ব্যাপক সংক্রমণের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে সপ্তম দফার ভোট
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে রেকর্ড করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের পরদিনই বিধানসভার সপ্তম দফার ভোট হচ্ছে।
সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
এ দফায় বিধানসভার ৩৬ আসনে ভোট গ্রহণের কথা থাকলেও প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে দুটি আসনে ভোট গ্রহণ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি যে ৩৪ আসনে ভোট হচ্ছে সেগুলো দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বর্ধমান ও দক্ষিণ কলকাতায় বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা।
পিছিয়ে দেওয়া দুটি আসন মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরে ১৬ মে ভোট হবে।
ভারতে সম্প্রতি করোনাভাইরাস সংক্রমণ মারাত্মক রূপ নিয়েছে; হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। টানা কয়েকদিন ধরে সেখানে দৈনিক শনাক্তের বিশ্বরেকর্ড হচ্ছে।
তার মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য আট দফায় ভোট গ্রহণ চলছে। ভারতের যেসব রাজ্যে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ভয়াবহ, পশ্চিমবঙ্গ তার একটি। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ১৫ হাজার ৮৮৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। যা রাজ্যে একদিনে শনাক্তের রেকর্ড।
এ সময় মৃত্যু হয়েছে আরও ৫৭ জনের। একদিন আগে শনিবার এখানে ১৪ হাজার ২৮১ জন রোগী শনাক্ত ও ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গত এক সপ্তাহ ধরেই রাজ্যটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেশ কমে গিয়েছিল। দৈনিক শনাক্ত ২০ হাজারের নিচে নেমে গিয়েছিল। কিন্তু মার্চের শুরু থেকে সংক্রমণ বাড়তে থাকে।
ওই মাসেই পশ্চিমবঙ্গে জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়। স্বাস্থ্যবিধি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে প্রার্থীরা বড় বড় নির্বাচনী মিছিল ও সমাবেশ করেন। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজ দলের পক্ষে প্রচার চলাতে পশ্চিমবঙ্গে বড় বড় সমাবেশ আয়োজন করেন।
দেশের বর্তমান মহামারী পরিস্থিতির জন্য তারা এখন দারুণভাবে সমালোচিত হচ্ছেন।
এনডিটিভি জানায়, পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশটির নির্বাচন কমিশন এ সপ্তাহের শুরুতে সেখানে নির্বাচনী মোটর শোভাযাত্রা, পদযাত্রা ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। দৈনিক প্রচারের সময় সীমিত করার পাশাপাশি ভোটের দিনের আগের প্রচার নিষিদ্ধ সময় ৪৮ ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে ৭২ ঘণ্টা করে দেয়।
এছাড়া, নির্বাচনী জনসমাবেশে পাঁচশর বেশি মানুষ উপস্থিত থাকতে পারবে না বলে নিয়ম জারি করা হয়।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত খড়দহ আসনের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কাজল সিনহা রোববার মারা গেছেন। এর আগে জঙ্গিপুর আসনে আরএসপির প্রার্থী প্রদীপ কুমার নন্দী ও সামশেরগঞ্জে কংগ্রেসের প্রার্থী রেজাউল হকেরও করোনাইভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছিল। কলকাতার টালিগঞ্জ আসনের বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় পরীক্ষায় দ্বিতীয়বারের মতো কোভিড পজিটিভ হয়েছেন।
এ দফার ৩৬ আসনে ভোটার ৮১ লাখেরও বেশি। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস ও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সবগুলো আসনে প্রার্থী দিয়েছে। কংগ্রেস-বাম জোট ৩২ আসনে প্রার্থী দিয়ে বাকি চারটি আসন জোট সঙ্গী আরএসএমপির প্রার্থীদের জন্য ছেড়ে দিয়েছে।
এ দফায় বেশ কয়েকজন তারকা প্রার্থী রয়েছেন। ভবানীপুরে তৃণমূল নেতা পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্রোপাধ্যায় সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন বিজেপির প্রার্থী অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ, নগর উন্নয়নন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র তৃণমূলের ফিরহাদ হাকিম কলকাতা বন্দর আসনের প্রার্থী। গ্রামীণ উন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও অভিনেত্রী সায়নি ঘোষ তৃণমূলের অপর দুই বড় নাম।
রোববার ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর এক টুইটে ভোটারদের কোভিড বিধিনিষেধ মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আট পর্বের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচনের চূড়ান্ত দফার ভোট আগামী বৃহস্পতিবার। ২ মে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।