এক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের প্রতিরোধে পালাল রুশ সৈন্যরা

লভিভের মেয়র আন্দ্রে সাদোভি বলেছেন, শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে ব্রোডির কাছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর তিনটি হেলিকপ্টার অবতরণ করেছে। এতে প্রায় ৬০ সৈন্য ছিল। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের সৈন্যরা দখলদার বাহিনীকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখছি।’
এদিকে, আগ্রাসন তৃতীয় দিনে গড়ানোর সাথে সাথে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রুশ সৈন্যরা গোলাবারুদ ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে। রাজধানী কিয়েভের বিভিন্ন প্রান্তে রুশ সৈন্যরা বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে বলে খবর দিয়েছে বিবিসি।
অন্যদিকে, রুশ বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স বলছে, রাশিয়ার সৈন্যরা ইউক্রেনের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের মেলিটোপোল শহরের দখল নিয়েছে। মেলিটোপোলের ভাগ্যে আসলে কী ঘটেছে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
তবে ব্রিটেনের সশস্ত্র বাহিনীবিষয়ক মন্ত্রী জেমস হিপ্পি ইন্টারফ্যাক্সের প্রতিবেদনের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, দেড় লাখ মানুষের এই শহর এখনও ইউক্রেনীয়দের হাতে রয়েছে।
ইউক্রেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, রাশিয়ার আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত তিন শিশুসহ ১৯৮ ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও এক হাজার ১১৫ জন। তবে হতাহতের এই সংখ্যা শুধুমাত্র বেসামরিক নাগরিকদের কি না সেটি পরিষ্কার হওয়া যায়নি।
ইউক্রেনের হাতে ৩৫০০ রুশ সেনা নিহত, বন্দি আরও ২০০
রুশ সৈন্যদের তীব্র আক্রমণের মুখে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের রাস্তায় রাস্তায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। মস্কোর সর্বাত্মক আক্রমণের মুখে প্রতিরোধের চেষ্ট করছে ইউক্রেনও। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির দাবি, রুশ আক্রমণ শুরুর পর ইউক্রেনের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত রাশিয়ার সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি সেনা নিহত হয়েছেন।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছে। এছাড়া আরও প্রায় ২০০ রুশ সেনাকে বন্দি করা হয়েছে।
ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী আরও দাবি করেছে, হামলা করতে এসে রাশিয়া এখন পর্যন্ত ১৪টি যুদ্ধবিমান, ৮টি হেলিকপ্টার এবং ১০২টি ট্যাংক হারিয়েছে। বিবিসি অবশ্য দেশটির এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। অন্যদিকে রাশিয়াও এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির কোনো কথা স্বীকার করেনি।
এদিকে, রাশিয়ার প্রবল হামলার মুখে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট তার সেনাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন বলে গুঞ্জন ওঠার পর ফের নতুন একটি ভিডিওবার্তা দিয়েছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। নিজের ধারণ করা এই ভিডিওতে তিনি ইউক্রেনের সেনাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে, আশঙ্কা ম্যাক্রোঁর
ইউক্রেন-রাশিয়ার সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে মনে করছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। শনিবার ফ্রান্সের সাংবাদিকদের এই আশঙ্কার কথা জানিয়ে বিশ্বকে প্রস্তুতি নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এই দিন প্যারিসে শুরু হওয়া বার্ষিক কৃষি মেলা উদ্বোধন করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ইউরোপে যুদ্ধ ফিরে এসেছে। এই যুদ্ধ বেছে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং একটি দুঃখজনক মানবিক পরিস্থিতিতে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
‘ইউক্রেনের জনগণ যুদ্ধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং ইউরোপ এই প্রতিবাদে সংহতি জানিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
‘এখন আপনারা যদি আমার কাছে এ ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করেন, সেক্ষেত্রে আমি বলব—এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে, এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং বিশ্বে এই যুদ্ধের পরবর্তী ফলাফলের প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। তাই আমাদের উচিত হবে, এখন থেকেই আসন্ন এই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা।’