রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জানিয়েছে, তাদের আওতাধীন প্রায় ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় মোট ২২ লাখ ভবন রয়েছে, যার মধ্যে ২১ লাখ ভবনই দুর্বল ভিত্তির উপর নির্মিত এবং অধিকাংশই বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। বহু ভবন নির্মিত হয়েছে পুরোনো নকশা অনুযায়ী অথবা অনুমোদন ছাড়াই।
রাজউকের পরিসংখ্যান বলছে:
১৫ লাখ ভবন দ্বিতল বা তার নিচে—যাদের ঝুঁকি তুলনামূলক কম।
৪ থেকে ৩০ তলা পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ ভবনকে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে এই বিপুল সংখ্যক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রাজধানীতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।
গত ৪৮ ঘণ্টায় তিন দফা ভূমিকম্পের পর রাজধানীর ভবনগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা আরও বেড়েছে। শনিবার বংশালে ভবন পরিদর্শনে গিয়ে রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, পুরান ঢাকার অধিকাংশ ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ, যেখানে কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই খুব ছোট প্লটে ৬–৭ তলা পর্যন্ত ভবন গড়ে উঠেছে।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পুরান ঢাকার ৯০ শতাংশ ভবন বিল্ডিং কোড মানেনি। সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলোকে তিনি “পরিষ্কার সতর্কবার্তা” বলে উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, বড় ধরনের দুর্যোগ ঠেকাতে পুরোনো ভবনের দ্রুত প্রকৌশলগত মূল্যায়ন এবং ঝুঁকি কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জরিপে দেখা গেছে—রাজধানীর অধিকাংশ ভবনই দুই দশকের বেশি পুরোনো, এবং অনেক জায়গায় নির্মাণকাজে রড–সিমেন্টের মান নিয়ন্ত্রণ ছিল না। কোথাও আবার অনুমোদিত নকশার বাইরে অতিরিক্ত তলা তৈরি হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স বিভাগের এক অধ্যাপক জানান, রাজধানীর বহু এলাকা এমন যে, সেখানে ভবনের উপযোগী মাটি নেই। পাশাপাশি, রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই বহুতল ভবন ওঠায় ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে।
নেই সেফটি জোন, নেই খোলা জায়গা
বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ ভবনে নেই:
ভূমিকম্প-সহনশীল নকশা
নিরাপদ সিঁড়ি বা খোলা জায়গা
সেফটি জোন
সঠিক বৈদ্যুতিক ও গ্যাস সংযোগ
ঘনবসতিপূর্ণ গলি ও পাশাপাশি সারি সারি হাইরাইজ ভবন বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
৭৪ শতাংশ ভবন নকশাবহির্ভূত
রাজউকের নথি অনুযায়ী, ঢাকার ৭৪ শতাংশ ভবন নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মিত। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। সেফটি অ্যাওয়্যারনেস ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, ২১ লাখ ৪৬ হাজার ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ—যা ভূমিকম্পে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হতে পারে।
সরকারি ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ
বিশ্বব্যাংকের আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের জরিপ অনুযায়ী:
সরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠান মিলে ৩৭ শতাংশ নতুন ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ
এর মধ্যে পিজি হাসপাতালের নতুন ১৭ তলা ভবনসহ বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার ১৩ শতাংশ এলাকায় ভবন নির্মাণ করারই কথা নয়, তবুও সেখানে ভবন তৈরি হচ্ছে—যা ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।

