নড়াইলে অসময়ে তরমুজ চাষ করে সফল কৃষক

শরিফুল ইসলাম, নড়াইলঃ

অসময়ে তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছে কালিয়া উপজেলার একাধিক কৃষক। কম খরচে বেশি ফলন এবং দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হয়েছে কৃষক পরিবার। এসব কৃষকদের সফলতা দেখে তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেকে। বিশেষ হাইব্রিড থাই জাতের তরমুজ চাষে কৃষকদের পরামর্শ, বিনা মূল্যে সার, বীজ, নগদ অর্থ সহায়তাসহ সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানায় কৃষি বিভাগ।

কৃষি অফিস ও কৃষক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে কালিয়া উপজেলায় সাত হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি ১৫ টন। কালিয়ার পৌরসভার ছোট কালিয়ার গোবিন্দ নগর এলাকার বিলে, সালামাবাদ ইউনিয়নের ভাউরীর চরে আর উপজেলার অন্যতম বৃহৎ ‘ভক্তডাঙ্গা’ বিলের অসংখ্য মৎস্যঘেরের পাড়ে মাচায় মাচায় চাষ হয়েছে বিশেষ জাতের বারোমাসী তরমুজ এশিয়ান-২, কানিয়া, মধু মেলা ও ব্ল্যাক বেবি জাতের তরমুজ। এরই মধ্যে এগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

এদের মধ্যে এশিয়ান-২ বাংলাদেশি জাত। যা ওজনে প্রায় ৮ থেকে ৯ কেজি হয়। এছাড়া মধু মেলা জাতের তরমুজের বাইরের অংশ হলুদ আর ভেতরের অংশের রঙ লাল, কানিয়া জাতের তরমুজের বাইরের অংশ ডোরাকাটা সবুজ আর ভেতরের অংশের রঙ হলুদ।

এসব জাতের তরমুজ দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও বেশ সুস্বাদু। বিশেষ করে কানিয়া জাতের তরমুজ বেশি সুস্বাদু। এসব তরমুজ চাষে খরচ কম। একর প্রতি মাত্র ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা, কিন্তু বিক্রি হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। বাজার দরও বেশ চড়া থাকায় কৃষক খুশি। অসময়ে তরমুজ চাষে কৃষকদের পরামর্শ এবং সহযোগিতা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

অসময়ে তরমুজ চাষে সফল একজন শিক্ষিত তরমুজ চাষী জেলার নবগঙ্গা ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কালিয়া উপজেলার ভাউরীর চরের গ্রামের শেখ কামাল হোসেন। বর্ষাকালে এই তরমুজ চাষাবাদ সম্পর্কে তিনি উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে খুলনার ডুমুরিয়া থেকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর সে অনুযায়ী গত বছর গাছ বাড়িয়া বিলের ৭ একর মৎস্য ঘেরের পাড়ে প্রথম বার পরীক্ষামূলক ভাবে ২০০টি গাছ রোপণ করে মাত্র ১৫ হাজার খরচ করে ১ লাখ টাকা বিক্রি করেন।

এবার তিনি ৭ একর মৎস্য ঘেরের পাড়ে এক বিঘার মতো জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। এবছর বৈরী আবওয়ার কারণে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি ১০০০টি চারা রোপণ করেছেন।

এরপর সঠিক সময়ে সার ব্যবস্থাপনা, মাচা তৈরি, ডগা কর্তন, ডগা মাচায় উঠিয়ে দেওয়া ও তরমুজের গায়ে জাল পরিয়ে টানিয়ে দেওয়াসহ যাবতীয় কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর ৩৫ দিনের মাথায় ফুল ও ফল আসে এবং ৭০দিনের মাথায় প্রথমবার ফল সংগ্রহ শুরু করেন তিনি। এরপর প্রতি সপ্তাহে ফল সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন তিনি।

তার মোট খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আর এ পর্যন্ত বিক্রি করেছেন ২ লাখের মতো। মধু মেলা জাতের তরমুজ তিনি পাইকারিই বিক্রি করেন ৭০ টাকা কেজি দরে। তবে এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আরও লক্ষাধিক টাকা লাভ হত বলে জানান। এতে তার মোট খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। স্থানীয় বাজারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করছেন তিনি। বাজারমূল্য ঠিক থাকলে তিনি প্রায় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন। তাই ভবিষ্যতে আরও বেশি করে চাষাবাদ করবেন বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে কালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবির কুমার বিশ্বাস বলেন, তরমুজ এখন আর মৌসুমি ফল নয়। এ উপজেলায় প্রথম উচ্চ ফলনশীল ফসল হিসেবে তরমুজের চাষে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। ফলে এলাকার অনেক চাষিই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এই তরমুজ উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষক।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * তরমুজ চাষ * নড়াইল
লাইভ রেডিও
সর্বশেষ সংবাদ