কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন বাড়ীতে ফুটেছে মে ফ্লাওয়ার
![](https://bangla.fm/files/uploads/2023/05/BeFunky-collage-91edit.jpg)
সাকলাইন যোবায়ের:
কুমিল্লা নগরীর বেশ কতগুলো বাড়ীর ছাদে মে ফ্লাওয়ার ফুটতে দেখা যায়। নগরীর তেলিকোনা চৌমুহনীর পাশে কাটাবিল মুন্সিবাড়ীর ফাতেমা আক্তারের বাড়ীতে ও একই এলাকার স্নিগ্ধা কাসানা বাড়ীর ছাদে এবং সাংবাদিক কাজী এনামুল হক ফারুকের বাড়ীতে মে ফ্লাওয়ার ফুটতে দেখা গেছে। তাদের বাড়িতে প্রতি বছরের মে ফ্লাওয়ার ফুটে বলে জানান। মে ফ্লাওয়ার দেখলে মনে হয় পুরো একটি আস্ত ফুল। আসলে তা নয়। এই বৃত্তটি আস্ত একটি ফুল নয়। অনেকগুলো ফুলের সমন্বয় গঠিত অপূর্ব ‘মে ফ্লাওয়ার’। রক্তিম শোভায় উজ্জ্বল হয়ে প্রকৃতিতে দারুণ সৌন্দর্য ছড়ায় মে ফ্লাওয়ার ।
সারা বছর মে ফ্লাওয়ার গাছ মাটির নিচে থাকে এই ফুল গাছের কাণ্ড। মে মাস এলেই মে ফ্লাওয়ার তার অস্তিত্ব মাটি ভেদ করে মাথা উঁচু করে এবং সে বৃত্তাকার ফুলটি জানান দেয় তার আপন অস্তিত্ব।
কদম ফুল যেমন অনেকগুলো ফুলের সমন্বয়ে একটি ফুলে রুপান্তরিত হয়। মে ফ্লাওয়ার ও ঠিক তেমনি অনেকগুলো ফুলের সমন্বয়ে গঠিত একটি ফুল।
প্রায় ২শ ফুলের সমন্বয়ে গঠিত ‘মে ফ্লাওয়ার’ এর পুষ্পবৃত্ত। একেকটি ফুলের রয়েছে ৬টি পাপড়ি আর ৭টি পুংকেশর। যা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে রয়েছে। ফুলটির স্থায়ীত্ব মে মাস পর্যন্ত বা তার একটু বেশি সময়।
এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও উদ্ভিদ গবেষক ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন বলেন, মে ফ্লাওয়ারের ইংরেজি নাম Blood Lily। এর বৈজ্ঞানিক নাম Scadoxus multiflorus এবং পরিবার Amarllidaceae। এই গাছের বৈশিষ্ট্য হলো- প্রথমে ফুল আসে; তারপর পাতা আসে।
ফুলটির নামকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটার কাণ্ড সারাবছর মাটির নিচে থাকে। ইংরেজি মে মাসে মাটি ভেদ করে ফুলটি বের হয়। এ Amarllidaceaeপরিবারের কোনো একটা ভ্যারাইটি মে মাসের শুরুতে ফোটে বলে এ জাতীয় ফুলগুলোর নাম ‘মে ফ্লাওয়ার’ রাখা হয়েছে। তবে সবগুলো মে মাসের প্রথম তারিখে ফোটে না।
‘একটি বৃত্তে অসংখ্য ফুলের আমবেল জাতীয় গোলাকার পুষ্পবিন্যাস। এ বিন্যাসে ২শ টির মতো ফুল একত্রে মিশে থাকে। ফুলগুলোর মাথায় হলুদ রঙের পুংকেশর থাকে। গাছটির প্রকৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি Bulbous Plant অর্থাৎ, পেঁয়াজের মতো অংশ থাকে নিচে। অনেকগুলো আবরণের সমষ্টি হলো পেঁয়াজ। পেঁয়াজে যেভাবে অনেকগুলো আবরণ থাকে; তেমনি এই গাছটিতেও। এই আবরণগুলোকে ‘ভাল্বাস’ বলে। ’
মে ফ্লাওয়ারের ওষুধিগুণ সম্পর্কে ড. আতাউর রহমান বলেন, এটা কিন্তু ‘পয়জনাস প্লান্ট’ অর্থাৎ, কিছুটা বিষাক্ত জাতীয় উদ্ভিদ। যেসব ছাগল বা ভেড়া এর পাতা খায় তাদের শরীরে কিন্তু বিষক্রিয়া হয়। আফ্রিকাতে এইবৃক্ষটির কস বা রস ‘অ্যারো-পয়জন’ শিকারের তীরের মধ্যে এর কস ব্যবহার এবং মাছ ধরতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ‘ফিসিং-পয়জন’ অর্থাৎ মাছ শিকারের এর ব্যবহার হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ঐতিহ্যবাহী ওষুধেও এ বৃক্ষটি ব্যবহার করা হয়।
সাউথ আফ্রিকা, ওয়েস্ট অফ্রিকা, ঘানা, আইভরিকোস্ট, সাইবেরিয়া, মেক্সিকো প্রভৃতি দেশে এই মে ফ্লাওয়ারটির বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। এটি আমাদের দেশের বনাঞ্চল বা বনভূমির উদ্ভিদ নয়। আমাদের দেশের সৌখিন বৃক্ষপ্রেমীরা এ ফুলটিকে টবে লাগান বলে জানান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এবং উদ্ভিদ গবেষক ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন ।