জাতীয় সেমিনার: “জাতীয় বাজেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে অংশিদারিত্ব, বাজেট ভাবনা এবং মনিটরিং”

তনু, দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ

৩১ মে ২০২৩ বুধবার এগারো ঘটিকায় এএলআরডি ও এইচডিআরসি-র উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘‘জাতীয় বাজেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে অংশিদারিত্ব ও বাজেট ভাবনা এবং মনিটরিং বিষয়ক’’ এক জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অর্থনীতিবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। খুশী কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক ড. শফিক উজ জামান; সঞ্জীব দ্রং; নিরূপা দেওয়ান; অধ্যাপক ড. মেজবাহ কামাল এবং শামসুল হুদা। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ আলোচনায় অংশ নেবেন।

ড. আবুল বারকাত তার উপস্থাপনায় বলেন, বৈষম্য হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনে জাতীয় বাজেট যথেষ্ট কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে, যদি বাজেটের মূল লক্ষ্য হয় বৈষম্য হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচন। বিষয়টি বাজেটের ব্যয়-বরাদ্দ কাঠামো এবং আয় (সরকারের রাজস্ব আহরণ) কাঠামোর ওপর নির্ভর করে। বাজেটে ব্যয়-বরাদ্দে অগ্রাধিকার দিতে হবে ও আয় কাঠমোতে জোর দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, ভ‚মি সংস্কারে ্এবং প্রান্তিক কৃষকদের জন্য কোন বাজেট বরাদ্দ থাকে না। তিনি বাজেটে প্রান্তিক ও জুম চাষীদের জন্য রেশনিং-এর ব্যবস্থা রাখার প্রতি জোরালো দাবী জানান।

এতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শফিক উজ জামান বলেন, আমাদের দেশের ২৫% আবাদী জমি কমে গেলেও উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে চলমান বৈষম্য কমাতে হলে কৃষিভিত্তিক শিল্পায়ন গড়ে তোলার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা বাঞ্ছনীয়।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, সরকারের বাজেটের আকার যত বড় হোক না কেন বৈষম্য থাকলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কোন কাজে আসবে না। পাহাড়ি আদিবাসীদের বিষয়গুলোকে প্রকৃতপক্ষে অনুধাবন করতে হবে।

মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, জাতীয় বাজেটে সকল স্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকা প্রয়োজন। সেইসাথে সরকারের বিভিন্ন সেবাগুলোকে আরো সহজীকরণ করা প্রয়োজন।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেজবাহ কামাল বলেন, পারিবারিক কৃষিকে বাজেটে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। সেই সাথে নারী কৃষকদের কৃষক হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। দলিত, হরিজন এবং চা শ্রমিকদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ দিতে হবে।

এএলআরডি-র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়াটি আমলাতান্ত্রিক। বাজেট তৈরির আলোচনাটি সকল স্তরের মানুষের সাথে হতে হবে। এবং বাজেটে বাজেট মনিটরিং ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, আগের বাজেটে প্রান্তিক ও আদিবাসী মানুষের জন্য একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত থাকতো। কিন্তু দু:খজনক হলেও  সত্য যে, এখনকার বাজেটে তা থাকে না। তিনি জবাবদিহিতা ও মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদার করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।

এছাড়াও অন্যদের মধ্যে অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, আফজাল হোসেন এবং সালেহীন চৌধুরী অঞ্চল পর্যায় থেকে বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু বৈষম্য বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন।

সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপক এবারের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন। ক) গ্রামীণ নারীর প্রতি বাজেট বৈষম্য হ্রাসের লক্ষ্যে আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে গ্রামীণ নারীর জন্য মাথাপিছু বাজেট বরাদ্দ এখনকার তুলনায় কমপক্ষে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা জরুরি। কৃষক হিসেবে নারী কৃষকদের স্বীকৃতি এবং তা কার্যকর করার জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করতে হবে। সকল নারী-কৃষকের জন্য কৃষি ও স্বাস্থ্য বীমার জন্য বাজেটে যথেষ্ট পরিমাণে বরাদ্দ রাখতে হবে; খ) বাজেট বৈষম্য হ্রাসে আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদিবাসী মানুষের জন্য ুমাথাপিছু বাজেট বরাদ্দ এখনকার তুলনায় কমপক্ষে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা জরুরি। সেক্ষেত্রে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেট হতে হবে কমপক্ষে ২১,১৬৪ কোটি টাকা (মোট বাজেটের ২.৮৩%)। সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভ‚মি কমিশন গঠন করতে হবে; ওই কমিশনকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতার সাথে কার্যকর করতে মধ্যমেয়াদী (৫ বছর ব্যাপী) বরাদ্দ দিতে হবে। গ)  অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হলে আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কারের বাজেট বরাদ্দ হবার কথা ৪,৮৯৭ কোটি টাকা। কিন্তু আমাদের সুপারিশ হল এই খাতে মাথাপিছু বরাদ্দ এখনকার তুলনায় ২০ গুণ বৃদ্ধি করা।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * জাতীয় বাজেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন * জাতীয় সেমিনার * বাজেট ভাবনা এবং মনিটরিং