সত্যজিৎ দাস (মৌলভীবাজার প্রতিনিধি):
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় চার বছর আগে শুরু হওয়া মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ প্রকল্প আজও পূর্ণতা পায়নি। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বাধা, জমি অধিগ্রহণে জট এবং নিয়মিত অর্থ ছাড় না পাওয়ার কারণে প্রকল্পটির মাত্র ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ফলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বন্যা আতঙ্কে রয়েছেন শরীফপুর,পৃথিমপাশা,টিলাগাঁও ও হাজীপুর ইউনিয়নের হাজারো মানুষ।
২০২১ সালে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হলেও এখনো কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের দত্তগ্রাম, নিশ্চিন্তপুর, তেলিবিল ও বাগজুর অংশে এবং পৃথিমপাশার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাঁধের কাজ শুরুই হয়নি। বাংলাদেশ অংশে থেমে থাকলেও ভারতের সীমান্তঘেঁষা এলাকায় বিএসএফের উপস্থিতিতেই প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ পুরোদমে চলছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ,সীমান্তে বসবাস করা বাংলাদেশিদের জীবন এখন অনিশ্চয়তায় ঘেরা। বন্যার ভয়ে প্রতি বছর ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়। অথচ চার বছর আগে অনুমোদিত ৯৯৬ কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজের গতি নেই বললেই চলে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে,কুলাউড়ায় মোট ২৮টি প্যাকেজে ৩০৭ কোটি টাকার কাজের মধ্যে এখন পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে মাত্র অর্ধেক। শরীফপুরে প্রায় ১৪০০ মিটার বাঁধের কাজ বিএসএফের বাধায় আটকে আছে। পৃথিমপাশায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিকড়িয়া বাঁধ এখনো মেরামত হয়নি। অথচ ভারতের মাগুরউলি ও দেবীপুর এলাকায় জোরেশোরে মাটি ফেলে বাঁধ তৈরি চলছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নদী রক্ষা আন্দোলনের নেতা আব্দুল লতিফ বলছেন,মনু নদীর ভাঙন এবং বন্যা কুলাউড়ার মানুষদের প্রতি বছর দুঃস্বপ্নের মধ্যে ফেলে। সীমান্তবর্তী এলাকায় কাজ না হলে, ভারতের অংশের কাজ শেষে বিএসএফ আরও কঠোর অবস্থান নেবে বলেও আশঙ্কা করছেন তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলিদ জানান,কাজ শেষ করতে প্রশাসনিকভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনে চিঠিপত্র দেওয়া হয়েছে। তবে অনুমতি না আসা পর্যন্ত সীমান্তের অংশে কাজ শুরু সম্ভব নয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন জানান, জেলা প্রশাসন পরিস্থিতি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে তদারকি জোরদার করা হয়েছে।
মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ কেবল একটি অবকাঠামো নয়,এটি কুলাউড়ার লক্ষাধিক মানুষের জীবন, ঘরবাড়ি ও ফসল রক্ষার আশার প্রতীক। যথাসময়ে কাজ না হলে শুধু বন্যা নয়,আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপেও বাংলাদেশ পড়তে পারে। এখন সময়,প্রতিটি সংশ্লিষ্ট পক্ষের সমন্বিত ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার।