বরগুনা তালতলী ফরাজীকান্দা বাজার এখন পাখিদের গ্রাম

 

আরিফুল ইসলাম মুরাদ

বরগুনা প্রতিনিধিঃ

নগরায়নের থাবায় সারাদেশের বেশিরভাগ এলাকাই যখন বৃক্ষশূন্য। নানা বর্ণের ছোট বড় শত প্রজাতীর পাখ-পাখালী দূরে থাক চিরচেনা সেই অস্থির চড়ুই আর ভাতশালিকের দেখা মেলাও যখন দুস্কর। ঠিক তখন বরগুনার তালতলী উপজেলার একটি গ্রামে মিলেছে পাখিদের মিলনমেলা। গ্রামবাসীদের সাথেও গড়ে উঠেছে সেসব পাখপাখালির প্রত্যক্ষ সখ্যতা।

বরগুনার তালতলী উপজেলার ফকিরহাট বাজার থেকে একটু পূবেই ফরাজি কান্দা গ্রাম। এখানেরই গত কয়েক বছর ধরে বড় বড় বৃক্ষরাজিতে ঘর সংসার পেতে বসতি গেড়েছে শত শত সাদা বক, গুজিবক, রাজ্ঞা বকসহ পানকৌরীরা। এছাড়াও রয়েছে হাজারো শালিক, চড়ুই, বাবুইসহ শতেক প্রজাতির পাখপাখালি। এসব পাখপাখালির কলকাকলিতে মুখররিত থাকছে গ্রামবাসি ।

পাখি শিকার তো দূরের কথা পাখিদের যেকোন সমস্যায় দায়িত্বশীল গ্রামবাসী। মায়ের কথা না শুনে আগেভাগেই উড়তে শেখার চেষ্টা করে সাদাবকের ছানারা। এতে প্রায় সময়েই অনেক ছানা পড়ে যায় মাটিতে। তখন পরম যতনে গ্রামবাসী আবার তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয় সেই ছানাগুলোকে।

গ্রামের প্রায় প্রতিটি গাছেই এমন পাখির ঝাঁক। কেউ উড়াল দিচ্ছে, কেউ পাখা মেলে রোদ পোহাচ্ছে, কেই ডিমে তা দিচ্ছে। আবার কেউবা পাখা ঝাপটিয়ে ঝগড়া করছে একে অপরের সাথে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির এমন সব কর্মকাণ্ড দেখে মনে হবে এ এক পাখিরাজ্য।

খুব সকালে এসব পাখিরা বেরিয়ে পড়ে খাবারের সন্ধানে। ফিরে আসে গোধুলী বেলায়। এসব পাখিদের ছানা বড় হয়ে গেলে আবার সব পাখিরাই হারিয়ে যায় দূর অজানায়। বছরের এই সময়টাতেই তারা ঘর সংসার আর সন্তানদের বড় করতে বাসা বাঁধে এখানে।

পাখি প্রিয় এই গ্রামবাসীর সাথে সখ্যতা গড়ে উঠেছে পাখিদেরও। মানুষের সাথে মিলে মিশে বসবাস তাদের। কোন কোন পাখি তো থাকছে গ্রামবাসীর ঘরেও। স্থানীয় কিশোর কিশোরীর অতিরিক্ত ভালবাসায় তাদের সাথেই বেশিরভাগ সময় কাটায় অনেক পাখি।

পাখি নিয়ে কথা স্থানীয় কিশোর কিশোরীর বলেন, এইসব পাখির আগমন গ্রামের জন্য আশীর্বাদ মনে করি। তাই পাখিদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গ্রামে কিশোর কিশোরীর  একটি টিম গঠন করা হয়েছে। যাতে বাহির থেকে কেউ এসে এইসব পাখি শিকার করতে না পারে। পাখিদের মলত্যাগে কিছুটা বিপত্তি ঘটলেও তা স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়েছেন তারা।।

দূর দূরান্ত থেকে পাখিদের এই মিলনমেলা দেখতে আসছেন অনেকেই। দূর থেকে দাড়িয়ে কেউ তোলেন ছবি। কেউ বা তোলেন সেল্ফি। উপভোগ করেন পাখিদের কোলাহল। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে স্বজনদের সাথে শেয়ার করেন সেসব ছবি।

তবে দর্শনারথীদের একটি দাবী আছে , সরকারিভাবে গ্রামটিকে পাখিগ্রাম ঘোষণা করে পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হোক এই গ্রামে। তালতলী ফকিরহাট বাজার  হয়ে উঠুক বরেন্দ্র অঞ্চলের একমাত্র পাখিগ্রাম।

বরগুনা জেলা প্রসাশক হাবিবুর রহমান বলেন, আমি  তালতলীর  উপজেলা ফরাজীকান্দা  গ্রামের পাখিদের অভয়ারণ্য পরিদর্শন করে মুগ্ধ হয়েছি। সবুজ প্রকৃতির বুকে সুশোভিত বৃক্ষের ডালে ডালে পাখিগুলোর দ্বিধাহীন অবাধ বিচরণ এক আনন্দঘন মনোমুগ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। পাখিগুলোর আগমনে এলাকাবাসীও অত্যন্ত খুশি। আমাদের এই পাখি যেনো কেউ শিকার করতে না পারে সেই দিকে  ‍নজর থাকেবে । শুধু তালতলীর ফরাজীকান্দা নয়, সারাদেশের সকল মানুষই পাখিদের প্রতি যত্নবান হবেন এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

 

 

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * গ্রাম * পাখি
লাইভ রেডিও
সর্বশেষ সংবাদ