বরগুনা জেলায় শিলা বৃষ্টিতে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির সম্ভাবনা

বরগুনায় শিলা বৃষ্টি ও ভারী বর্ষনের পরে কৃষক এ ভাবেই তার অভিব্যক্তি বর্ননা করলেন “যেই রহম কলসের কান্দায় দেওই বরছে এই রহম আবারো দেওই বরলে মোগো খ্যাতের তরমুজ সব পইচ্যা যাইবে। এই তিনডা মাস দিনেরে দিন, রাইতেরে রাইত কইনাই খালি ক্ষেতের পিছে খাটছি। আর কয়ডা দিন গ্যালে তরমুজ কাইট্টা আডে উডাইতে পারতাম। হঠাৎ দেওইডা নাইম্মা মোগো সাড়ে সর্বনাশ করছে। এই খ্যাতি ক্যামনে কাডাইয়া উডমু মোরা।” ভারী বর্ষণে ক্ষেতে পানি জমার পর বরগুনা সদর নলটোনা ও বালিয়াতলী এলাকার তরমুজচাষি ফজলুল হক ও আনসার এভাবে হতাশা ব্যক্ত করলেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে বরগুনা সদরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় টানা ভারী বর্ষণে বরগুনায় তরমুজ চাষীদের ক্ষেতে পানি জমেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর বরগুনায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগের আশা করেছিল হেক্টর প্রতি ৪০ টন তরমুজের ফলন হবে। কৃষি বিভাগের প্রত্যাশা অনুসারে বরগুনায় তরমুজের ফলনও আশানুরূপ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষকরা।
মঙ্গলবার দুপুর তিনটার দিকে বরগুনাসহ উপকূলে টানা তিন ঘণ্টা ভারী বর্ষণ হয়। এতে জেলার সব তরমুজ ক্ষেতেই পানি জমে যায়। সন্ধ্যার পর বৃষ্টি কমলে আটঘাট বেঁধে ক্ষেতে নামেন চাষী। সেচ পাম্প দিয়ে রাতভর প্রচেষ্টায় ক্ষেতের জলাবদ্ধতা কমানোর চেষ্টা চালান।
তরমুজ চাষী রেজাউল করিম, বারেক খান বলেন, “প্রায় ১৬০ শতাংশ জমিতে তরমুজ লাগাইছি। দেওইতে সব খ্যাতই তলাইয়া গ্যাছে। কেবল তরমুজটা পোক্ত অইয়া ওডা শুরু হরছেলে। বেডের মাটি ভিজা, এই তরমুজে পচন ধইরা নষ্ট অইয়া যাইবে।”
কৃষকরা জানান, ভারী বর্ষণ ও শিলা বৃষ্টির কারণে ইতোমধ্যেই ক্ষেতের ২০ ভাগ তরমুজ নষ্ট হয়েছে। আর দু-এক দিন বৃষ্টি থাকলে দুই-তৃতীয়াংশ তরমুজ নষ্ট হয়ে যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরগুনা জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, “ভারী বর্ষণে বরগুনার প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমির তরমুজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে প্রায় শত কোটি টাকার তরমুজ নষ্ট হতে পারে। তবে বৃষ্টি না হল বেশিরভাগ তরমুজ রক্ষা করা সম্ভব হবে। আমরা কৃষকদের সেচে সহযোগিতাসহ এ অবস্থায় কি করণীয় সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।