ডিম বিক্রি তার পেশা একজন মুনসেপ আলির গল্প

রাজু রহমান, যশোর প্রতিনিধি:

বয়সটা একেবারে কম নয়। ১০০  ছুঁই ছুঁই। চোখের আলো অনেকটা কমে এসেছে। খুব ভালো দেখতে পান না,  মাঝেমধ্যে চোখে ঝাপসা দেখেন। শুনতে পান সবকিছু। বয়সের ভারে অনেকটা নুইয়ে পড়েছেন। ধীর গতিতে পথ হাঁটেন। মাঝে মাঝে উচ্চস্বরে হাঁক মারেন “এই ডিম রাখবেন ডিম”।

 বলছি ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের বকলে গ্রামের মুনসেপ আলীর কথা। দুই ছেলে, দুই মেয়ে চার সন্তানের জনক মুনসেপ আলি। অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজের রোজগার নিজেই করছেন তিনি। তাইতো ৯৫ বছর বয়সেও  তিনি থেমে থাকেননি।গ্রাম থেকে ক্রয় করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রাম থেকে শহরে ডিম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।
মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে মুনসেপ আলি তার জীবনের অনেক কথাই বললেন আমাদের। ছোটবেলা থেকে অনেক কঠোর পরিশ্রম করেছেন তিনি, লাঙ্গল চালিয়েছেন, মাছ ধরে বিক্রি করেছেন, দুধ বিক্রি করেছেন, গরুর গাড়ি চালিয়েছেন। প্রায় ৩০ বছর ধরে ডিম বিক্রি পেশার সাথে জড়িয়ে আছেন তিনি। এই বার্ধক্য বয়সে এত কঠোর পরিশ্রমে সন্তানেরা বাধ সাধলেও তিনি কর্ম করতে চান শেষ বয়স পর্যন্ত।
মুনসেপ আলী জানান, গ্রামাঞ্চল থেকে হাঁস ও দেশি মুরগির ডিম ক্রয় করেন তিনি। তারপর দিন ভেদে ঝিকরগাছা, বাগআঁচড়া,বাকড়া,নাভারনসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করেন। প্রতিদিন ৫০ থেকে  ১০০ টা ডিম বিক্রি করেন। প্রতি পিস ডিম এক থেকে দুই টাকা লাভে বিক্রি করে যা রোজগার হয় তা দিয়ে মোটামুটি চালিয়ে নিতে পারেন তার সংসার।
 স্ত্রীকে হারিয়েছেন অনেকদিন আগে। সহজ সরল মানুষটি থাকতে চাননা কোন ধরা বাধা নিয়মে। ইচ্ছা হলে সন্তানদের সাথে থাকেন।  সদা হাস্য উজ্জ্বল মানুষটি জীবরের কথাগুলো বলতে বলতে ঝাপসা চোখের কোনে লোনা জল চিকচিক করতে লাগলো। ধীরে ধীরে চাপা কান্না জড়িত কন্ঠে বলতে লাগলেন তার জীবনের আরো অনেক কথা।
আগের মত অতটা স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারেন না, বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছে শরীরটা, “হাঁটুতে আজকাল খুব ব্যাথা হয়। এটা হয়তো সারাদিন হাঁটার ফল। ডাক্তার দেখাতে অনেক টাকা লাগে তাই ঔষধ খাইনা, আর কয়দিন বা বাঁচবো”?  কথাগুলো শেষ না হতেই চোখ থেকে নিজের অজান্তে লোনা জলের ফোঁটা গড়িয়ে পড়ল মাটিতে।
ঝাপসা চোখ দুটো আরও ঝাপসা হয়ে উঠলো আস্তে আস্তে আবার উঠে দাঁড়ালেন তিনি। ডিমের খাচ্ছি কাঁধে নিয়ে পথ হাঁটতে থাকেন। দূর থেকে শুধু শুনতে পাই “এই ডিম রাখবেন ডিম”। এসব মুনসেপ আলী রা আমাদের শিক্ষা দেয় নিজের পায়ে পথ হাটার, নিজেকে নিজেই স্বাবলম্বী করার, বয়স মানুষকে থামাতে পারে না। মুনসেপ আলীরা তার বাস্তব প্রমাণ। সমাজের প্রতিটা ঘরে ঘরে মুনসেপ আলীর মত মানুষ এখন খুব প্রয়োজন।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * ডিম বিক্রি তার পেশা একজন মুনসেপ আলির গল্প
লাইভ রেডিও
সর্বশেষ সংবাদ