সীমাহীন বৈষম্যে মানুষ আজ পথহারা: মেনন
সৈয়দ আমিরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ১৯ মে ২০২৩ :
“কথা শোনার জন্য মানুষ কান পেতে আছে। একদিকে দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী, মূল্যস্ফীতি বাড়ছে হু হু করে, বাড়ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম, অন্যদিকে উন্নয়ন হলেও দুর্নীতি-লুটপাটের মাধ্যমে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ টাকার পাহাড় গড়ছে। এরফলে মধ্যবিত্তরা হচ্ছে নিম্নবিত্ত আর নিম্নবিত্তরা গরিব হয়ে যাচ্ছে। সীমাহীন বৈষম্যে মানুষ আজ পথহারা। তাই পরিত্রাণের দিশা নিয়ে লড়াইয়ে নামলে, কথা বললে মানুষ অবশ্যই শুনবে। অতীতের লড়াই-সংগ্রাম থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে আজকের তারুণ্যকেই এ দায়িত্ব নিতে হবে।” -বললেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি।
ত্যাগ-সংগ্রাম ও গৌরবোজ্জ্বল বর্ণাঢ্য জীবনের ৮০তম জন্মদিনে জাতীয় প্রেসক্লাবের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
আজ শুক্রবার (১৯ মে ২০২৩) ‘গৌরবোজ্জ্বল ছাত্র রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধের পথ বেয়ে জনতার মেনন’ শীর্ষক ওই আলোচনা সভা যৌথভাবে আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ যুব মৈত্রী ও বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী।
আলোচনাসভায় রাজনীতির জীবন্ত কিংবদন্তী মেনন আরো বলেন, “এখন ছাত্র রাজনীতির চরম খরা চলছে। কৃষক, শ্রমিক, যুব, নারী আন্দোলনের অবস্থাও ভালো না। কারণ রাজনীতির নাকি চরম দুরাবস্থা। এখন নাকি কথা বলা যায় না! কিন্তু ষাটের দশকের অবস্থা আরো ভয়াবহ ছিল।”
তিনি বলেন, “এখন তো আপনারা কথা বলতে পারেন, লিখতে পারেন, গাইতে পারেন। তখনকার সময়ে গানও গাইতে পারতাম না। শ্লোগান দিতে পারতাম না। ‘লাল ঝান্ডা’ উচ্চারণ’ই করা যেত না। বলতে হতো ‘আজাদী ঝান্ডা’। চরম প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে তখনকার ছাত্র সমাজ রাজপথে যেমন লড়াই করেছে, তেমনি সেই লড়াইয়ে মানুষকে টানতে মানুষের কাছে গিয়েছেন। ছাত্রদের সাথে লড়াইয়ে নেমেছেন কৃষক, শ্রমিক মেহনতি মানুষ। ফলে ’৬২, ’৬৯-এর পথ ধরে মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় এসেছে। লড়াই’ই আমাকে জনতার মেনন বানিয়েছে। যে কথা আজ আপনারা বলছেন। আমার আহ্বান মানুষের চরম সংকটে আজকের তারুণ্য মানুষের সংগ্রামে মানুষের পাশে যান, তাহলে মানুষ আপনাদের ডাকে সাড়া দিবে। যদি আজকের তারুণ্যের সকলেই অতীত ছাত্র আন্দোলন, মুক্তির সংগ্রামের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে লড়াইয়ে নামতে আমার মতো এক একজন মেনন হন তাহলেই আজকের এই আলোচনা স্বার্থক হবে।”
আলোচনা সভায় ’৮০-এর দশকের তুখোর ছাত্রনেতা কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা বলেন,“রাজনীতিতে আমাদের দুটো শত্রু স্পষ্ট। তার একটি স্বৈরাচারি সামরিক শাসক, অন্যটি সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদ। এই সত্য মেনন ভাই যেমন বুঝেছিলেন, তেমনি আমরাও বুঝেছিলাম। প্রত্যাশা করি আজকের তারুণ্যও তা বুঝে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে এগিয়ে আসবে। মস্কো-পিকিংপন্থী জটিলতা যতই থাকুক, ওয়ার্কার্স পার্টির অবস্থান আগেও পরিষ্কার ছিল, এখনো আছে। সময়ের প্রয়োজনে সাম্প্রদায়িকতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষায় সাম্প্রদায়িকতাকে রুখতে ওয়ার্কার্স পার্টি লড়ছে, লড়বে। সেই লড়াইয়ে থাকবেন আজকের তারুণ্য।
বাংলাদেশ যুব মৈত্রীর সভাপতি তৌহিদুর রহমান তৌহিদের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য কমরেড মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি, লেখক ও গবেষক কমরেড শরীফ শমশির, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান নুর নীরব, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী’র সহ-সাধারণ সম্পাদক মুক্তার হোসেন নাহিদ, সহ-সভাপতি কায়সার আলম প্রমুখ।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য কমডে আনিসুর রহমান মল্লিক, যুবমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক তাপস দাস, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি অতুলন দাস আলো।
সঞ্চালনা করেন ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক অদিতি আদৃতা সৃষ্টি।