বাবার কবরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন চিত্রনায়ক ফারুক

 

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ

গাজীপুরের কালীগঞ্জে বাবার কবরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়া ভাই খ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান দুলু (চিত্রনায়ক ফারুক)। জানাজার নামাজ শেষে উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের সোম টিওরী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন পারিবারিক
কবরস্থানে তাঁর অসিয়ত অনুযায়ী পিতা আজগর হোসেন পাঠানের কবরের পাশে আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, শুভাকাঙ্খি, গুনগ্রাহী ও ভক্ত অনুরাগীরা অশ্রূসজল চোঁখে ফারুকের মরদেহ দাফন করেন।

চিত্রনায়ক ফারুক সোমবার (১৫ মে) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ
করেন। তাঁর প্রথম জানাজার নামাজ সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার (১৬ মে) সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউ.এস বাংলার ফ্লাইটে তাঁর মরদেহ দেশে আনা হয়। পরে লাশ সকাল ৯টায় উত্তরায় নিজ বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা ১১টায় জাতীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য রাখা হয়। বাদ জোহর এফডিসিতে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট গুণীজনরা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে সেখানে দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন করেন। পরে চ্যানেল আই কার্যালয় প্রাঙ্গণে তৃতীয় জানাযা ও তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বাদ আসর তার সংসদীয় আসন ঢাকা-১৭ এর গুলশান-২ আজাদ মসজিদে চতুর্থ জানাজা শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সোম গ্রামের নিজ বাড়িতে নিয়ে এলে সর্বস্তরের জনগণ সর্বশেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। মঙ্গলবার রাত নয়টায় সোম টিওরী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ মাঠে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসসাদিকজামান ও অফিসার ইনচার্জ মোঃ ফায়েজুর রহমান। পরে সেখানে হাজার হাজার মুসুল্লীদের উপস্থিতিতে পঞ্চম জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় নায়ক ফারুককে।

কন্যা ফারিহা তাবাসসুম পাঠান তুলশি ও পুত্র রওশন হোসেন শরৎ পাঠান, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও ভক্ত অনুরাগী রেখে গেছেন। আজগর হোসেন পাঠান ও আফজালুন্নেছা দম্পতির ঘরে ১৯৪৮ সনের ১৮ আগস্ট চিত্রনায়ক ফারুক জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। নায়ক ফারুক ভালবেসে ফারজানাকে বিয়ে করেন। দুই সন্তান ফারিহা তাবাসসুম পাঠান তুলশি ও রওশন হোসেন পাঠান শরৎ এবং স্ত্রীকে নিয়ে তিনি উত্তরায় নিজ বাসভবনে বসবাস করতেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সোম গ্রামের নিজ বাড়িতে ফারুকের মরদেহ নিয়ে এলে সেখানে হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে। পুরো বাড়ি নীরব, নিস্তব্ধ হয়ে যায়। বাড়িতে তাঁর আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী নির্বাক মানুষে পরিণত হয়। এর মাঝে কথা হয় তাঁর ভাগনে মোশারফ হোসেন পাঠান হিল্লোলের সাথে। তিনি বলেন, মামা প্রায় দুই বছর ধরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অসুস্থ্য হওয়ার কিছুদিন আগে তিনি তাঁর নাতনির বিয়ের অনুষ্ঠানে বাড়ীতে এসেছিলেন। এছাড়াও প্রতি বছর বাড়ীতে এসে দুই ঈদের নামাজ পড়তেন, রমজানে এলাকার মানুষদের সাথে ইফতার করতেন। গরীব, অসহায় ও দুঃস্থ মানুষের জন্য তিনি সব সময়ই সহযোগীতার হাত
বাড়িয়ে দিতেন।

চিত্রনায়ক ফারুকের মৃত্যুতে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, সাবেক এমপি, ডাকসু’র সাবেক ভিপি ও গাজীপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তারুজ্জামান, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কে.বি.এম মফিজুর রহমান খান, সাবেক এমপি এ.কে.এম ফজলুল হক মিলন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মনির উদ্দিন আহাম্মেদ, দূর্ণীতি দমন কমিশনের সাবেক মহা পরিচালক মোঃ শহীদুজ্জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ রেজাউল করিম ভুইয়া, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম নজরুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক এ্যাড. আশরাফী মেহেদী হাসান, পৌর মেয়র এস.এম রবীন হোসেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আবু বকর মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন সরকার, সাধারণ সম্পাদক আবু বকর চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, সূধীজনসহ সর্বস্তরের জনগণ চত্রিনায়ক ফারুকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ এবং শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * চিত্রনায়ক ফারুক * বাবার কবরের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত