ঠাকুরগাঁওয়ে লাশ নিয়ে সড়ক অবরোধ, সুষ্ঠ বিচার না পেলে তিন সন্তান সহ মায়ের বিষ পানে মারা যাওয়ার হুমকি

নাজমুল হোসেন, ঠাকুরগাঁওঃ ঠাকুরগাঁও সদরের মোহম্মদপুর ইউনিয়নে কালিতলা কাজিপাড়াতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত বাদাম বিক্রেতা জাবেদ ইসলামের লাশ দিয়ে সড়ক অবরোধ করেছে স্থানীয় মানুষ ও নিহতের পরিবার। এ সময় হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে স্লোগান দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
সরেজমিনে দেখা যায় মঙ্গলবার ১৫ মার্চ বেলা ১২ টা থেকে দুপুর ২ পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ মহাসড়কের কালিতলাতে রাস্তার দু পাশে বেঞ্চ, গাছের ডাল ও রাস্তার মাঝখানে লাশ রেখে হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে স্লোগাণ দেয় কয়েক হাজার নারী পুরুষ৷ এসময় দেখা যায় রাস্তার দু পাশে গাড়ি দিয়ে প্রায় কয়েক কিলোমিটার জ্যাম হয়ে যায়।
স্থানীয়রা বলছে, বাদাম বিক্রেতা জাবেদ একজন অনেক ভালো ও সহজ সরল মানুষ৷ কোনদিন কারো সাথে ঝগড়া ফাসাদে লিপ্ত হয়নি৷ একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাবেদের উপর দুই দফা হামলা করেছে প্রতিপক্ষ রনি ও তার স্ত্রী সহ তাদের সহযোগীরা। দ্বিতীয় দফা হামলায় জাবেদের গোপানাঙ্গ চেপে ধরে রনীর স্ত্রী মামুনি আক্তার৷ এতেই অসুস্থ হলে সাতদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান জাবেদ।
নিহতের বাবা নূর ইসলাম বলেন, আমরা অসহায় মানুষ। ছেলের লাশে এখনো পানি দেয়নি। থানা পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করছেনা৷ আমাদের কোন কথা শুনছেনা৷ আমি পরিবার সহ নিরাপত্তাহীনতায ভুগছি৷ এ মারামারির ঘটনায় ইউপি কার্যালয়ে চেয়ারম্যানের সামনে আমাদের উপর হামলা করেছে তারা৷ ছেলেকে মেরে ফেলেছে আমি কি করবো কোথায় যাবো।
বিক্ষুব্ধদের একজন মহসিনা বেগম। অভিযোগ করে বলেন, হত্যাকারীদের স্থানীয় চেয়ারম্যান সোহাগ সহ অনেক প্রভাবশালী সহযোগিতা করছে। হত্যাকারীদের বাঁচাতে টাকা দিয়ে সব উপর মহলকে ম্যানেজ করছে৷ হাসপাতালকে টাকা দিয়ে বিষক্রিযার রিপোর্ট বানিয়েছে। কিন্তু আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।
মোহম্মদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ সোহাগ বলেন, দুই পক্ষ আমার এখানে আসে মিমাংসার জন্য। কিন্তু কার্যালয়ের গেটে তারা একে অপরের সঙ্গে আবারও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে৷ আমি তাদেরকে আইনের আশ্রয় নিতে বলি। এখানে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হচ্ছে তা প্রতিহিংসা ও উদ্দেশ্যমূলক। যেহেতু আমি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আমার পক্ষে বিপক্ষে মানুষের মন্তব্য থাকতেই পারে। তবে আমি এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে দোষীদের বিচার দাবি করছি এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পরিবারটিকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছি।
নিহতের স্ত্রী লিপি আক্তার বলেন, আমার স্বামী বিষপান করেনি৷ দ্বিতীয় দফা হামলা আমার স্বামীর গোপানাঙ্গ চেপে ধরায় সে ঠিক মতো কথা বলতে পারেনি। গত পরশু দিন ব্যাথ্যা বাড়লে হাসপাতালে ভর্তি করাই। পরদিন মারা যায় আমার স্বামী। হাসপাতাল ভুল রিপোর্ট দিয়েছে। আমাদের আইনগত সহায়তা করুন৷ নয়লে আমি আমার তিন সন্তান নিয়ে বিষ খায় মারা যাবো।
এ ঘটনায় আমার স্বামী মারা যাওয়ার আগেই সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছে। মামলাও হয়েছে। কিন্তু এখন হত্যামামলা রেকর্ড করছেনা পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আনিস বলেন, নিহত মাজেদের সূরতহাল রিপোর্টে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আমরা তদন্ত করছি। এছাড়াও আমি ৩০২ ধারায় অভিযোগটি পুনঃআবেদন করেছি। একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নিশ্চয় জাবেদের পরিবার সুষ্ঠ তদন্ত পাবে।