লন্ডনে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বিএনপি নেতারা
সদরুল আইনঃ
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির অর্ধশতাধিক কেন্দ্রীয় নেতা লন্ডনে গিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন।
তার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন আরও অনেকে। দলে দলে লন্ডনমুখী হচ্ছেন বিএনপি নেতারা। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ, তার গুডবুকে নাম লেখানো, প্রার্থিতার বিষয়ে এলাকায় আওয়াজ তোলা, দলের ভিতরে নিজের কদর বৃদ্ধিসহ নির্বাচনে মনোনয়ন নিশ্চিত করতেই মূলত তারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন লন্ডনে।
কেউ কেউ আবার সাক্ষাৎকালে তারেক রহমানের সঙ্গে নানা পোজের ছবি তুলে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে জানান দিচ্ছেন নিজেদের লন্ডন সফর।
জানা গেছে, বেশির ভাগ নেতাই স্ব-উদ্যোগে লন্ডন গিয়ে চেষ্টা-তদবির করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে আসছেন। দলীয় একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, রোজার ঈদের আগে ও পরে মিলে গত দেড় মাসে দলের বিভিন্ন স্তরের ২০ জনের বেশি নেতা লন্ডন গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন।
এক বছরের কম সময়ে গেছেন ৫০ জনের বেশি। এর মধ্যে বিএনপির সমমনা দলেরও কেউ কেউ রয়েছেন। বিএনপির উল্লেখযোগ্য নেতার মধ্যে রয়েছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদিন ফারুক, আরেক উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগরী উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন, মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ বিএনপির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনসহ আরও অনেকে।
এ ছাড়া বিএনপির সাবেক জোটসঙ্গী বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থও লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ছবি তুলে যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।
এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন এমন অনেক নেতা লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ শুরু করেছেন। এ বিষয়ে বিএনপির কয়েকজন নীতিনির্ধারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তাঁরা জানান, যারা লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন, তাদের সবাই নিজ উদ্যোগে গেছেন এবং যাচ্ছেন।
তাদের কাউকে তিনি (তারেক রহমান) ডেকে নেননি। সবাই মোটামুটি দলের ভিতরে নিজের পদপদবি ও অবস্থান পাকাপোক্ত করতে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে নিজের আসনে মনোনয়ন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই সেখানে ছুটছেন।
পাশাপাশি এলাকার নেতা-কর্মীদের জানানো যে, দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে তার বোঝাপড়া ও অবস্থান খুব ভালো। তার মনোনয়ন মোটামুটি নিশ্চিত।
দলীয় নেতাদের লন্ডন সফর নিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু গনমাধ্যমকে বলেন, ‘নেতার সঙ্গে কর্মীদের যোগাযোগের একটা বড় দিকই হচ্ছে দেখাসাক্ষাৎ। নেতা যেহেতু লন্ডন থাকেন, সেহেতু দলীয় নেতা-কর্মীরাও লন্ডন যাবেন- এটাই স্বাভাবিক। ‘
‘তবে যাদের সামর্থ্য আছে, তারাই লন্ডন যাচ্ছেন। আবার অনেকে ব্যক্তিগত কাজে লন্ডন যান, তখন নেতার সঙ্গে দেখা করে আসেন। আবার অনেকে সাংগঠনিক কাজেও লন্ডন যেতে পারেন। নানা কারণেই তারা লন্ডন যেতে পারেন। এর মাধ্যমে সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও গতিশীল হয়। ’
লন্ডন সফর করে অতি সম্প্রতি ঢাকায় ফিরেছেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসলে আমাদের লন্ডনে যাওয়াটা নির্বাচনকেন্দ্রিক ছিল না। আমরা একটা আন্দোলনের মধ্যে আছি। তিনি (তারেক) সেখান থেকে নেতৃত্ব ও গাইডলাইন দিচ্ছেন। সেই আন্দোলন কীভাবে আরও বেগবান করা যায় সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। চলমান আন্দোলন সফল করার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। ’
লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসা বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ‘আমি গিয়েছিলাম যুক্তরাজ্য বিএনপির স্বাধীনতা দিবসের প্রোগ্রামে বিশেষ অতিথি হিসেবে। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সেখানে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে।
এ সময় বিএনপির মিডিয়া সেলের বিষয়বস্তুসহ অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তিনি কিছু গাইডলাইন দিয়েছেন। এটাই ছিল আমার উদ্দেশ্য। অন্যরা কেন যাচ্ছেন সেটা তো আমি বলতে পারব না। ’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, যারাই আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন, সবাই তার সঙ্গে ছবি তুলে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে ‘দলে নিজের অবস্থান খুবই ভালো’ এ বার্তাটি দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এ ছাড়া এ বার্তা দিতে চাচ্ছেন যে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সম্পর্ক খুবই ভালো এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় আগামী নির্বাচনে একমাত্র তিনিই প্রার্থী। আসলে বেশির ভাগই নেতাদের ব্যক্তিগত সফর, কোনো সাংগঠনিক সফর নয়।
এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ বলেন, দলের কোনো নেতা বা কর্মী যে পর্যায়েই থাকুক না কেন- তিনি তার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে গিয়ে দেখা করবেন, এটা তো অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। এতে তারা দ্বিগুণ-তিন গুণ হারে উজ্জীবিত হন, সাংগঠনিক কার্যক্রমে বেশি প্রেরণা পান।
তা ছাড়া তার (তারেক) নেতৃত্বে রাজপথে আমাদের আন্দোলন চলছে। সে ব্যাপারেও তিনি দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। কাজেই নেতাদের লন্ডন সফরের বিষয়টিতে নেতিবাচক কিছু নেই। এটি সম্পূর্ণ ইতিবাচক একটি বিষয়। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
লন্ডন থেকেই তিনি দল পরিচালনা করছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপির সংসদ সদস্যরা শপথ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তেই তারা শপথ নেন এবং তার নির্দেশেই গত বছর ১১ ডিসেম্বর তারা সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।