মনির হোসেন, বেনাপোল:
২০১৯ সাথে থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে গাড়ি ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে আশংকাজনকহারে। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে বছরে গাড়ির চেচিস আমদানি হতো এক লাখ বা তারও দ্বিগুন পিস। সেখানে এখন আমদানি হচ্ছে মাত্র ৩-৪শ পিস। মূলত করোনাকালে গাড়ির ব্যবসায় ধ্বস নামায় এর আমদানি কমে যায়। যার প্রভাব পড়েছিল সরকারের রাজস্ব আদায়ে। সরকারের রাজস্ব আয় হয়ে থাকে উচ্চ শুল্কের গাড়ি ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি হলে। বিগত ৫-৬ বছর ধরে বেনাপোল কাস্টম লক্ষ্যমাত্রা বিপরীতে রাজস্ব আহরণ করতে পারেনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টম হাউসকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১৬ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় করেছিল বেনাপোল কাস্টমস হাউস।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। সেখানে তারা আদায় করেছিল ৬ হাজার ১৬৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট এক্সপোর্ট কমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, গেল অর্থবছরে সরকারের মেগা প্রকল্পের মালামাল বেনাপোল দিয়ে এসেছিল। এতে করে কাস্টমসের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেয়েছিল। চলতি বছর আশা করছি বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বাণিজ্য গতি ফিরে পাবে। তবে বিগত ৫-৬ বছর রাজস্ব আদায়ের হার ভালো ছিলনা। কারণ উচ্চ শুল্কের পণ্য আমদানি কম হয়েছে।
বেনাপোল কাস্টমস অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে বেনাপোল দিয়ে গাড়ির চেসিস আমদানি হয়েছে মাত্র এক হাজার ৫২৮টি। এরমধ্যে ২০২০ সালে আমদানি করা হয়েছে ৩৫১টি, ২০২১ সালে ২৭১টি, ২০২২ সালে ২৪৮টি, ২০২৩ সালে ২৯৮টি, ২০২৪ সালে ২৭০টি এবং ২০২৫ সালে (জুলাই-মার্চ) আমদানি হয়েছে ৯০টি গাড়ির চেচিস।
অথচ এর আগে ২০১৬ সালে চেসিস আমদানি হয়েছিল ৭৯ হাজার ৭১৪ পিস, ২০১৭ সালে ৯১ হাজার ৪৮১ পিস, ২০১৮ সালে ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৭১ পিস। ২০১৯ সালে ৫২ হাজার ৩২০ পিস চেচিস।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুর রহমান বলেন, গাড়ির চেসিস ও মোটর পার্টস আমদানি বেশি হলে রাজস্ব আহরণ বাড়ে। কম শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি হলে রাজস্ব কমবে। এটিই স্বাভাবিক।
বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহসভাপতি মহসিন মিলন জানান, করোনার কারণে গাড়ির ব্যবসা মন্দা থাকায় চেসিস আমদানি বেশি কমেছে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, করোনার কারণে সব ব্যবসায় ধস। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাড়ির ব্যবসায়। কারণ, মানুষের কাছে নগদ টাকার প্রবাহ বেশি থাকলে তখন তারা গাড়ি কিনতে ও পার্টস বদলাতে উৎসাহী হন। আবার বেনাপোল বন্দরের সক্ষমতার অভাবের কারণে অনেকে বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছেন।
র্যাংগস মোটরস যশোরাঞ্চলের এরিয়া ম্যানেজার শুভংকর বিশ্বাস জানান, গত ৫-৬ বছর ধরে দেশে গাড়ির ব্যবসায় চরম মন্দাভাব বিরাজ করছে। যেকারণে কোম্পনিগুলো গাড়ি বা চেচিস আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার এইচএম শরিফুল হাসান বলেন, ‘করোনার কারণে দেশে ব্যবসায় মন্দা থাকায় গাড়ির চেসিস আমদানি কমেছে। তবে চলতি বছর থেকে আশা করা হচ্ছে আমদানি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। বেনাপোল বন্দরের সক্ষমতার অভাবের কথা ব্যবসায়ীরা বলছেন। আমরা বন্দরের পরিধি বাড়াতে চিঠি দিয়েছি।’
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার জানান, বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আমদানি পণ্যের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সব ধরণের সমস্যা সমাধানে আমরা কাজ করছি।