প্রতারক চক্র, পুলিশ ও বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ: নেমেছে পুলিশ

শহীদুজ্জামান শিমুল, সাতক্ষীরা :

সাতক্ষীরার একজন প্রেস ব্যাবসায়ী মোশারফ হোসেন, বৃহস্পতিবার (১৮ মে) দুপুরে ছেলেকে দোকানে রেখে বাড়িয়ে গিয়ে ঘুমিয়েছিলেন। বিকেল ৪টা ৫৩ মিনিটে তার মোবাইল ফোনে (০১৯৭০-৪৫৭৮৮৭) এই নাম্বার থেকে একটি ফোন আসে। সেই ফোনে নিজেকে সাব-ইন্সপেক্টর মনির পরিচয় দেয়া লোকটি তাকে বলেন, আপনার ছেলের নাম কি আলি মুক্তাদা? তখন তিনি উত্তর দিলেন হ্যাঁ, এরপর সাব-ইন্সপেক্টর পরিচয়দাতা ব্যক্তিটি বললেন, আপনার ছেলেকে ৫০পিস ইয়াবাসহ আটক করেছি। একই সাথে বাবু নামে আরও একটি ছেলেকে আটক করা হয়েছে। তারা এখন আমাদের হেফাজতে আছে। এই নিন আপনার ছেলের সাথে কথা বলুন। এরপর অপর একজন কাঁদো কাঁদো কন্ঠে ভাঙ্গা গলায় বলল, বাবা আমার কোন দোষ নেই, বাবু  আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। স্যারকে কিছু টাকা দিলে আমাকে এখনি ছেড়ে দেবে। স্যারের এই নম্বরে বিকাশ করা আছে। বাবা তুমি আমাকে বাঁচাও বলেই ফোনটি কেঁটে দিলো। প্রথমে বিষয়টি বুঝে উঠতে পারেননি ঐ ব্যাবসায়ী, তবে তার সন্দেহ হলে সাথে সাথে ছেলের মোবাইলে নম্বরে ফোন করে নিশ্চিত হলেন তার ছেলে এখন দোকান চালাচ্ছে। পরে তিনি যে নাম্বার থেকে ফোন এসেছিল সেই নাম্বারে ফোন দিয়ে সাব-ইন্সপেক্টর পরিচয়দাতা ব্যক্তিটির সাথে দেখা করে টাকা দিতে চাইলে সে আর ফোন রিসিভ করেনি। পরে তিনি সাতক্ষীরা সদর থানায় এ ঘটনার বিবরণ জানিয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছেন।

সাতক্ষীরা সদরের এক মধু ব্যাবসায়ী মানিক হোসেনের, কিছুদিন আগে একটি অপরিচিত মোবাইল নাম্বার থেকে বিএসটিআই কর্মকর্তা পরিচয়ে তাকে ফোন দিয়ে বলা হয় এখনই তার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালাবে। তারা এখন সাতক্ষীরার খুলনারোড মোড়ে অবস্থান করছে। তবে তিনি যদি বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা পাঠান তাহলে তার প্রতিষ্ঠানে অভিযান হবে না। তিনি ঐ ঘটনার কিছুদিন আগে বিএসটিআই খুলনা অফিসে লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য আবেদন করেছিলেন। এজন্য বেশি ঝামেলায় না গিয়ে তাকে বিকাশে ১০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। তবে পরে খুলনার বিএসটিআই অফিসে ফোন দিয়ে জানতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর এলাকার বাসিন্দা ভ্যান চালক আব্দুল আলীম পরিচিত এক ব্যক্তির নিকট থেকে একটি পুরাতন মোবাইল ফোন কিনেছিলেন তিনি । কয়েক বছর ধরে সেটি ব্যবহারও করছেন। তবে হঠাৎ বেশকিছু দিন আগে সকালে তার মোবাইল ফোনে অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে ফোন করে জানানো হয় সাইবার ক্রাইম ইউনিট থেকে তাকে ফোন করা হয়েছে। তার ব্যবহারিত মোবাইল ফোনটি চোরাই মোবাইল। থানায় অভিযোগ আছে। এখুনি তার মোবাইলসহ সাতক্ষীরা সদর থানায় হাজির হতে হবে। তা না হলে তার বিরুদ্ধে চুরি ও ছিনতাইয়ের মামলা দায়ের করা হবে।  তবে তিনি যদি এখনি বিকাশের মাধ্যামে ৫ হাজার টাকা পাঠায় তাহলে আর কোন সমস্যা নেই! ভয় পেয়ে আব্দুল আলিম সেই বিকশ নাম্বারে ৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। এভাবেই কখনো পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পরিচয়ে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষদের মোবাইলে ফোনের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র।

এভাবেই প্রতিনিয়ত সাতক্ষীরার গ্রাম ও শহরের সহজ-সরল মানুষরা প্রতারণার জালে আটকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেকে। এ সব বিষয়ে ভয়ে কেউ অভিযোগ করেন না। তবে, সম্প্রতি চক্রটির কাছে প্রতারিত হওয়া বেশ কিছু ঘটনার জানাজানি হওয়ার পর টনক নড়েছে পুলিশ প্রশাসনের।

এ দিকে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ওসির বরাতে দিয়ে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে একটা প্রেসবিজ্ঞপ্তি  দিয়েছেন সেখানে লিখেছেন “এই মুহূর্তে সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র (০১৭৭৪৬৮০৩৪৯) মোবাইল নম্বর থেকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কিংবা অন্য কোন অফিসার পরিচয়ে আপনাদের নিকট ফোন দিয়ে বলছেন যে আপনাকে নাশকতার মামলা বা অন্য কোন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে। বিকাশে টাকা পাঠান। অনেকেই হয়ত মামলার আসামি আছেন কিংবা মামলার আসামি হবেন এমন দুশ্চিন্তায় আছেন ফেঁসে যাবেন এই ভয়ে বিকাশে টাকা দিচ্ছেন। আপনাদের এই মর্মে সাবধান এবং সতর্ক করা হচ্ছে যে সাতক্ষীরা সদর থানা কিংবা অন্য কোন থানা পুলিশ আপনার নিকট কোনভাবেই টাকা দাবি করছে না। কখন ও সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ এ ধরণের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নয়। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি এটি একটি সঙ্ঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। আমরা এদের ধরার চেষ্টা করছি। আপনারা ফাঁদে পড়ে কখনো কাউকে বিকাশে কিংবা অন্য কোনভাবে টাকা দিবেন না। এ ধরনের অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক আমাদের ( ০১৭৬১৯০৯৯৯০, ০১৩২০১৪২১৭৯, ০১৩২০১৪২১৮০) নম্বরে যোগাযোগ করুন” বলে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান জানান, এরকম বেশ কিছু প্রতারণার অভিযোগ পেয়েছি। মানুষকে সচেতন করার জন্য আমরা ইতিমধ্যে  বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেসবিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে। সদর থানার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সতর্কতরামূলক পোস্ট দিয়ে সবাইকে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে সচেতন হওয়া আহবান জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত  শুরু হয়েছে। দ্রুত এসব প্রতারক চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * ধরতে মাঠে * সাতক্ষীরায়