট্রীট লাইটের ডিপিপি তৈরী করে মন্ত্রনালয়ে প্রেরন করা হয়েছে। আশা করি এ অর্থ বৎসরে শহরে সোলার লাইট স্থাপন করা সম্ভব হবে। শরীয়তপুর শহরে বিনোদনের জন্য একটি শিশু পার্ক উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে।
বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখার জন্য ৪টি পানি সরবরাহ পাম্প রি-জেনারেটিং করা হয়েছে যে, কারনে পানি সরবরাহের গতি আরো সচল হয়েছে। মনোহর বাজারে নতুন পাম্প চালু করা হয়েছে। পৌরসভার সকল রাস্তায় পর্যায়ক্রমে বৃক্ষ রোপনের মাধ্যমে সবুজায়নের পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। দরিদ্র মহিলাদের আত্ম কর্মসংস্থানের জন্য সেলাই মেশিন প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
২০২০-২০২৪ অর্থ বৎসরে বাজেটে নতুন কোন করারোপ না করে একটি সুষম বাজেট তৈরী করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা শেষে পৌর মেয়র জন, পৌর আঙ্গিনায় গাছ লাগিয়ে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি উদ্ভোধন করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, শরীয়তপুর পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ এনামুল হক,হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন,নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আঃ রাজ্জাক শিকদার,সদর উপজেলা কমান্ডার আঃ আজিজ শিকদার, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান (সদর) ও বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সদস্য ফাতেমা আক্তার শিল্পি, জেলা পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান -২ আসমা আক্তার, আংগারিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক ও টিএলসিসি’র সদস্য শিউলি রায়, টিএলসিসি’র সদস্য জাহানারা আক্তার ঢলি, পৌরসভা ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোয়াজ্জেম হোসেন ঢালী, পৌরসভা ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পলাশ খান,পৌর ৭ নং ওয়ার্ডে আমির শিকদার প্রমুখ, সহ জেলার অনলাইন, প্রিন্ট, এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদিকবৃন্দ।