মামুনুল হক আরও ২৩ মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট

 

 

ফাইল ছবি

হেফাজতের বিতর্কিত যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে টানা পাঁচ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। অধিকাংশ সময় এককভাবে তিনি গোয়েন্দাদের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হন। তবে একাধিক দফায় রিমান্ডে থাকা অন্য হেফাজত নেতাদের মুখোমুখি করেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে রয়েছেন মামুনুল হক। এ মামলায় রিমান্ড শেষ হলে আরও ২৩টি মামলায় তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মোহাম্মদপুরের মামলার পর মামুনুলকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করবে।
মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, রিমান্ডে হেফাজতের নেতারা নাশকতার ঘটনার দায় জামায়াত-শিবিরের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন। তবে এটাও স্বীকার করছেন, জামায়াত-শিবিরের পাশাপাশি হেফাজতের উগ্র সমর্থকরা এসব হামলা-ভাঙচুরে জড়িয়েছিল। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, অন্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে পর্যায়ক্রমে ডিবিও মামুনুলকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ড আবেদন করবে।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, এরই মধ্যে বেশকিছু ব্যাপারে মামুনুলের কাছে স্পষ্টভাবে জানতে চাওয়া হয়েছে। তার অনেক প্রশ্নের উত্তর সন্তোষজনক নয়। আবার কিছু ব্যাপারে নিজের দায় স্বীকার করছেন তিনি।
পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা বলেছেন, মামুনুল স্বীকার করেছেন, সংগঠনের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতেই উগ্রপন্থি বক্তব্য দিয়েছেন। বারবার এটাও বলেছেন, জোশের বশেই নানা ব্যাপারে কথা বলতেন তিনি।
২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের তাণ্ডবের ব্যাপারে মামুনুল পুলিশকে বলেন, ওই সময় ছোট নেতা ছিলাম। সংগঠনের সিদ্ধান্তে তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না। তাই ওই নাশকতার ব্যাপারে তার কোনো বক্তব্য নেই বলে জানান।
এরপর গোয়েন্দারা তার কাছে জানতে চান, যদি ২০১৩ সালে সংগঠনের সিদ্ধান্তে তেমন কোনো ভূমিকা না থাকে তাহলে কেন শাপলা চত্বরের অনুষ্ঠানে উপস্থাপনার দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়। ওই মঞ্চ থেকে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের উদ্দেশে হুঙ্কার কেন দিয়েছিলেন তিনি। এসব প্রশ্নে মামুনুল কোনো সুদুত্তর দিতে পারেননি।
পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা জানান, মামুনুলের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় করা হয় ১৮টি। ২৩ মামলার মধ্যে ২০১৩ সালের হেফাজত তাণ্ডবের পর রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ১৫টি মামলায় তার নাম রয়েছে। এসব মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পর্যায়ে মামুনুলকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ড আবেদন করবেন। এরই মধ্যে হেফাজতের সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সহসভাপতি খুরশিদ আলম কাশেমী, ঢাকা মহানগরের সহদপ্তর সম্পাদক ইহতেশামুল হক সাখীসহ কয়েকজনের সামনাসামনি করে মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একই বিষয়ে হেফাজতের নেতারা পৃথকভাবে ও যৌথ জিজ্ঞাসাবাদে কী ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন তা যাচাই করতে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

জানা যায়, মামুনুলসহ হেফাজতের যে নেতারা উস্কানিমূলক বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আসছিলেন তাদের সবার অর্থ-সম্পদের খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে। তাদের মাদ্রাসায় কারা কীভাবে অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন, সেই তালিকা হচ্ছে। এ ছাড়া বিদেশি কোন কোন উৎস থেকে মাদ্রাসায় অর্থ যায় সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে যারা দেশজুড়ে নাশকতায় জড়ায়, পেছন থেকে ইন্ধন দিয়েছে, তাদের তালিকা তৈরি করা হয়। এখন পর্যন্ত সারাদেশের দেড় শতাধিক নেতার তালিকা হয়েছে। তাদের পর্যায়ক্রমে গ্রেপ্তার করা হবে।
আরও দু’জন রিমান্ডে :ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রতিবাদের  ঘটনায় পল্টন থানায় করা নাশকতার মামলায় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব খালিদ সাইফুল্লাহ্‌ আইয়ুবীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পাশাপাশি ঢাকা মহানগর সহদপ্তর সম্পাদক ইহতেশামুল হক সাখীর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। শুক্রবার মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসী পৃথক এ আদেশ দেন।
এর আগে খালিদ সাইফুল্লাহ্‌ আইয়ুবীকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সাইফুল্লাহ্‌কে তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া পল্টন থানায় ২০১৩ সালে করা মামলায় ইহতেশামুল হক সাখীকে গতকাল আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বংশাল থেকে সাখীকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এখন পর্যন্ত হেফাজতের ১৭ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

লাইভ রেডিও
সর্বশেষ সংবাদ