নগ্ন ভিডিও ধারণ করে স্ত্রীকে বর্বর নির্যাতন করে স্বামী
আবু হানিফ বাগেরহাট অফিসঃ
প্রথমে বিবস্ত্র করে স্ত্রীর নগ্ন ভিডিও ধারণ করেন স্বামী ইয়াসিন আকন। সেই ভিডিও নেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক পরকিয়ার মিথ্যা স্বীকরোক্তি আদায় করে তা রেকর্ড করেন। এরপরই শুরু করেন শারীরিক নির্যাতন। দুদিন পর শশুর বাড়ির লোকজনকে ফোন করে তাদের মেয়েকে নিয়ে যেতে বলেন ইয়াসিন। পরে পরিবারের লোকজন শুক্রবার (২৩সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় স্বমীর বাড়ি থেকে মিমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
মধ্যযুগীয় বর্বরতার এই ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার (২০সেপ্টম্বর) দিবাগত রাতে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর রাজাপুর গ্রামে।
নির্যাতনের শিকার মিম আক্তার ও তার পরিবারের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকর দাবি করে আসছিলেন ইয়াসিন। তার দাবিকৃত দুই লাখ টাকা না দেওয়ায় পরকিয়ার মিথ্যা অভিযোগ তুলে এই নির্যাতন করা হয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার ১নম্বর ধানসাগর ইউনিয়নের মালের বেপারীর মেয়ে মিম আক্তারের সঙ্গে ৩নম্বর রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর রাজাপুর গ্রামের সুলতান আকনের ছেলে ইয়াসিন আকন (২৮) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি মিমের পরিবার। একপর্যায়ে সম্পর্কের ১১মাসের মাথায় ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর পরিবারের অমতে পালিয়ে ইয়াসিনকে বিয়ে করেন মিম।
শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন মিম আক্তার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, তিন বছর আগে প্রেম করে আমার পরিবারের অমতে ইয়াসিনকে বিয়ে করি। আমার স্বামী কার্গো জাহাজে (লাইটার জাহাজ) চাকরি করে। সে কারণে দুই-তিন মাস পর পর বাড়িতে আসে। বাড়িতে এসেই ব্যাংকে আমার নামে বাবার জমা রাখা দুই লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে শারীরিক নির্যাতন করতো। ঘটনার দিন বুধবার দিবাগত রাত ৪টার দিকে জাহাজ থেকে বাড়িতে আসে। ওই রাতে এসেই আমার বিরুদ্ধে পরকিয়ার মিথ্যা অভিযোগ তোলে। এর পর আমাকে বিবস্ত্র করে তা মোবাইলে ভিডিও করে। সেই ভিডিও নেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আমার মুখ থেকে জোরপূর্বক পরকিয়ার স্বীকারোক্তি আদায় করে তা রেকর্ড করে। মিম আক্তার বলেন, সবকিছুভিডিও করার পর ইয়াসিন (স্বামী) আমাকে কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। একপর্যায়ে মোটা দড়ি দিয়ে চাবুক বানিয়ে তা দিয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে পেটাতে থাকে। আমি চিৎকার করলে আমার মুখের মধ্যে ওড়না ঢুকিয়ে দেয়। একপর্যায়ে আমার গলায় ওড়না পেচিয়ে আমাকে হত্যার চেষ্টা করে। আমার শরীরের সমস্ত জায়গায় রক্ত জমাট বেধে আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে হাসপতালে ভর্তি করেন।
নির্যাতনের শিকার মিম আরো বলেন, আমার স্বামীর সঙ্গে তার প্রবাসী ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে পরকিয়ার সম্পর্ক আছে। সেই দোষ ঢাকতে উল্টো আমার নামে পরকিয়ার অভিযোগ করছে। আমার সমস্ত শরীরে প্রচন্ড যন্ত্রনা হচ্ছে। আমি এমন পাষণ্ড স্বামীর সংসার করতে চাইনা। এই নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার চাই আমি।
মিমের বাবা আ.মালেক বেপারী বলেন, আমরা আগে থেকেই ইয়াসিনের স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে জানি। সেকারণেই ওর সঙ্গে বিয়েতে আমরা রাজি ছিলাম না। বিয়ের আগেই মেয়ের নামে আমি দুই লাখ টাকা ব্যাংকে রেখেছি। সেটা জানতে পেয়ে ইয়াসিনসেই টাকার চেয়ে মেয়েকে বার বার নির্যাতন করে চলেছে। এঘটনায় মামলা করা হবে।শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. ববি সাহা বলেন, মিমের শরীরে বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমাট বাধাসহ মারাত্মক আঘাতে চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। জানতে চাইলে মিমের স্বামী মো. ইয়াসিন আকনের কাছে জানতে চাইলে স্ত্রীকে
মারধর ও নির্যাতনের কথা স্বীকার করে বলেন, আমার স্ত্রী অন্য এক ছেলের সঙ্গে পরকিয়া করে। আমার কাছে সে স্বীকার করেছে পরকিয়ার কথা। তবে আমার বিরুদ্ধে যৌতেুক এবং ভাবির সঙ্গে পরকিয়ার যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকরাম হোসেন বলেন, নারী নির্যাতনের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত অভিযোগপেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।