হুমায়ন কবির মিরাজ:
ভারত কর্তৃক বাংলাদেশীদের জন্য পর্যটক ভিসা বন্ধ রাখার ফলে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তজুড়ে দেখা দিয়েছে গভীর অর্থনৈতিক সংকট। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল চেকপোস্ট এবং আশপাশের এলাকায় ব্যবসায়িরা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশি পর্যটকদের অভাবে লক্ষাধিক মানুষ হয়ে পড়েছে কর্মহীন।
মুদ্রা বিনিময়, ছোটখাটো দোকান, রিকশা, অটো, টোটো, প্রাইভেট কার, জিপ চালকসহ নানা পেশার মানুষ সরাসরি পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। পেট্রাপোলের মুদ্রা ব্যবসায়ী নরোত্তম বিশ্বাস জানান, শুধু এই সীমান্তেই প্রায় ২০ হাজার মানুষ সরাসরি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, যাদের মাধ্যমে আরও কয়েক লাখ মানুষের জীবিকা চলত।
তারা প্রশ্ন তুলছেন, যদি আমদানি-রফতানি স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে, তাহলে পর্যটক ও মেডিকেল ভিসা কেন বন্ধ রাখা হয়েছে? সীমান্তের ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এটি ভারতের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে বিজেপির প্রভাব ও শুভেন্দু অধিকারীর পরিকল্পনার অংশ।
বনগাঁও মহাকুমার জয়ন্তীপুরের ব্যবসায়ী ফজর আলী বলেন, “আগে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি যাতায়াত করত। এখন তা নেমে এসেছে ১০০-এর নিচে। পুরো এলাকা নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।”তিনি আরও জানান, ভিসা বন্ধ থাকায় বেকাররা এখন সময় কাটায় তাস খেলে, গাঁজা-মদ খেয়ে। ফলে সমাজে নেমে এসেছে হতাশা, বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা।
পরিবহন ব্যবসায়ীরাও বলছেন, ঢাকা ও অন্যান্য শহর থেকে ভারতে যাতায়াতকারী মানুষ এখন আর ভিসা না পাওয়ায় সীমান্ত এলাকার পরিবহন খাত একপ্রকার বন্ধের মুখে। ইজিবাইক, ভ্যান, রিকশাচালক, ট্রাভেল এজেন্ট, হোটেল-মোটেল মালিকরা এখন চরম আর্থিক সংকটে।
ভারতের ব্যবসায়ী উত্তম কুমার জানান, পর্যটক না থাকায় পান-বিড়ি, মুদি, কসমেটিক্সসহ বিভিন্ন দোকান বন্ধ হওয়ার পথে। কলকাতা, দিঘা, দার্জিলিং, নদীয়া, মুর্শিদাবাদসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় বাংলাদেশিদের অভাবে ব্যবসা প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, “আগে আমরা পর্যটকদের সেবা দিয়ে যা আয় করতাম, এখন তা একেবারে শূন্যে এসে ঠেকেছে। অনেকেই পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।”
মেডিকেল ভিসাও সীমিত করায় বাংলাদেশের রোগীরা ভারতে চিকিৎসা নিতে যেতে পারছেন না, যার ফলে পশ্চিমবঙ্গের অনেক হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা কমে গেছে।
এই সংকট থেকে উত্তরণে দুই দেশের মধ্যে দ্রুত কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে ভিসা নীতি পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ।