বাকেরগঞ্জে আবুল হোসেন খান কলেজটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে

(বাকেরগঞ্জ) বরিশাল প্রতিনিধি:
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার ভরপাশা ইউনিয়নের কৃষ্ণকাঠী গ্রামে একবছর আগেও মুখর ছিল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পদচারনায় আবুল হোসেন খান কলেজটি। ১৮ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী কলেজটিতে সর্বশেষ ২০২২ সালে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের আওতায় এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরে নতুন বছরের শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে কলেজটির সকল অবকাঠামো প্রাণহীনভাবে দাঁড়িয়ে থাকলেও নেই কোন শিক্ষক-শিক্ষার্থী চলছে না কোন পাঠদান।
কলেজ অধ্যক্ষ খবীর মুন্সী জানান, কলেজটি এমপিওভূক্ত না হওয়ায় দীর্ঘ ১৮ বছর শিক্ষক কর্মচারীরা অতি কষ্টে কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলাম। বর্তমানে কলেজটিতে কোন অনুদান না পাওয়ায় শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন তো দূরের কথা কলেজ চালানোই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আবুল হোসেন খান এখন কলেজের ব্যয় বহন করতে না পারার কারণে কলেজটি বন্ধ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কলেজটি এমপিওভূক্ত করে সকল কার্যক্রম চালু করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
সরেজমিনে জানা গেছে, ২০০৫ সালে কৃষ্ণকাঠী গ্রামে ২ একর ৭ শতাংশ জমিতে স্থাপন করা হয় আবুল হোসেন খান কলেজটি। কলেজটি ২০০৬ সালে সরকারি অনুমোদন পেয়ে পাঠদানের স্বীকৃতি পায়। বরিশাল বোর্ডের আওতায় ২০০৭ সালে প্রথমবার ২৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। কলেজটি অত্যান্ত সুনামের সাথে ২০০৭ সাল থেকে শুরু করে ২০২২ সাল পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা মানবিক, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ভালো ফলাফল লাভ করে। ভরপাশা ইউনিয়নের শিক্ষানুরাগী মো: আবুল হোসেন খান’র উদ্যোগে কলেজটি কৃষ্ণকাঠি গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজে ১৩০ ফুট ও ১২০ ফুট দৈর্ঘ্যের দুটি ভবনে রয়েছে- একটি হল রুম, পাঁচটি শ্রেণিকক্ষ, একটি অধ্যক্ষের কক্ষ ও একটি অফিস কক্ষ। কলেজের সামনেই রয়েছে বিশাল একটি খেলার মাঠ। দীর্ঘদিনের অবহেলা ও অযতে কলেজটি দিন দিন ধ্বংসের মুখে যাচ্ছে।
২০০৫ সালে স্থানীয় সমাজ সেবক মো. আবুল হোসেন খান তার নিজ ইউনিয়নে কলেজ না থাকায় নিজস্ব সম্পত্তি থেকে ২ একর ৭ শতাংশ জমি রেজিষ্ট্রির মাধ্যমে কলেজের নামে দান করেন। অথচ উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নে ২১ টি কলেজের অধিকাংশ এমপিওভূক্ত হলেও আবুল হোসেন খান কলেজটি এখনো এমপিওভূক্ত না হওয়ায় কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার দাস জনকণ্ঠকে জানান, আবুল হোসেন খান কলেজটি গত ২০২১ সালের এমপিওভূক্ত নতুন তালিকায় থাকলেও শর্ত পূরণ না করায় এমপিওভূক্ত হয়নি। কলেজ কর্তৃপক্ষ যদি পুনরায় শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে পাঠদান শুরু করে তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মো. আবুল হোসেন খান জানান, নিজ অর্থায়নে ১৮ বছর ধরে শিক্ষকদের বেতন ও কলেজের সমস্ত ব্যয় বহন করে কলেজটি চালিয়ে রেখেছিলাম। ইউনিয়নের গরীব, অসহায় ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে তাদের কাছ থেকে নেয়া হয়নি কোনো বেতন। বর্তমানে আমার পক্ষে কলেজটির ব্যয় বহন করা অসম্ভব হয় পড়ায় কলেজটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন সরকারি সহযোগিতা পেলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আগের মত চালানো সম্ভব। সরকার যদি কলেজটি এমপিওভূক্ত করে তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বেঁচে থাকবে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * আবুল হোসেন খান কলেজটি * ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে * বাকেরগঞ্জে